বইমেলায় হঠাৎ ভিন্ন পরিবেশ

  • সালেহ ফুয়াদ
শেয়ার
বইমেলায় হঠাৎ ভিন্ন পরিবেশ

১৯৭৯ সালের কথা। সেই সময়কার পশ্চিম জার্মানিতে জীবন বদলের আশায় চলে গিয়েছিলেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন। দুই বছর শ্রমিকের জীবন যাপন করে ফিরে এসে লিখেছিলেন পরাধীনতা। এই উপন্যাস পড়ে চমকে উঠেছিলেন দেশের বিখ্যাত লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবীরা।

তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র অসহায় মানুষের এক নির্মম জীবনচিত্র এই উপন্যাস। ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটির এবার তৃতীয় সংস্করণ এনেছে অন্যপ্রকাশ। বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, বিখ্যাত এই বই পাঠক আগ্রহ নিয়ে কিনছেন।

অনন্যা এবার প্রকাশ করেছে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোর উপন্যাস রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি

গত কয়েক দিনে বইটির প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়েছে। আজ নতুন মুদ্রণ আসার কথা রয়েছে বলে জানালেন অনন্যার কর্মকর্তা প্রীতম আদনান। জানালেন, এবার দর্শনার্থী উপস্থিতি ও কেনাকাটা দুটিই ভালো।

গতকাল সোমবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৮৪টি।

এ নিয়ে গত ১০ দিনে নতুন বই এসেছে ৭৩৭টি। অন্য দিনের মতো গতকালও ছিমছাম বইমেলা ভালোই চলছিল। অবসর প্রকাশনা সংস্থার মাসুদ রানা জানালেন, এবার প্রায়ই শাহবাগে দাবিদাওয়া, সমাবেশ লেগে থাকছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে এর প্রভাব পড়ে মেলায়। এর পরও এবার বেচাকেনা একেবারে মন্দ নয়।
এই আলাপের মাঝখানেই একজন পাঠক চাইলেন কবি জসীমউদদীনের বাঙালির হাসির গল্প বইটি। মাসুদ রানা বললেন, জসীমউদদীনের বইগুলো প্রকাশ করে পলাশ প্রকাশনী। কবির ছেলেই প্রকাশনীটি চালান। ওখানে পাবেন।

আরো দু-একটি প্রকাশনী ঘুরে দিব্যপ্রকাশের সামনে যেতেই এর পেছন থেকে একটি মিছিলের শব্দ শোনা গেল। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। মিছিলের অগ্রভাগে পুলিশ সদস্যরা কাউকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উত্তেজিত জনতা স্লোগান দিয়ে ধাওয়া করছে। পুলিশ কন্ট্রোলরুমের সামনে গিয়ে এই মিছিল থামে। স্লোগানদাতা কয়েকজন জানান, সব্যসাচী প্রকাশনী এবার নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের চুম্বন বইটি মেলায় নিয়ে এসেছে। এই লেখিকা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাত্রজনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর বই মেলায় না রাখার অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। পুলিশ সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবকে হেফাজতে নেয়।

শতাব্দী ভব গতকাল বিকেলে ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। সেখানে তিনি বলেন, আজ থেকে বইমেলায় তসলিমা নাসরিনের চুম্বন বইটি নিষিদ্ধ হলো। একসঙ্গে তসলিমা নাসরিন নামটিও নিষিদ্ধ হলো। গতকাল রাত থেকে একাধিক ইসলামী গ্রুপ এবং শত শত ইসলামিক পাবলিক পোস্ট করেছে সব্যসাচীর স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। হাজার হাজার শেয়ার হয়েছে সেগুলো। সব্যসাচী এখনো কিভাবে সাহস করে তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করতে, বই বেচতে, সব্যসাচীর স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়া ঈমানি দায়িত্বএ রকম কথা দিয়ে পোস্ট দিয়েছে।

এরপর সন্ধ্যায় মেলার মাঠে সেই ঘটনা ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় সব্যসাচীর ১২৮ নম্বর স্টল। পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে বের করে প্রকাশককে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকাশকের স্ত্রী সানজানা মেহেরান বলেন, রবিবার রাত থেকে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অনলাইন মাধ্যম থেকে প্রচার করা হয়, সব্যসাচীর স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই পাওয়া যাচ্ছে। এরপর ফেসবুকে তারা আমাদের হুমকিও দেয়। বিষয়টি আমি সকালে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে জানাই। আর তসলিমা নাসরিনের বইগুলোও সরিয়ে নিই। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি ও মেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলি। বই সরিয়ে নেওয়ার পরও বিকেলে দল বেঁধে কয়েকজন যুবক আমাদের স্টলের সামনে এসে তসলিমা নাসরিনের বই না পেয়ে অন্য লেখকদের বইগুলোও ছুড়ে ফেলে আমার স্টলকে তছনছ করে দেয়। তারা নারায়ে তাকবির বলে স্লোগান দিলে আমার স্বামী ভব জয় বাংলা বলে স্লোগান দেয়। এ সময় মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ এসে ভবকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। তসলিমা নাসরিনের বই সরিয়ে ফেলার পরও তারা কেন আমাদের ওপর হামলা করল এবং আমাদের স্টল ভেঙে তছনছ করল, বিষয়টি আমাকে খুবই পীড়া দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা হওয়ার পর থেকেই আমরা নজরে রেখেছি। টাস্কফোর্সে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাপুসের প্রতিনিধি আছেন। প্রকাশককে হয়তো কোথাও থেকে বইগুলো সরাতে বলা হয়। আমরা দেখেছি তিনি সরিয়েছেন। পরে একটি মব সৃষ্টি হয়। পুলিশ কন্ট্রোলরুমে দুই পক্ষকে বসিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। স্টল বন্ধ করা হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হয়তো সাময়িক বন্ধ রেখেছে। বাংলা একাডেমি কোনো স্টল বন্ধ করে না। তিনি আরো বলেন, অবশ্যই সামনে নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হবে।

