<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ব্যাংকগুলোতে অর্থ লুটপাটের কাহিনি কারো অজানা নয়। প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা লুট করে, পুঁটি মাছের প্রাণ হরণ করে, সমাজের রুই-কাতলা এত দিন থেকেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে বর্তমান সরকার আসার পর এবং বিশেষত নবনিযুক্ত গভর্নরের সদিচ্ছায় তাদের গরু খোঁজা হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। সব ব্যাংকের ছাতা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এরই মধ্যে গৃহীত কিছু পদক্ষেপে তার ছাপ প্রতীয়মান হয়ে ওঠে। এর আগেও পত্রপত্রিকায় আলোচনা-সমালোচনার অভাব ছিল না, অভাব ছিল শুধু বাধা দূরীকরণে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রসঙ্গত বলে নেওয়া বোধ করি ভালো, চীন দেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে এ রকম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড় ধরনের ডাকাতরা ব্যাংক স্থাপন করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হুমায়ূন আহমেদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বহুব্রীহি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নাটকের একটি বিখ্যাত উক্তির মর্মার্থ স্মরণ করা যেতে পারে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিকশা চালিয়ে উপার্জন করলে মানুষ দেখে ফেলবে, মান-ইজ্জতের বালাই থাকবে না, তার চেয়ে অন্ধকারে চুরি করা অনেক ভালো, কেউ দেখবে না। উপার্জন হবে, কিন্তু মানসম্মান নিয়ে টানাটানি হবে না। বর্তমান বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে যে হরিলুট চলছে, তাতে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বহুব্রীহি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নাটকের এই উক্তিটি বারবার মনে পড়ে। ব্যাংকের সবাইকে অন্ধকারে রেখে অন্ধকার পথে ডাকাতি করে বড় হওয়ার বাসনা বড় বড় লোকের; দিনের আলোতে ছোটখাটো মানহানিকর। তাঁরা সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি, সংসদ সদস্য। তাঁদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে আকুলতা সবার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানা বাহানায় বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েই চলত। বর্তমানে প্রায় ৬০টি ব্যাংক কাজ করছে এবং শোনা কথা, কয়েক মাস আগেও ডজনখানেক অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। কোনো রাখঢাক না রেখে ব্যাংকের সংখ্যাবৃদ্ধির পক্ষে বেশ জোরেশোরে সাফাই গাইতেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রীরা। আপত্তি থাকার কথাও নয়, কারণ যাঁরা অনুমোদন পাচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সবাই সরকারের সমর্থক, কিন্তু মুশকিল হয় যখন সরকারের স্বার্থ ও দেশের স্বার্থ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত ব্যাংক যে কত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তার বড় প্রমাণ তদানীন্তন ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি। তারপর একে একে নিভছিল দেউটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সোনালী, জনতা, এমনকি অগ্রণী, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ইত্যাদি। ব্যাংকগুলোতে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকল্পে স্বয়ং সরকার উদগ্রীব ছিল বলে এন্তার অভিযোগ রয়েছে। আর এসব ঘটত অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনে। অথচ তারা অর্থবাজারের অভিভাবক দাবিদার। বাংলাদেশ ব্যাংক মুখে কুলুপ এঁটে মনে মনে গাইত, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার বলার কিছু ছিল না, না গো...চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে...</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন. </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/08-11-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="326" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/08-11-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বিরুপাক্ষ পাল থেকে ধার করা বক্তব্য দিয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যেতে পারে। স্যার আইজাক নিউটন নাকি একবার দরজায় বড় একটি গর্ত খুঁড়েছিলেন তাঁর বিড়ালটি আসা-যাওয়ার জন্য। এগুলোকে বলে পেট ডোরস বা পোষা প্রাণীর দরজা। সাধারণত দরজার নিচে দিয়ে রাস্তা। এই দরজায় তিনি আবার অন্য একটি ছোট গর্ত খোঁড়েন বিড়ালছানা আসা-যাওয়ার জন্য। আমরা নিশ্চিত নই সত্যি সত্যি নিউটন ওই কাজটি করেছিলেন কি না, তবে এই রূপক থেকে একটি শিক্ষা বেরিয়ে আসে। তা হলো এই