ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পশু জবাইখানা ইজারা নিতে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে নির্মিত পশু জবাইখানা দুটি ইজারা দিতে ছয়বার দরপত্র আহবান করেও সাড়া মেলেনি। সমীক্ষা ছাড়া জবাইখানা নির্মাণ এবং অতিরিক্ত দামের কারণে ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে বিভিন্ন বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে পশু জবাইয়ের কারণে এই বিষয়ে কারো আগ্রহ নেই।
ডিএসসিসি
শতকোটির পশু জবাইখানা ইজারায় কারো আগ্রহ নেই
- ► চার বছরেও পশু জবাইখানা চালু হয়নি, বারবার দরপত্র আহবান করেও সমাধান মেলেনি
- ► দাম কমিয়ে দরপত্র আহবানের প্রস্তুতি ডিএসসিসির
- ► তৃতীয় পক্ষ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী, প্রস্তাবনা চেয়েছে সংস্থাটি
জহিরুল ইসলাম

সূত্র জানায়, চার বছর আগেই জবাইখানা নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপন শেষ হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে কেউ পশু জবাই করছে না। ইজারা দেওয়া ছাড়া এর মূল কাজ শুরুর সুযোগ নেই।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিন দফায় ছয়বার দরপত্র আহবান করেও ইজারাদার মেলেনি। রাজধানীতে পশু ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র পশু জবাইয়ে অভ্যস্ত। সরকারও যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘অনেক টাকা ব্যয়ে তৈরি এই জবাইখানা চালু করতে এখন আমরা ভিন্ন পথে হাঁটতে চাই। ইজারা মূল্য কমিয়ে দরপত্র আহবান করা হবে। তৃতীয় পক্ষও (অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান) পরিচালনা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা তাদের কাছে প্রস্তাবনা চেয়েছি।
জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় কার্যকর সমীক্ষা না করেই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তাঁর মেয়াদকালে হাজারীবাগ জবাইখানার উদ্বোধন করা হলেও সেখানে পশু জবাই শুরু করে যেতে পারেননি তিনি। তারপর মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন না করেই বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখেন। দুই মেয়র এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতায় সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক জবাইখানা ও যন্ত্রপাতি এখন পরিত্যক্তপ্রায়। চীন থেকে আনা যন্ত্রপাতিগুলোও অকেজো হওয়ার পথে।
সূত্র জানায়, হাজারীবাগের আধুনিক জবাইখানার অবকাঠামো নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা এবং কাপ্তানবাজার আধুনিক জবাইখানার অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয় ১৬ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে হাজারীবাগ জবাইখানায় খরচ ৩৮ কোটি টাকা এবং কাপ্তানবাজার জবাইখানায় খরচ ৩১ কোটি টাকা।
ইজারা না দিয়েই উদ্বোধন
নির্মাণকাজ শেষে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে ২০১৯ সালে হাজারীবাগ জবাইখানার উদ্বোধন করেন তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। অথচ সেটির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। কাপ্তানবাজার জবাইখানা নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনকাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। এখন পর্যন্ত চালু হয়নি।
ডিএসসিসির পশু জবাইখানা তদারকির দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। ভেটেরিনারি কর্মকর্তারা এসব দেখভাল করে থাকেন। ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, পশু জবাই এবং মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১ এর ধারা ৩(১) অনুযায়ী, ‘পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়া খোলা স্থানে পশু জবাই নিষেধ।’ কিন্তু বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই।
কেন দরকার আধুনিক পশু জবাইখানা
অভিযোগ রয়েছে কসাইরা অনেক সময় মৃত বা অসুস্থ পশু জবাই করে মাংস বেচে। অথচ অসুস্থ পশুর মাংস খেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে মনে করেন পশু বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া পশু কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত থাকলে ভোক্তারও তাতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ জন্য পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। সেই চিন্তা থেকেই আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ করে ডিএসসিসি।
দেখা যায়, পাঁচতলাবিশিষ্ট হাজারীবাগ পশু জবাইখানায় কোনো কার্যক্রম নেই। ওই ভবনের নিচতলার একপাশ স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কার্যক্রম না থাকলেও একজন ভেটেরিনারি কর্মকর্তা আছেন। তিনি প্রতিদিন সেখানে যান এবং কিছু সময় অফিস করে আবার নগর ভবনে চলে যান। কাপ্তানবাজার জবাইখানার ভেতরে পশু জবাইয়ের জন্য বিদেশ থেকে আনা সব ধরনের যন্ত্রপাতি রেখে দেওয়া হয়েছে। কখনো ওই জবাইখানা খুলতে দেখেন না বলে জানিয়েছেন আশপাশের দোকানদাররা। তাদের ধারণা, কয়েক বছর আগে রাখা যন্ত্রপাতিগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় তা হয়তো অকেজো হয়ে গেছে। ডিএসসিসির কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, চায়না থেকে আনা এসব যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছে। এসব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা।
সম্পর্কিত খবর

