নাম পরিবর্তন হলেও উন্নয়ন নেই

শরীফ শাওন
শরীফ শাওন
শেয়ার
নাম পরিবর্তন হলেও উন্নয়ন নেই

কিশোর সংশোধন কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র করার এক যুগ পরও দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। অভিযোগ রয়েছে, উন্নয়ন তো দূরের কথা, শিশুদের সংশোধনে সাধারণ যেসব উপাদান ও সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সেসবের কিছুই নেই এসব কেন্দ্রে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নামের পরিবর্তন করা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের কোনো তারতম্য হয়নি। উন্নয়ন কেন্দ্রে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকতে হয়, সেসবের কিছুই নেই এসব প্রতিষ্ঠানে।

শিশুদের আটক রাখা এবং জামিন বা মুক্তি দেওয়ার মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। রয়েছে পর্যাপ্ত জনবলসংকট। মানসম্মত উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাউন্সেলর ছাড়াও কয়েকটি বিষয় অপরিহার্য। এসব উন্নয়ন কেন্দ্রে যেহেতু শিশুরা থাকে, সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, বিনোদনের ব্যবস্থা, প্রাথমিক শিক্ষা ও বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

শিশু (কিশোর/কিশোরী) উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান শর্ত বা লক্ষ্যগুলোর প্রথমটি হলো কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শিশুদের অপরাধপ্রবণ মানসিকতার পরিবর্তন করা। অথচ ২০১৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হলেও জনবলকাঠামোতে এখন পর্যন্ত কাউন্সেলর পদটি যুক্ত করা হয়নি।

দেশে বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন তিনটি শিশু (কিশোর/কিশোরী) উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত শিশু (বালক) উন্নয়ন কেন্দ্র, গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে শিশু (বালিকা) উন্নয়ন কেন্দ্র এবং যশোর পুলেরহাটে শিশু (বালক) উন্নয়ন কেন্দ্র।

এসব প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যেও কাউন্সেলিংসহ বাকি উপাদানগুলো বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর শিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের কথাও বলা আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব লক্ষ্যের কোনোটিই পূরণ করতে পারছে না বিদ্যমান উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো। প্রতিষ্ঠালগ্ন (১৯৭৮) থেকেই কেন্দ্রগুলোতে জনবলসংকট প্রকট। বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা।

বেশির ভাগ শিক্ষক পদে জনবল নেই। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক না থাকায় তিনটি কেন্দ্রের ৯টি ট্রেড কোর্স বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

টঙ্গীর উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩০০ শিশুর ধারণক্ষমতা থাকলেও বেশির ভাগ সময় সেখানে পাঁচ শতাধিক শিশু গাদাগাদি করে থাকছে। কখনো তা বেড়ে তিন গুণে দাঁড়ায়। যশোর বালক শাখায় ১৫০ শিশুর ধারণক্ষমতা থাকলেও প্রায় দ্বিগুণ শিশু থাকছে। এসব শিশুর শারীরিক বিকাশের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ডাক্তার বা নার্স থাকা বাধ্যতামূলক হলেও জনবলকাঠামোতে এখনো এসব পদ যুক্ত হয়নি।

মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান শর্ত কাউন্সেলিং ব্যবস্থা থাকা। কাউন্সেলর না থাকলে একটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন কেন্দ্র বলা যায় না। যে লক্ষ্য নিয়ে উন্নয়ন কেন্দ্র করা হয়েছে, আজও তা পূরণ হয়নি।

তিনি বলেন, সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলছে, তা সঠিকভাবে মনিটর করা হচ্ছে না। গত ১৫ থেকে ২০ বছর সরকারি খাতে কেউ স্বচ্ছতার ও জবাবদিহির মধ্যে ছিল না।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, তিনটি কেন্দ্রে বর্তমানে মোট অনুমোদিত জনবল ১৪৩। বর্তমানে মাত্র ৮৩ জন কাজ করছেন, ৬০টি পদই ফাঁকা। গত ১২ মার্চ পর্যন্ত এসব উন্নয়ন কেন্দ্রে মোট শিশু ছিল ৮০০ জন। এদিন সারা দেশের বিভিন্ন কোর্ট ও কারাগার থেকে মোট ১২ শিশুকে কেন্দ্রে আনা হয়, জামিনে মুক্তি পায় ১৩ শিশু। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত এই তিনটি কেন্দ্র থেকে জামিন ও মুক্তি পেয়েছে ৬০ হাজার ৬২১ জন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) এবং কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সমির মল্লিক সংকটের বিষয়গুলোর কথা স্বীকার করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের একটি প্রকল্প থেকে কিছুসংখ্যক কাউন্সেলর উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে খণ্ডকালীন কাজ করছেন। তবে ওই প্রকল্প শেষ হলে কেন্দ্রগুলোর বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। প্রতি সপ্তাহে থোক বরাদ্দের মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের জনবলসংকট আছে, এ বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। নানা সংকটের কারণে জামিনে যাওয়া শিশুদের তদারকির ব্যবস্থা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। তবে শিশুদের উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সমাবেশ

