<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারতীয় উপমহাদেশে আইনাঙ্গনে বিচারপতি মোর্শেদের নাম শোনেননি এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না। ইংল্যান্ডে লর্ড ডেনিং ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী বিচারক। আমার মতে, বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর দক্ষিণ এশিয়ার লর্ড ডেনিং। তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী আইনি ক্যারিয়ার ও সাড়া-জাগানো রায়গুলো তাঁকে আইনাঙ্গনে এবং আইনাঙ্গনের বাইরে ব্যাপক পরিচিত করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারপতি মোর্শেদের পুরো নাম সাইয়্যেদ মাহবুব মোর্শেদ। তিনি ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন সাইয়্যেদ আবদুস সালিক। তাঁর মা আফজালুন্নেছা বেগম ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বোন।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারপতি মোর্শেদ ১৯২৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রথম স্থান লাভ করেন। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে বিখ্যাত কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে ১৯৩০ সালে বিএ (সম্মান) এবং পরবর্তী সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে অর্থনীতিতে এমএ পাস করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে বিচারপতি মোর্শেদ আইনে উচ্চশিক্ষার্থে বিলেত গমন করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বার অ্যাট ল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ডিগ্রি লাভ করেন। উল্লেখ্য, ওই বছর ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া থেকে বার অ্যাট ল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পড়াশোনার পাশাপাশি বিচারপতি মোর্শেদ সাহিত্যকর্মে ও সৃষ্টিধর্মী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। শিশুকাল থেকেই সাহিত্যে তাঁর প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকাকালে কলেজ ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন। বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন একজন ভালো বক্তা ও বাগ্মী। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটিতে নেতৃত্ব দেন। ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রতিও তাঁর ঝোঁক ছিল। তিনি গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারপতি মোর্শেদ তাঁর আইন পেশা চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে কলকাতা হাইকোর্টে প্রথমে শুরু করেন। তাঁর মামা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সহকারী হিসেবে কাজ করার পরিবর্তে তিনি তৎকালীন প্রখ্যাত আইনজীবী শরত্চন্দ্র বসু ও এ বি খাইতামের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন। উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর তিনি ঢাকা হাইকোর্টে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালের প্রথম দিকে ঢাকা হাইকোর্টে তাঁকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচারপতি মোর্শেদ ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রবাদসম সাহসিকতা ও প্রচণ্ড সাহসী রায় তৎকালীন সরকারকে ঘাবড়ে দিয়েছিল। তাই সরকার বিভিন্নভাবে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল। কিন্তু বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও বিবেকবান মানুষ। যখন তিনি দেখেছেন তিনি বিবেক দ্বারা তাড়িত হয়ে বিচার করতে পারছেন না, তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে নিজেই পদত্যাগ করেন ১৯৬৭ সালের ১৬ নভেম্বর। পদত্যাগের পর বিচারপতি মোর্শেদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ডিফেন্সকে সংগঠিত করতে সহযোগিতা করেন। তিনি উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষভাবে যোগদান করেন। আইয়ুব খানের ডাকা রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রদের ১১ দফার পক্ষে ওকালতি করেন। তাঁর বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যারিয়ারে তিনি বহু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান প্রতিটি অংশের জন্য পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ১৫০টি আসন ছিল। কিন্তু যখন বিচারপতি মোর্শেদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কনসেপ্ট সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত হলো, তখন পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান পেল ১৬৯টি। অন্য কথায়, বিচারপতি মোর্শেদ এই রাস্তা পরিষ্কার করেছিলেন যে যে-ই পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করবে, সে-ই জাতীয় পর্যায়ে সরকার গঠন করবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্রচিন্তক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এবং ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">ahmedlaw2002@yahoo.co.uk</span></span></span></span></p> <p> </p>