এর পরও গতকাল গতকাল বইমেলায় ইমদাদুল হক মিলনের পরাধীনতা (অন্যপ্রকাশ) ছাড়া আলোচনায় ছিল হাবীবুল্লাহ সিরাজীর তিন ভুবনের চাঁদ (আগামী প্রকাশন), পাপড়ি রহমানের ঊষর দিন ধূসর রাত (বেঙ্গল পাবলিকেশনস) এবং মাহবুব কবিরের ওপরে ওঠার সিঁড়ি (বাতিঘর)।

মূলমঞ্চ : বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ড. মনিরুজ্জামানের সময়রেখা : ভাষাবিজ্ঞানের ত্রিকালদর্শী পরিব্রাজক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেন সালমা নাসরীন ও মামুন অর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মনসুর মুসা। লেখক বলছি মঞ্চে নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা ও হিজল জোবায়ের।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ

দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি

অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত মঙ্গলবার তাঁকে অপসারণ করেন। পরে বুধবার আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ৬ দফা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদ থেকে অপসারণ করেছেন।

২০১৮ সালের ৩১ মে খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০২০ সালের ৩০ মে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, সেই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক ছিলেন খিজির হায়াত। কোটা পুনর্বহালের পূর্ণাঙ্গ রায়টি তিনি লিখেছিলেন।

এই রায়ের পরই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিলে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

খিজির হায়াতের অপসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতেই অপসারণ করা হয়েছে। আরো ছয় বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে হাইকোর্টের সদ্য সাবেক বিচারপতি খিজির হায়াতকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দুই দশকে দুই বিচারপতির অপসারণ : নিকট অতীতে দুজন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ৯ জন বিচারপতি পদত্যাগ করলেও গত দুই দশকে অপসারণের ঘটনা এটি দ্বিতীয়। ২০০৩ সালের অক্টোবরে আইনজীবীদের এক সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তত্কালীন সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে জামিন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসের অভিযোগ ছিল। পরে এই অভিযোগ তদন্ত করেন তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

তদন্ত শেষে কাউন্সিল শাহিদুর রহমানকে অপসারণের সুপারিশ করে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রতিবেদন দেয়।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্বাপর : সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণসংক্রান্ত সাংবিধানিক ফোরাম হচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট। পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৮ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়, চলে ১১ দিন। শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ৩ জুলাই রায় দেন আপিল বিভাগ। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ পেলে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করে। এরপর বিভিন্ন সময় এই আবেদন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলেও রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী পক্ষের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়।

 

মন্তব্য

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

শেয়ার
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে ছিল মেঘলা আকাশ। দুপুরের দিকে কোথাও কোথাও ঝরেছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তোপখানা রোড থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
শেয়ার
গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি
বেতন-বোনাসের দাবিতে গতকাল গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

গাজীপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন চার কারখানার শ্রমিকরা। এর মধ্যে মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকার তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ কারখানাগুলো হলো স্বাধীন গার্মেন্টস, স্বাধীন ডায়িং ও স্বাধীন প্রিন্টিং। সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেটে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে মূল ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

অন্যদিকে ঈদের ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল হোতাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সদর উপজেলার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, কয়েক দিন ধরেই বার্ষিক ছুটির ভাতা, ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কারখানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা কিছুদিন ধরে কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান না করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুর সদরের হোতাপাড়া এলাকায় সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মনিপুর এলাকার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা। দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটি ১০ দিন ঘোষণা করেছে ইউটা কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকরা ১০ দিনের পরিবর্তে ১২ দিন ছুটির দাবি জানান।

৫ কর্মকর্তাকে মারধর, আটক ৪ : বেতনবৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ঈদ বোনাস ও ঈদের ছুটি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ রওশন সড়ক এলাকার শফি প্রসেসিং গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তাঁরা কারখানার জিএমসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর করেন।

এ ঘটনায় এক নারীসহ চার শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

 

মন্তব্য
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে দেবপ্রিয়

সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্দেশে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা সাম্প্রতিক দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকার যে কথা বলে, তার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য রয়ে যায়। এই পার্থক্যটার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, যে মানুষগুলো গণতন্ত্রের অভাবের সময় বিপন্ন ছিল, সেই বিপন্নতা এখনো দূর হলো না।

বৃহস্পতিবার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি শীর্ষক একটি সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই সংলাপে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার বদল হওয়া আর শাসকের পরিবর্তন হওয়া এক বিষয় নয়। একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁরা সংখ্যায় বড় না, কিন্তু তাঁদের কণ্ঠস্বর অনেক বড়।

তাঁদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সংস্কারের বিষয়ে হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিষয়ে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পরিতাপের ব্যাপার হলো যতগুলো কমিশন গঠন হয়েছে সেখানে পার্বত্য, বা সমতলের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন? তার মধ্যে নারী প্রতিনিধি ঠিকমতো হয়েছেন। সবচেয়ে সুবোধ সরকারও তা করতে পারছে না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বা একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। অর্থের সমস্যা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেককে হেনস্তার শিকার করা হয়েছে এবং কথা বলা যখন খুবই দুর্যোগ ছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একা না পারি সবাই মিলে করব।

সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থানে আমরা বৈষম্যবিরোধী কথা বলি।

কিন্তু আমরা কি আসলেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি? কোনো বৈষম্যের কথা বলি, আবার কোনো বৈষম্যের কথা চেপে যাই।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হুমা খান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে আরো কৌশলী হতে হবে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আসলে কারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি  স্টেফান লিলার বক্তব্য দেন।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