ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এই আনন্দ বাড়িয়ে দেয় প্রিয়জনের সান্নিধ্য। প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসবের আমেজ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামে ছুটে চলা মানুষের আনন্দকে বিষাদে পরিণত করে সড়ক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রতিবছরই হারিয়ে যায় অনেক পরিবারের আপনজন।
ঈদ যাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা
জহিরুল ইসলাম

২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে যাতায়াতে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আশঙ্কা, এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। সংগঠনটি বলছে, এবারের ঈদে ১১ হাজার বাসসহ ছয় লাখ ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন চলবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রধান শঙ্কা তিনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে রোড সাইন ও সড়কবাতি না থাকা, টার্নিং চিহ্ন না থাকা, সড়কে নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি ও ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো—এসব দুর্ঘটনার কারণ।
সংগঠনটি বলছে, এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ‘মোটরসাইকেল ও ইজি বাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা’, সড়কে আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান, ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ, উন্নতমানের বাস নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও রোড সেফটি অডিট করা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল করা জরুরি।
গত বছর সড়ক দুর্ঘটনার অর্ধেকই মোটরসাইকেলে : ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতর ঘিরে ৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে দুর্ঘটনার এক চিত্র তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্যে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে সড়কে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হয়, আহত হয় এক হাজার ৩৯৮ জন। এর মধ্যে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৪০ জন আহত হয়, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ।
সংগঠনটির হিসাবে গত বছর ঈদুল ফিতরের ১৫ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪১৯ দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও এক হাজার ৪২৪ জন আহত হয়। শুধু রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়। নৌপথের দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়।
গত বছর ঈদুল ফিতরের পর যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৪০.৫০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.২৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান-লরি, ৬.৫০ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫.৯৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৬.১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২.১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজি বাইক-ভ্যান-সাইকেল এবং ১৪.৪৬ শতাংশ বাস দুর্ঘটনায় পড়ে। এর মধ্যে ২৬.৩১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৭.১১ শতাংশ পথচারীকে চাপা, ২২.৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, ০.৫০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে সংঘর্ষ, ০.৫০ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ৩ শতাংশ অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
গত বছর ঈদুল ফিতরের পর রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরে আগের বছরের তুলনায় ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০.১৯ শতাংশ বাড়ে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের ঈদ যাত্রায় (ঈদুল ফিতর) সড়ক দুর্ঘটনা ৩৯.২০ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২০.১৯ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে তখন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) জানায়, দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়েনি, তবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
গবেষণা ও সচেতনতামূলক সংগঠন সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। কারণ অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলের বেপরোয়া ভাব বেড়েছে। একই সঙ্গে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান থেকে শুরু করে বেশির ভাগ বাসচালক নিয়ম মানেন না। যাত্রীবাহী বাসগুলো কিভাবে ট্রিপ মেরে আবার গন্তব্যে ফিরে বাস ভর্তি করবে সেই তাড়াহুড়ায় থাকে। অনেক সময় বাসের ত্রুটিও লক্ষ করা হয় না।’
সম্পর্কিত খবর

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ
দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি
মেহেদী হাসান পিয়াস

অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত মঙ্গলবার তাঁকে অপসারণ করেন। পরে বুধবার আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ৬ দফা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদ থেকে অপসারণ করেছেন।
২০১৮ সালের ৩১ মে খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০২০ সালের ৩০ মে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, সেই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক ছিলেন খিজির হায়াত। কোটা পুনর্বহালের পূর্ণাঙ্গ রায়টি তিনি লিখেছিলেন।
খিজির হায়াতের অপসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতেই অপসারণ করা হয়েছে।’ আরো ছয় বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে হাইকোর্টের সদ্য সাবেক বিচারপতি খিজির হায়াতকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
দুই দশকে দুই বিচারপতির অপসারণ : নিকট অতীতে দুজন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ৯ জন বিচারপতি পদত্যাগ করলেও গত দুই দশকে অপসারণের ঘটনা এটি দ্বিতীয়। ২০০৩ সালের অক্টোবরে আইনজীবীদের এক সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তত্কালীন সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘পেশাগত অসদাচরণের’ অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে জামিন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসের অভিযোগ ছিল। পরে এই অভিযোগ তদন্ত করেন তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্বাপর : সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণসংক্রান্ত সাংবিধানিক ফোরাম হচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট। পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৮ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়, চলে ১১ দিন। শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ৩ জুলাই রায় দেন আপিল বিভাগ। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ পেলে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করে। এরপর বিভিন্ন সময় এই আবেদন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলেও রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী পক্ষের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি


গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর

গাজীপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন চার কারখানার শ্রমিকরা। এর মধ্যে মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকার তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ কারখানাগুলো হলো স্বাধীন গার্মেন্টস, স্বাধীন ডায়িং ও স্বাধীন প্রিন্টিং। সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেটে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে মূল ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শ্রমিকরা জানান, কয়েক দিন ধরেই বার্ষিক ছুটির ভাতা, ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কারখানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা কিছুদিন ধরে কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান না করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুর সদরের হোতাপাড়া এলাকায় সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মনিপুর এলাকার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা। দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
৫ কর্মকর্তাকে মারধর, আটক ৪ : বেতনবৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ঈদ বোনাস ও ঈদের ছুটি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ রওশন সড়ক এলাকার শফি প্রসেসিং গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তাঁরা কারখানার জিএমসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর করেন।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে দেবপ্রিয়
সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্দেশে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকার যে কথা বলে, তার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য রয়ে যায়। এই পার্থক্যটার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, যে মানুষগুলো গণতন্ত্রের অভাবের সময় বিপন্ন ছিল, সেই বিপন্নতা এখনো দূর হলো না।’
বৃহস্পতিবার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক একটি সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই সংলাপে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার বদল হওয়া আর শাসকের পরিবর্তন হওয়া এক বিষয় নয়। একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁরা সংখ্যায় বড় না, কিন্তু তাঁদের কণ্ঠস্বর অনেক বড়।
সংস্কারের বিষয়ে হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিষয়ে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পরিতাপের ব্যাপার হলো যতগুলো কমিশন গঠন হয়েছে সেখানে পার্বত্য, বা সমতলের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন? তার মধ্যে নারী প্রতিনিধি ঠিকমতো হয়েছেন। সবচেয়ে সুবোধ সরকারও তা করতে পারছে না।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বা একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। অর্থের সমস্যা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেককে হেনস্তার শিকার করা হয়েছে এবং কথা বলা যখন খুবই দুর্যোগ ছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একা না পারি সবাই মিলে করব।
সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থানে আমরা বৈষম্যবিরোধী কথা বলি।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হুমা খান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে আরো কৌশলী হতে হবে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আসলে কারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বক্তব্য দেন।