সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শিশুদের সংখ্যাকে বড় বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি বলছে, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশে শিশু ধর্ষণের প্রায় ৫০টি ঘটনা রেকর্ড করেছে। গতকাল রবিবার শিশুদের ওপর সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই (শিশু ধর্ষণ) প্রবণতা দিন দিন আরো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে।
শুধু গত ১০ মার্চ (সোমবার) এক দিনেই সাত শিশু নিহত হয়েছে এবং ছয় শিশুর সঙ্গে সহিংসতার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে যাওয়া শিশুরা বিরাট মানসিক অভিঘাতের শিকার হয়। ভুক্তভোগী পরিবার ও গোষ্ঠীগুলো বয়ে বেড়ায় অকল্পনীয় কষ্টের অভিজ্ঞতা।
বিবৃতিতে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে শিশুদের ওপর, বিশেষ করে কন্যাশিশুদের ওপর যৌন সহিংসতার খবর উদ্বেগজনকভাবে বাড়ায় আমি গভীরভাবে আতঙ্কিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো যেসব জায়গায় শিশুদের সুরক্ষিত পরিবেশে বেড়ে ওঠার কথা, সেসব জায়গাসহ অন্যান্য জায়গায় শিশু ধর্ষণ ও শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতার ভয়ানক ঘটনাগুলো সম্প্রতি যেভাবে বেড়েছে, তা নিয়ে আমি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।’
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘মাগুরার আট বছরের শিশুটির মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। বাংলাদেশে শিশুরা, বিশেষ করে কন্যাশিশুরা, কিভাবে তাদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার গুরুতর লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে, সেটা ওই শিশুর মৃত্যু আমাদের ভয়ংকরভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, এসব ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে ঘরে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাদের কাছে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা সুরক্ষিত থাকে বলে সবাই আস্থা রাখে, সেসব মানুষের হাতে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা লঙ্ঘন হওয়ার ঘটনা সবার মনে গভীর দাগ কেটেছে এবং নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ইউনিসেফের হিসাবে, বিশ্বে বর্তমানে বেঁচে আছেন এমন প্রতি আটজন নারী ও শিশুর মধ্যে একজনের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়। আর বাংলাদেশে সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব অপরাধী প্রায়ই ভুক্তভোগীদের পরিচিত হয়ে থাকে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অপরাধীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের নির্দেশকে স্বাগত জানানো হয় বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধকে এর যথাযথ নাম ‘ধর্ষণ’ বলে সম্বোধন করার ওপরও জোর দেওয়া হয়।