যে বড় বিড়াল ও বিড়ালছানা যদি একই গর্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে, তাহলে ছোট গর্তটি অর্থহীন হয়ে পড়ে। তেমনি আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় যদি ব্যাংকিং খাতের সব দেখাশোনা করতে পারে, তাহলে আলাদা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাখার কোনো যুক্তি আছে কি? বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বিরুপাক্ষ পালের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিসের এক কোণে বাংলাদেশ ব্যাংককে জায়গা দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। এটি শুধু ব্যয়সাশ্রয়ী হবে না, এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার আপাত প্রতীয়মান দূরত্বকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবে বলে আমাদের ধারণা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্ভাগ্য আমাদের, বাংলাদেশের ব্যাংকিং বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কথাই যেন সরকার শুনতে আগ্রহী নয়। সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় যা করছে বা করে, তা অর্থনৈতিক বিবেচনা পুষ্ট নয়। যেমন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া কিংবা বন্দুকের মুখে একটি দক্ষ ব্যাংক কোনো লুটেরা গোষ্ঠীর হাতে ন্যস্ত করা। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের কাছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুড বয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইমেজ খাড়া করতে গিয়ে বাজারবহির্ভূত অসংগতিগুলোকে গিলতে বাধ্য হচ্ছে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন ব্যাংকের জন্ম ও ব্যাংক প্রশাসনে পরিবারতন্ত্রের পুনর্জন্ম ইত্যাদি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এবং তার সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের তিন মাস অতিক্রান্ত হতে চলল, এখনো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক কম্বল মে দো পীর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকিং ডিভিশন নিয়ে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমালোচিত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সমস্যার সমাধান হয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথা এমন যে সরকার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুঁজিপুনঃকরণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (রিক্যাপিটালাইজেশন) ঘোষণা করে রুগ্ণ ব্যাংকের পক্ষে দাঁড়ায়। ২০০৯ থেকে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পুঁজিপুনঃকরণের পুরো অর্থ ময়লার নালায় প্রবাহিত হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, প্রায় পুরো অর্থ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও দুর্নীতিবাজ লোকদের পকেটস্থ হয়েছে। এখন আবার তারা চাচ্ছে পুনঃপুঁজিকরণ অর্থ। তাদের এই দাবি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ব্যাংকের ব্যবহার উচ্ছন্নে যাওয়া বখাটে ছোকরার মতো, যে প্রত্যেক সময় বাবার টাকা আকাশে উড়িয়ে আবার বাবার কাছে হাত পাতে। পার্থক্য এটুকুই যে বখাটে ছেলেটিকে বাবা তাঁর পকেট থেকে টাকা দেন আর বখাটে ব্যাংকগুলোকে সরকার অর্থ দেয় জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে। প্রসঙ্গত, কেউ কেউ ভারতে কিছুকাল আগে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পুঁজিপুনঃকরণ প্রসঙ্গ টেনে আনে। আমরা ভালো ভালো দীক্ষা নিতে দুঃখ পাই অথচ মন্দ উদাহরণ টেনে মহানন্দে লাফাই। ভারতে ঋণ খেলাপের প্রধান কারণ আমলাতান্ত্রিক ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে মেগাপ্রকল্প শেষ হতে দেরি হওয়া এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীর আর্থিক দুর্গতি। অন্যদিকে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির কোনো প্রকল্পই থাকে না। যা-ও থাকে তা মিথ্যা প্রকল্প, মিথ্যা দলিল, যেখানে একমাত্র সত্যি হলো শক্ত রাজনৈতিক প্রশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির জন্ম। তা ছাড়া ভারতে পুঁজিপুনঃকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বহুমাত্রিক সংস্কার সাধনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে তা হয় না, বরং চোখ বুজে পুঁজিপুনঃকরণ করা হয়ে থাকে। অবশ্য নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর রুগ্ণ ব্যাংকের জন্য বেশ কিছু কঠিন শর্তে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খবর পাই যে বেসিক ব্যাংকের চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার জন্য ওই ব্যাংকের বোর্ডের কোনো সদস্যকে