শেয়ার
সমাবেশ
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল শাহবাগে জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

ডিএমপির অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৯৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ডিএমপির অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৯৩

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত দুই দিনে মহানগরীর ৫০টি থানায় চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম জোরদার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় বিভিন্ন অপরাধে ১১৬টি মামলা করা হয়েছে। ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে মহানগরজুড়ে দুই পালায় মোট এক হাজার ৩৩৪টি টহল টিম কাজ করে। এর মধ্যে ৬৮০টি রাতের ও ৬৫৪টি দিনের টহল টিম ছিল।

মন্তব্য
সংক্ষিপ্ত

ভিয়েতনাম থেকে ২৯ হাজার টন চাল নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভিয়েতনাম থেকে ২৯ হাজার টন চাল নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে

ভিয়েতনাম থেকে ২৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি ওবিই ডিনারেস জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত জিটুজি চুক্তির আওতায় তৃতীয় চালান হিসেবে এই চাল এসেছে। গতকাল শনিবার ঢাকায় সরকারি তথ্যবিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়। তথ্যবিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা পরীক্ষা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং চাল খালাসের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে।

এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি ভিত্তিতে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুটি চালানে ৩০ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল এর আগে দেশে পৌঁছেছে।

মন্তব্য
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে, নির্বাচন পেছানো যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে, নির্বাচন পেছানো যাবে না

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, যে সরকারই আসুক শেখ হাসিনার বিচার করতেই হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানো যাবে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর আসাদগেটে ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড মিলনায়তনে ঢাকার সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ডক্টর ইউনূস সাহেব আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন সম্মানিত ব্যক্তি।

তাঁকে অসম্মান করাটা ঠিক হবে না। তাঁকে সুযোগ করে দেওয়া হোক, অতি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে উনি চলে যান। এখন কেউ যদি বলে, হাসিনার বিচার যত দিন পর্যন্ত না হবে, নির্বাচন তত দিন হবে না! এখন হাসিনার বিচার কি আমরা চাই না? সে কি আমাদের নির্যাতন করেনি? হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে, যে সরকারই আসুক না কেন। এখন তাঁর বিচার যদি নির্বাচনের সঙ্গে ট্যাগ করা হয়..., তার বিচার হতে সাত বছর লাগবে।
তাহলে কি আমরা এই সাত বছর বসে বসে তামাক খাব? বললেই তো হবে না। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মতো কথা বললে তো হবে না। 

তিনি বলেন, দেখেন ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত গাছের পাতা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছিল। যেই সকাল বেলা খবর হলো শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব নিহত হয়েছেন, আওয়ামী লীগ কোথায় হাওয়া হয়ে গেল, কেউ খুঁজে পেল না।

আবার যদি এরও পেছনে যাই আমি, ৭০-এর নির্বাচনে জনগণের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে তাদের নির্বাচিত করল। তার পরে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আলোচনা-সমালোচনা অনেক কিছু করেছে। ৭ মার্চের ভাষণ যদি শোনেন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে। কিন্তু ওই ভাষণে সমঝোতার কথা ছিল। ভাষণের শেষে গিয়ে বললেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
জয় বাংলা জয় পাকিস্তান। তো এইটা তো স্বাধীনতার ঘোষণা হলো না। তখন বলছিলেন আসুন বসুন, আলোচনা করুন পার্লামেন্টে আসুন, এটা কি স্বাধীনতার ঘোষণা? তার পর ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানিরা যখন হামলা করল, তখনো আওয়ামী লীগ নেই। নেই তো নেই। এই সাত কোটি মানুষ কী করবে? কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? কার কাছে আশ্রয় নেবে? এমপি-নেতা সব ভেগে গিয়েছিলেন। কেউ ছিলেন না। এই হলো আওয়ামী লীগ।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