বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) ব্যক্তিগত গোপন ভল্ট অবরুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সেই ভল্টে অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই এই অভিযান পরিচালিত হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সবার জন্য প্রধান কার্যালয়ে লকারের ব্যবস্থা রয়েছে।
সেই লকারে দামি সম্পদগুলো সংরক্ষণ করেন কর্মকর্তারা। তবে বেশির ভাগ কর্মকর্তাই এই লকার ব্যবহার করেন না। এখানে রেজিস্টার ফলো করা হয়। রেজিস্টারে নাম এবং পরিমাণ লিখে সম্পদ সংরক্ষণ ও উত্তোলন করা যায়। এরই মধ্যে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে তারা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এস কে সুরের নিজস্ব ভল্টে দামি অলংকার থাকতে পারে। তাই তাঁর লকার অবরুদ্ধ করা হয়। শিগগিরই দুদক আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সশরীরে এই ভল্ট পরিদর্শন করবে।
এদিকে গত ১৯ জানুয়ারি দুদক অভিযান চালিয়ে এস কে সুরের ধানমণ্ডির বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করেছে। বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে নানা মূল্যবান সম্পদ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওই টাকা গণনা করা হয়। বাসার মূল্যবান ৩৬টি সম্পদের তালিকা করা হয়।
দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ অনুসন্ধান টিম গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় এস কে সুরের বাসায় অভিযান শুরু করে এবং তা শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
তল্লাশির সময় একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারের সন্ধান পাওয়া যায়। লকারটি কোনোভাবে যাতে খোলা বা স্থানান্তর না হয়—এমন নির্দেশনা দিয়েই গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকারের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক আমজাদ হোসেনের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে দুদক। দুদক এই কর্মকর্তাকে বলেছে, আদালতের অনুমতি নিয়েই কমিশন লকারটি খুলতে চায়।
দুর্নীতি মামলার কোনো আসামির অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ করা খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যক্তিগত লকার এই প্রথম খুলতে যাচ্ছে দুদক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানেই অপরাধলব্ধ অর্থ সংরক্ষণ করেছেন এস কে সুর। একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটকারী পি কে হালদারের দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন তিনি। হালদারকে অবাধে দুর্নীতি করার সুয়োগ করে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে এস কে সুর মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেতেন। উপঢৌকন হিসেবে পেতেন নানা মূল্যবান সম্পদ। দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সুর বর্তমানে জেলে আছেন। আর হালদার বর্তমানে ভারতে জেলে আছেন।
নির্ধারিত সময়ে সম্পদবিবরণী দাখিল না করায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এস কে সুর, তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও মেয়ে নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে নন-সাবমিশন মামলা করে দুদক। এই মামলার তদন্ত চলছে। আদালতে মামলার যে চার্জশিট দেওয়া হবে তাতে বাসা থেকে পাওয়া নগদ টাকা, সম্পদ, লকারের অর্থ-সম্পদ উল্লেখ করা হবে। এসব অর্থ-সম্পদ তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে কতটুকু অসংগতিপূর্ণ তা তুলে ধরা হবে চার্জশিটে।
গত ১৯ ডিসেম্বরের অভিযানে এস কে সুরের বাসায় যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে সেগুলো হলো, ৪০টি ব্যাংক হিসাবের নথি, ৫০ লাখ টাকার পেনশন সঞ্চয়পত্রের নথি, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতিতে বিশেষ মেয়াদি ৭৫ লাখ টাকার আমানত, প্রাইম ব্যাংকে জমা ১০ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ১০ লাখ টাকার, ১৩ হাজার ৪০০ টাকার ১৩৪টি প্রাইজবন্ড, ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, একাধিক পাসপোর্ট, সনি টিভি, সনি স্পিকার, ঝাড়বাতি, জেনারেল দুই টনের এসি দুটি, দামি রেফ্রিজারেটর, খাটসহ নানা মূল্যবান সম্পদ।