লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের সবচেয়ে বড় আয়োজন—বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনকে মাথায় রেখে এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিতে আয়োজিত এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
বইমেলা সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, সচিব মো. সেলিম রেজা ছাড়াও বইমেলার প্রধান স্পন্সর রকেট এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি ড্রিমার ডংকির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন লিখিত বক্তব্যে জানান, জ্ঞানভিত্তিক, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বই এবং বইমেলা সহায়ক।
সরকার আমিন জানান, এবারের বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিতে যাচ্ছে।
এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। গত বছরের মতো এবারও ৩৭টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগ স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। গত বছর শিশুচত্বরে ছিল ৬৮টি প্রতিষ্ঠান, এবার তা ৭৪টি।
বইমেলাকে সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর, কাঙ্ক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলোর একটি আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে এটি সফল হবে। জাতীয় এই আয়োজনকে নিজের মনে করে সবার অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় যে পরিসর রয়েছে তার জন্যও এই বইমেলা অত্যন্ত জরুরি।’
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব জানিয়েছেন, গতবারের মতোই রাখা হয়েছে বইমেলার বিন্যাস; তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিশেষ করে মেট্রো রেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে চারটি প্রবেশ ও বাহির পথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানাঘেঁষে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এবারও থাকছে নারী-পুরুষের জন্য পৃথক নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা। শিশুচত্বর মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশ নেওয়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি ও পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই। বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতা থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা এবারও থাকবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
বইমেলার সময়সূচি : ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।