<p>আমাদের গলায় প্রজাপতির মতো দেখতে যে গ্রন্থিটি রয়েছে তার নাম থাইরয়েড গ্রন্থি। এখান থেকে যে হরমোনগুলো নির্গত হয় তার মধ্যে টি৩ ও টি৪ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই থাইরয়েড হরমোন শরীরের বিপাক, বৃদ্ধি এবং অন্য অনেক কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে কোনো কারণে যদি ব্যাঘাত ঘটে, তবে তা হৃত্স্পন্দন, শক্তি স্তর, মেজাজ, বিপাক, হাড়ের স্বাস্থ্য, গর্ভাবস্থা এবং অন্য অনেক জৈবিক কাজ প্রভাবিত হয়।</p> <p>থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। যেমন—</p> <p>♦ হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হ্রাস)</p> <p>♦ হাইপারথাইরয়েডিজম (অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন)</p> <p>♦ গয়টার </p> <p>♦ থাইরয়েড ক্যান্সার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য</p> <p>থাইরয়েড হরমোনজনিত এসব সমস্যায় খাদ্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিচে হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম সমস্যায় কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং কোন খাবারগুলো খেলে ভালো হবে তা বিস্তারিত বলা হলো।</p> <p> </p> <p><strong>হাইপোথাইরয়েডিজমে যে খাবারগুলো নয়</strong></p> <p>ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবল : এসবের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, শালগম, মুলা, মুলাশাক, সরিষা, সরিষাশাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।</p> <p>সয়া ও সয়া প্রডাক্টস : সয়াবিন, সয়া মিল্ক, সয়া সস, টফু, সয়াবাদাম, সয়া চাংক ইত্যাদি।</p> <p>স্টোন ফ্রুটস : অনেক ফল আছে, যেগুলো স্টোন ফ্রুটস নামে পরিচিত। তার মধ্যে কিছু ফলে গয়োট্রোজেন উপাদান থাকে। যেমন—চেরি, এপ্রিকট, পিয়ার, রাসবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যায় এই ফলগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।</p> <p>গ্লুটেন : গ্লুটেন থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে ঠিকমতো কাজ করতে দেয় না। ফলে থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। তাই সাদা আটা-ময়দা এবং তা দিয়ে তৈরি সব ধরনের খাবার এই সমস্যায় অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।</p> <p>ক্যাফেইন : ক্যাফেইন থাইরয়েড হরমোনের ওপর সরাসরি প্রভাব না ফেললেও এটা টি-ফোর হরমোনের শোষণ কমিয়ে দেয়। ফলে থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। তাই ক্যাফেইন আছে এমন সব ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন—কফি, চা, ক্যাফেইন ক্রিম, সব ধরনের কার্বনেটেড পানীয়, যার মধ্যে বেশ উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন থাকে।</p> <p>ফাস্ট ফুড ও ভাজাপোড়া : যেহেতু হাইপোথাইরয়েডিজমের সঙ্গে অতিরিক্ত ওজনের একটি সংযোগ আছে, তাই যাদের হাইপোথাইরয়েডিজম আছে তাদের ওজন যাতে আরো বেড়ে না যায় সে জন্য সব ধরনের ডুবো তেলে ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>যে খাবারগুলো বেশি খাবেন</strong></p> <p>♦ সেলেনিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন—ব্রাজিল নাট, সামুদ্রিক মাছ ও খাবার, অর্গান মিট, আখরোট, ডিম, সূর্যমুখীর বীজ, মটর, কোকো পাউডার, ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি</p> <p>♦ প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার যেমন—লো ফ্যাট টক দই</p> <p>♦ আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার লবণ ও অন্যান্য আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার তালিকায় রাখতে হবে</p> <p>♦ গাঢ় সবুজ শাক-সবজি</p> <p>♦ ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড খাবার ইত্যাদি</p> <p> </p> <p><strong>হাইপারথাইরয়েডিজমে যে খাবারগুলো নয়</strong></p> <p>অতিরিক্ত আয়োডিনসমৃদ্ধ লবণ ও অন্যান্য লবণাক্ত খাবার যেমন—চানাচুর, চিপস, শুঁটকি, সামুদ্রিক খাবার ও সামুদ্রিক মাছ। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পনির, ডিমের কুসুম, আয়োডিনসমৃদ্ধ পানি, গ্লুটেনসমৃদ্ধ খাবার যেমন—সাদা আটা-ময়দার সব ধরনের খাবার, সয়াবিন, সয়া মিল্ক, সয়া সস, টফু, ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কফি ও চা, সোডা, চকোলেট ইত্যাদি হাইপারথাইরয়েডিজম সমস্যায় এড়িয়ে চলতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>যে খাবারগুলো তালিকায় রাখতে হবে</strong></p> <p>লো আয়োডিন লবণ, ডিমের সাদা অংশ, তাজা ফল, লবণবিহীন বাদাম, আলু, মধু, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন—শুকনা বীজ, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, টার্কি মুরগি, মাংস, গোটা শস্য, সেলেনিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার, সূর্যমুখীর বীজ, ব্রাজিল নাট, তোকমা, মাশরুম, মটর, কোকো পাউডার, বাদামের দুধ, ক্যালসিয়াম ফর্টিফায়েড খাবার, ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড খাবার, হলুদ, সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, তৈলাক্ত মাছ, গোলমরিচ গুঁড়া, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে।</p> <p>এ ছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় যে বিষয়গুলো আপনাকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো :</p> <p>♦ প্রতিদিন রাতে সঠিক সময়ে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে</p> <p>♦   পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে</p> <p>♦ সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে</p> <p>♦ মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে</p> <p>♦ আপনার চিকিৎসক দ্বারা প্রদানকৃত ওষুধ অবশ্যই সঠিক সময়ে এবং নিয়মিত খেতে হবে</p> <p> </p> <p>লেখক : পুষ্টিবিদ, পপুলার ডায়াগনস্টিক</p> <p>সেন্টার, মাইজদী, নোয়াখালী</p> <p> </p>