<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর একটি ভয় ছিল অন্য রকমের। জাতীয়তাবাদকে নিয়ে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তখনো জন্মগ্রহণ করেনি। ১৯৭২ সালে লেখা আমার নিজের প্রবন্ধ দেখে নিজেই চমকে গেছি। দেখি সেই সময় ভয় পেয়েছি বাঙালি জাতীয়তাবাদকেই, উগ্র হবে মনে করে। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ তখন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কাটি ছিল এই রকমের যে এই নতুন জাতীয়তাবাদ না আবার বিঘ্ন ঘটায়, এটি না আবার আমাদের বিছিন্ন করে ফেলে পৃথিবী থেকে। জাতীয়তাবাদী উগ্রতা না জানি কোন সংকট আত্মসন্তুষ্টি ও অহমিকার পথে ঠেলে দেয় আমাদের এই জাতিকে। বুঝতে পারি এই বিভ্রান্তির পশ্চাতে ছিল উদারনৈতিক ধ্যান-ধারণার তৎপরতা। পৃথিবীর সঙ্গে সংলগ্ন থাকা খুবই জরুরি মনে হয়েছিল তখন। ভয়টিকে এখন বেশ কৌতুককর মনে হচ্ছে। জাতীয়তাবাদ মোটেই বিচ্ছিন্ন করেনি আমাদের, বরং পৃথিবীর সঙ্গে বড় বেশি জড়িত আজ আমরা। বৃহৎ পৃথিবীর ক্ষুদ্র অংশে পরিণত হয়ে বিপদে আছি। জাতীয়তাবাদকে এখন রাজনৈতিক দলের ঘোষণাপত্র ও বক্তব্য-বিবৃতির এবং দৈনিক পত্রিকার বিষণ্ন রচনাদির বাইরে পাওয়া কঠিন। জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব পরে আর জাতীয়তাবাদী থাকেনি অর্থাৎ সমগ্র জনগণের স্বার্থ দেখেনি, স্বার্থ দেখেছে গোষ্ঠী ও শ্রেণির; পরের সরকার আগের সরকারকে ছাড়িয়ে গেছে রাষ্ট্রকে আত্মনির্ভরতার পথ থেকে সরিয়ে বিদেশনির্ভর করার কাজে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একাত্তরের যুদ্ধটি কোনো গৃহযুদ্ধ ছিল না; এ ছিল একটি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানও একটি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রই ছিল, কিন্তু তার ভিত্তি ভূগোল, ইতিহাস কিংবা ভাষায় প্রোথিত ছিল না। এ ছিল কৃত্রিম। কৃত্রিম উপায়ে চেষ্টা করা হয়েছিল তাকে খাড়া করতে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধর্মের ওপর ভিত্তি করে। সে জায়গায় ওই পাকিস্তানি শাসন থেকেই বের হয়ে এসেছে নতুন এক জাতীয়তাবাদ, নিম্নচাপের ভেতর থেকে যেমন বের হয়ে আসে ঘূর্ণিঝড়। এই জাতীয়তাবাদটি আগে ছিল না। আগে ছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদ বনাম মুসলিম জাতীয়তাবাদ, যার চাপে অখণ্ড বঙ্গ বিভক্ত হয়েছিল দুই ভাগে। সেই জায়গায় ধর্ম ভুলে এবং শ্রেণিভেদকেও অস্বীকার করে আবির্ভাব ঘটল ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভেতরে পার্থক্য যে কতটা তার ধারণা এমনকি তাদের নামের মৌলিক পার্থক্য থেকেও পাওয়া যাবে না। কেননা চরিত্রে ও সম্ভাবনায় এই দুই জাতীয়তাবাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। একটি কৃত্রিম, অন্যটি স্বাভাবিক। একটির লক্ষ্য শোষণ, অন্যটির লক্ষ্য সাম্য সৃষ্টি। সাম্য সৃষ্টির লক্ষ্যের দিক থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সম্ভাবনা ছিল অপরিসীম। জাতীয়তাবাদ এই দিকে না গিয়ে তপ্ত অহমিকা সৃষ্টির দিকে যায় কি না, এটি নিয়েই ছিল আমার আশঙ্কা। বর্ণবাদ যেমন কচ্ছপে পরিণত করতে পারে একটি জাতিকে, ধারণা সৃষ্টি করতে পারে যে বিশ্বটা তার পিঠের আচ্ছাদনটির সমান বড়, তেমন কিছু না আবার ঘটে বসে স্বাধীন