যাত্রী পরিবহন


সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমলাদের উদ্যোগ
‘জনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করছে আজ
সাইদ শাহীন

নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল। নাম ‘জনতার দল’। দলের স্লোগান হবে ‘ইনসাফ জিন্দাবাদ’। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে দলটি।
দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম কামাল।
জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে এই রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক ও আলোচনাসভা করেছেন প্রস্তাবিত এই দলের চেয়ারম্যান মো. শামীম কামালসহ অন্যরা।
দল গঠন ও পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে থিংকট্যাংক ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, সংসদ সদস্য বাছাই কমিটি ও সাংগঠনিক পরিচালনা কমিটি। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছে দলটি।
এই দলে কারা যোগদান করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে সবার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পাশাপাশি দেশের সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, মাদরাসাছাত্রদের সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিওদের জোট, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন প্রতিনিধি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই দলে যোগ দেবেন।
জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা জনতার দলে যোগ দিতে পারেন। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তা এই দলে যোগ দিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীর এই দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের গঠনপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার কারণে সবার নামের তালিকা প্রকাশ করছে না দলটি। আইনগতভাবে গঠনপ্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
বড় সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবে দলটি। দেশের ও প্রবাসের আপামর মানুষের জনতার দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত অনেক সদস্য এই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন থেকেও এই রাজনৈতিক দলে অনেকে যোগ দেবেন।
দল গঠনে সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) এফ এম জাহিদ হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবুল হাসেম।
দলের চেয়ারম্যান ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে সত্, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ ভালো মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে। আমরা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সমন্বয়ে দলটি গঠন করতে চাই, যেখানে সত্ ও দক্ষ মানুষ নেতৃত্ব দেবেন। গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনীতিকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চাই আমরা।’
নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে চায় দলটি। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য নয়। প্রাথমিকভাবে সামরিক সদস্য সমর্থিত হলেও এখানে সব পেশাজীবীর সমন্বয় থাকবে। এই দলের বড় অংশজুড়ে নেতৃত্ব দেবেন সমাজের তরুণ ও ছাত্ররা।
কেন এই রাজনৈতিক দল—এমন প্রশ্নের জবাবে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ভূমিছাড়া হয়ে যান। আমরা সেখান থেকে ব্যতিক্রম হয়ে দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। মীমাংসিত ঐতিহাসিক কোনো বিষয়ে আমরা বিতর্ক করব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কিংবা ভূ-রাজনৈতিক পক্ষভুক্ত হবে না দলটি।’

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে তাদের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেবি)। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তিনি গুমসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দেন এবং নিজের স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোও জানান।
গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি জানান এবং গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা কমিশনকে জানাতে আহ্বান জানান।
এর আগে এই সাবেক সেনাপ্রধান তাঁর লেখায় চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন।
সাবেক এই সেনাপ্রধান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার কর্ম অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত কিছু লেখা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তা রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্থার বিভিন্ন অংশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেই পটভূমিতে অনেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর বিভিন্ন দিক ও বিষয়ে জানার আগ্রহ জন্মেছে।
তিনি আরো লেখেন, ‘বিগত বছরগুলোতে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাঁদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থাকা তথ্য ও প্রমাণাদি সরবরাহ করে গুমসংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রমকে বেগবান করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর তা যথাযথভাবে পালন করা গেলেই কেবল ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
তাঁর বক্তব্য, ‘একজন নাগরিক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য এ কাজে জড়িত সব পক্ষ, ব্যক্তি ও চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসা উচিত। গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা এই কমিশনকে অবহিত করা দরকার।

সব মামলা থেকে খালাস বাবর
নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, আটক এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পুরো বিষয়টি ছিল কারসাজি। আর এই কারসাজির প্রধান ভিকটিম (ভুক্তভোগী) হলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর।
বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দেন।
রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে লুত্ফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে আর কোনো সাজা থাকল না।
মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা করা হয়েছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছিল।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৭ মে যৌথ বাহিনী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বাসা থেকে আটক করে। পরদিন তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের সাত দিন পর অর্থাত্ ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ও ১৯(চ) ধারায় একটি মামলা করেন গুলশান থানার এসআই হেলাল উদ্দিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথ বাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁর স্ত্রী তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলভারেরটি দেখাতে পারেননি। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ বাবরকে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছর সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালেই হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর, যার ওপর শুনানি শেষে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
গত বছর ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বাবরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা থেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলায়ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।