জেল খাটতে ও জরিমানা গুনতে হয়নি। এদিকে একই ব্যক্তির বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্পে জনতা ব্যাংক অর্থ ঢেলেছে। প্রায় ছয় কোটি টাকা অথচ এর বোর্ড সদস্য বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা এ পর্যন্তও রুজু করা হয়নি। সোনালী ও অন্যান্য ব্যাংকের কথা না হয় না-ই তোলা হলো। ফারমার্স ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ইত্যাদির সব বোর্ড সদস্য ও চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি না দিলে বাংলাদেশের অর্থ খাতে রক্ত ঝরতেই থাকবে। যথাযথ সংস্কার ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ মানে দাঁড়ায় পচা ব্যাঙ কুয়ায় রেখে পানি সেচা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অথচ আমরা তেমনটি কখনো চাইনি, এখনো চাই না। কেন্দ্রীয় তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনপদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। উন্নয়ন চেতনা, আর্থিক জগতে ইনোভেটিভ ও নীতি বাস্তবায়নে অধিকতর কঠোর হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দেওয়া। পুরো আর্থিক বাজারের উন্নতি ও অবনতির দায়ভার বাংলাদেশ ব্যাংকের। সরকার শুধু তার কর্তব্য পালনে সহায়তা করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচ. </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বহুদিন আগে একটি বইয়ে সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম এবং বিভিন্ন লেখায় তা উল্লেখিতও ছিল। যতটুকু মনে পড়ে ওই বইয়ে বলা হয়েছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটা ভালো গৃহবধূর মতো। ভালো গৃহবধূ স্বামীর সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্কাতর্কি, ঘ্যানরঘ্যানর করে, তবে শেষমেশ স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে নেয় এই বলে যে পতি পরমেশ্বর বলে কথা। ঠিক তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একেবারেই যে কিছু বলে না, তা নয়। তবে শেষমেশ মেনে নেয় যে সরকারই শেষ কথা। আমাদের মতো অনুন্নত দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা একজন ভালো গৃহবধূর মতোই। সমস্যাটি ওখানেই। আমরা চাই ব্যাংকের ছাতা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ভালো গৃহবধূ না হয়ে অর্থবাজারের অর্থবোধক অভিভাবক হিসেবে দাঁড়াক, নয়তো আর্থিক সুনামির তোড়ে ভেসে যাবে সবাই। আমরা রউফ তালুকদার ও ফজলে আকবরের মতো মেরুদণ্ডহীন গভর্নর চাই না; আমরা বর্তমান গভর্নরের কিংবা পূর্বসূরি এ কে এন আহমেদ, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সালেহউদ্দিন আহমেদের মতো গভর্নর চাই, যিনি সরকারকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলার হিম্মত রাখেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছয়.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেষ কথা হচ্ছে, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল শ্রেয়। এতগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থাকার প্রয়োজন আছে কি নেই, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। প্রয়োজন থেকে থাকলেও ওগুলো শুধু ডিপোজিট সংগ্রহে কাজে লাগানো যায় কি না, সেটিও ভাবার বিষয়। মোটকথা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈপ্লবিক সংস্কার না ঘটা পর্যন্ত আর্থিক খাতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। একমাত্র ব্যাপক সংস্কার সাপেক্ষে রুগ্ণ কোনো ব্যাংকের জন্য সীমিত মাত্রায় পুনঃপুঁজিকরণ হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে শর্তহীনভাবে পুনঃপুঁজিকরণ প্রক্রিয়া ব্যাংক রুগ্ণ হওয়ার অন্যতম উৎসাহদাতা। সুতরাং শেয়ার মার্কেটের ধ্বংসের মতো ব্যাংকিং খাতে যাতে সুনামি না আসতে পারে তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় পস্তাতে হবে সবাইকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাদটীকা </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুত্রযজ্ঞ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গল্পে দেখি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈদ্যনাথ পরে পরে দুইবার বিবাহ করিলেন, তাহাতে পুত্র না জন্মিয়া কেবলই কলহ জন্মিতে লাগিল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বাংলাদেশে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরে পরে বহু ব্যাংক হইল, কিন্তু তাহাতে আর্থিক শৃঙ্খলা জন্ম না নিয়া কেবলই বিশৃঙ্খলা জন্মিতে লাগিল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> একেই বলে পোড়া কপাল!</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>