বাংলাদেশে। হায় রে আশঙ্কা! কেননা অহংকার তো দরকার, বেঁচে থাকতে হলে। আত্মসমর্পণকে যতই উদার মনে হোক, সে যত বেশি উদার হবে, ততই বিপদ ঘটবে। যেমনটি ঘটেছে আমাদের বেলায়। আমরা পাকিস্তানিদের হারিয়ে দিয়ে পরে পুঁজিবাদী বিশ্বের কাছে নিজেরাই হেরে গেছি। পাকিস্তানিদের অস্ত্রের নিচে আত্মসমর্পণ করলাম না, আত্মসমর্পণ করলাম বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্যন্তরীণ শত্রু যে ছিল না, তা-ও নয়। ছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেকেই এই জাতীয়তাবাদকে মেনে নেয়নি কিংবা মেনে নিয়েছে নিতান্ত বাধ্য হয়ে। আলবদর-রাজাকার ছিল। এদের পেছনে ছিল জামায়াতে ইসলামী, যারা ছিল পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের সমর্থক। জামায়াতিরা একসময়ে পাকিস্তানেও বিশ্বাস করত না, পরে ওই পাকিস্তানেরই রক্ষাকর্তা সেজে গেল। সাজল লাভের আশায়, উচ্ছিষ্ট ভোগের লোভে। সেনাবাহিনীর দালাল হিসেবে কাজ করে যেটুকু পাওয়া যায়, সেটুকুই হস্তগত করতে চেয়েছে। একাত্তরে জামায়াতিরা বলেছিল, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিহত করে তারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখবে। মিথ্যাবাদী! পাকিস্তানের পতনের পর তারা জীবনদান কিংবা আত্মহত্যা কোনোটিই করেনি। পালিয়ে গেছে। পরে যে বাংলাদেশে তারা বিশ্বাস করে না বলে কসম করেছিল, তারই নাগরিক হয়েছে। রাত নেমে এসেছে মনে করে এখন আবার জন্তু-জানোয়ারের মতো নানা রকম উৎপাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বিপ্লব-পরবর্তী বাস্তবতা কখনোই এক নয়" height="313" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/17-12-2024/1.jpg" style="float:left" width="321" />বাঙালি জাতীয়তাবাদে তারাও বিশ্বাস করে না, যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। আমরা যে বাংলাদেশি কে তা অস্বীকার করবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আমরা নাগরিক তো অবশ্যই। কিন্তু নাগরিকত্বকে জাতীয়তায় পরিণত করার চেষ্টার পেছনে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মেনে না নেওয়ার যে একটি ইচ্ছা আছে, তা এখন আর অস্পষ্ট নয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলা ভাষার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলা ভাষা কোনো বিশেষ ধর্মের ভাষা নয়, কোনো বিশেষ শ্রেণিরও নয়। এ ভাষা সব বাংলাভাষীর। ভাষা চায় তার ব্যবহার সর্বজনীন হোক। আর সেখানেই সে সমাজতান্ত্রিক; তার আকাঙ্ক্ষায়, তার স্বভাবে। ভাষার এই সমাজতান্ত্রিক চরিত্রটি আমরা টের পাই চট্টগ্রাম গেলে। চট্টগ্রাম পুঁজিবাদ অধ্যুষিত অঞ্চল। কিন্তু তবু গাড়ির মালিক যখন তার ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলেন, শুনি ভাষাটি তাদের আঞ্চলিক। চট্টগ্রামবাসী ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ওই ভাষায়ই আদান-প্রদান। আর তার ফলে অতি দ্রুত একটি নৈকট্য তৈরি হয়ে যায়, যেটি অন্য দূরত্বকে কিছুটা হলেও (সাময়িকভাবে অবশ্যই) অন্তরালবর্তী করে দেয়। বাংলাদেশের সব বাঙালির ব্যাপারে এ ঘটনা সত্য হওয়া উচিত ছিল। ভাষা সেটিই চেয়েছে। ভাষা চায় নৈকট্যটা সাময়িক হবে না, স্থায়ী হবে। পার্থক্য থাকবে; ব্যবধান থাকবে