মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে রসিকতা করছেন না। তবে এ বিষয়ে এখনো চিন্তা করার সময় আসেনি।
এনবিসি নিউজকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘না, আমি মজা করছি না।
আমি মজা করছি না; কিন্তু এটা নিয়ে ভাবার এখনই সময় নয়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থিতার বিষয়ে বলেন, ‘এমন কিছু পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে আপনি এটি করতে পারেন।’ তবে নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
মার্কিন সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুসারে, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট টানা বা বিরতি দিয়ে চার বছর করে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নজিরবিহীনভাবে চার দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসেছিলেন ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। তার পর ১৯৫১ সালে সে দেশের সংবিধানে ২২তম সংশোধনী এনে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি দুই দফার বেশি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। সেই অঙ্ক মাথায় রাখলে জো বাইডেনকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করা ট্রাম্পের এটাই প্রেসিডেন্ট হিসাবে শেষ মেয়াদ। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে যাতে কোনো একজন ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত না-হয়, মূলত এই কারণেই এই সাংবিধানিক বদল ঘটানো হয়।
তবে মার্কিন মুলুকেও আরো অনেক মুলুকের মতো আইন যেমন আছে, তেমনই তার ফাঁকও রয়েছে। আমেরিকার মাত্র নয়জন প্রেসিডেন্ট ভোটে নির্বাচিত না হয়েই হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হয়েছিলেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্টদের মৃত্যু কিংবা অসুস্থতাজনিত কারণে ওই নয়জন মার্কিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছিলেন।
২২তম সংবিধান সংশোধনী আমেরিকার কোনো ব্যক্তিকে তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হতে দেয় না ঠিকই, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কি না, সেই বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলে না। আর ধোঁয়াশা সেখানেই।
পরিস্থিতি এমন হলেও হতে পারে যে, ২০২৮ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার একটি সাক্ষাৎকারে এমন একটি সম্ভাবনার কথা উস্কে দিয়েছেন সঞ্চালিকা নিজেই।
আরো পড়ুন
স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন মা-বাবারা
ট্রাম্প এই সম্ভাবনার কথা শুনে বলেন, ‘ভাল। এটা একটা (উপায়)। কিন্তু আরো আছে।’ তবে কোনো পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে আনেননি তিনি। তবে ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটি নিজেদের ভূমিকা বদল করবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট।
আর সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র পেলে ভ্যান্সের ডেপুটি হতেই পারেন ট্রাম্প। সে ক্ষেত্রে কোনো কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিতে পারেন ভ্যান্স। এই সম্ভাবনায় অবশ্য অনেক ‘যদি-তবে’ রয়েছে। তবে এটাও স্পষ্ট যে, সাংবিধানিক আইনের ফাঁককে নিজের অনুকূলে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন ট্রাম্প। সে ক্ষেত্রে ভোটে জিতে সাংবিধানিক ‘বাঁকা’ পথেই হোয়াইট হাউসে ঢুকবেন তিনি।
গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখেছিলেন যে, তিনি ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ভোটে লড়তে পারেন কি না। মার্চ মাসের গোড়ায় মার্কিন প্রশাসনের প্রথম সারির কর্তাব্যক্তিদের সামনেও নিজের এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন ট্রাম্প।
তবে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচন করতে চাওয়ার সুযোগ রয়েছে ট্রাম্পের করা এমন মন্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পার্টি ও তার নিজ দল রিপাবলিকান পার্টি থেকে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।