মেধার, আকারের; চেহারার, দক্ষতার ও আরো অনেক কিছুর দূরত্ব, কিন্তু সেটি হবে বৈচিত্র্য</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্য নয়, বৈরিতা তো নয়ই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একাত্তর পূর্ববঙ্গের বাঙালিকে ওই রকম একটি অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। ওখানেই তো শক্তি ছিল আমাদের যুদ্ধের, ওই সংঘবদ্ধতায়। সর্বত্র যুদ্ধ হয়েছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে, বিদেশে, শহরে, গ্রামে। সব শ্রেণি ও ধর্মের মানুষ যোগ দিয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত ধারায় এসে। প্রাণ বাঁচানোর দায়ে নয় শুধু, প্রাণের সঙ্গে প্রাণকে যুক্ত করার অনুপ্রেরণায়ও। সাম্প্রদায়িকতাকে ভাষার ভেতরও প্রবেশ করানোর চেষ্টা হয়েছিল; জল ও পানির ধ্বনিগত ব্যবধানকে মন্দির ও মসজিদের মতো ধর্মীয় পার্থক্যে পরিণত করার উদ্যোগ ছিল। সেটি মধ্যবিত্তের কাজ। কৃষক এসব পার্থক্য নিয়ে মাথা ঘামায়নি, তার কাছে জলও যা, পানিও তা। কেননা সর্বদাই সে তৃষ্ণার্ত। মধ্যবিত্তের ভালো কাজ কম নয়, কিন্তু ভাষার ভেতর সাম্প্রদায়িকতা প্রবিষ্ট করার চেষ্টাকে তার গৌরবজনক কাজগুলোর একটি বলে গণ্য করার উপায় নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মধ্যবিত্তের ভালোমন্দ কাজের ক্ষমতার একটি পরিচয় চট্টগ্রামেরই সূর্য সেনের প্রসঙ্গ উঠলে ধরা পড়ে। সূর্য সেন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু সূর্য সেনের ওই বীরত্বপূর্ণ কাজের সমালোচনা মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই এসেছে। যেমন নীরদ সি চৌধুরী করেছেন। তিনি ঠাট্টা করেই বলেছেন যে সূর্য সেন নিতান্ত মূর্খ ছিলেন, নইলে কী করে ভাবলেন যে ইংরেজের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া কয়েকটি অস্ত্র দিয়ে বিশাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে ভারতছাড়া করবেন। তা ছাড়া সূর্য সেনের ওই চট্টগ্রাম কোথায় গেল শেষ পর্যন্ত? গেল তো পাকিস্তানে। তাহলে সেই চট্টগ্রামকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাধীন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> করার জন্য ওভাবে কেন প্রাণদান? নীরদ সি চৌধুরীর বক্তব্যে যে সত্য নেই, তা তো নয়। আছে। সূর্য সেনের ফাঁসি হয়েছে ১৯৩৪ সালে। ভারতবর্ষ তখন স্বাধীন হয়নি। পরে যখন স্বাধীন হলো, চট্টগ্রাম তখন চলে গেল পাকিস্তানে। কথা দুটি সত্য। কিন্তু সত্য আরো একটি আছে, সেটি এই যে ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালের অনেক আগেই ইংরেজমুক্ত হতো, নীরদ চৌধুরীরা যদি বাদ না সাধতেন। তারা যে ইংরেজের প্রতি অনুগত হওয়ার বাণী ও মাহাত্ম্য প্রচার করলেন, সে জন্যই ইংরেজ টিকে রইল। সবার সূর্য সেন হওয়ার অর্থাৎ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার প্রয়োজন ছিল না, মধ্যবিত্ত যদি সর্বজনীনভাবে ইংরেজকে প্রত্যাখ্যান করত, তাহলেই হতো। কিন্তু মধ্যবিত্ত তা করেনি। একাংশ লড়াই করেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, বড় অংশ করেছে সেই সাম্রাজ্যবাদের সেবা। বাঁচতে চেয়েছে ভৃত্য ও পতঙ্গ হয়ে। বাবু এবং মিয়ারা মধ্যবিত্তের যে অংশের প্রতিনিধি, তারা আরো একটি মারাত্মক ক্ষতিকর কাজ করেছেন। সেটি হলো সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি; বাঙালিকে তারা বাঙালি থাকতে দেননি, হিন্দু বাঙালি ও মুসলিম বাঙালিতে পরিণত করে তবে ছেড়েছেন। ভাষা নিষেধ করেছে। বাংলা ভাগ হোক, বাংলা ভাষা তা চায়নি। সূর্য সেনরা হিন্দু-মুসলিম পার্থক্যের কথা ভাবেননি, তাদের কাছে পার্থক্যটা ছিল ইংরেজ ও ভারতবর্ষীয়দের। একাত্তরে যে জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশকে স্বাধীন করল, তা হিন্দুর নয়, মুসলমানেরও নয়, সেটি হলো বাঙালির। যুদ্ধটি দুটি আদর্শের ভেতর। একটি আদর্শ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ, অপর আদর্শ বাঙালি জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদের শত্রু যে কে, সেটিও সেদিনকার ওই যুদ্ধে খুব সামনাসামনি দেখা গেছে। শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, শত্রু হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ। পাকিস্তানি আগ্রাসনটি অনেকটা সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রেরই ছিল। আর এটিও অবশ্যই তাৎপর্যহীন নয় যে বিশ্বের সব সাম্রাজ্যবাদী দেশই তখন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে একটিও ছিল না। যে সাম্রাজ্যবাদ সেদিন বাংলাদেশকে তার অভ্যুদয়ের আগেই বিনষ্ট করে দিতে চেয়েছিল, পরে সে বাংলাদেশের সঙ্গে তার শত্রুতার নীতিতে যে কোনো পরিবর্তন এনেছে তা নয়। এবার সে শত্রুতা করেছে মিত্রের বেশে। ঋণ দিয়ে, পুঁজিবাদী নীতি চাপিয়ে দিয়ে, বাজার অর্থনীতির অংশ করে নিয়ে বাংলাদেশকে সে পরিণত করেছে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার একটি প্রান্তিক রাষ্ট্রে। জাতীয়তাবাদ উগ্র হবে বলে বাহাত্তরে আমরা কেউ কেউ যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, তার কোনো ভিত্তিই আসলে ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ যে শ্রেণির নেতৃত্বে ঘটেছে, যে শ্রেণি পরে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে, সেই শ্রেণি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার কথা ভাবে না, বরং সুযোগ খোঁজে সহযোগিতা করে দুই পয়সা কামানোর। সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের নিজেদের ব্যাপারে যত বেশি নাক গলাবে, এরা তত বেশি কৃতার্থ হবে। এই শ্রেণির ভাষা আর বাংলা থাকছে না, ইংরেজি হয়ে পড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাহলে কি বলতে হয় না, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ হয়ে গেছে? তা নয়। বিপ্লবের প্রত্যাশা এবং বিপ্লব-পরবর্তী বাস্তবতা কখনোই এক হয় না। একদিন ফরাসি বিপ্লব হয়েছে; লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। কিন্তু তাই বলে কেউ বলবেন না যে ওই বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে গেছে। সে বিপ্লব ইতিহাসে পরিবর্তন এনেছে বৈকি, তারই পথ ধরে পরে রুশ বিপ্লব হয়েছে। সেই বিপ্লব বিশ্বের নানা জায়গায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বও একসময়ে ভেঙে পড়েছে। তাই বলে বলা যাবে না সে বিপ্লবের অভিজ্ঞতা ও চেতনা হারিয়ে গেছে। না, তারা আছে। দেশে দেশে মানুষ লড়ছে বৈকি, সমাজতন্ত্রের জন্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>