আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘যারা চিফ প্রসিকিউটরের পদ থেকে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন, হয় তারা সেটি না বুঝে করেছেন, নয় কোনো একটি বিশেষ মহল তাদের উসকানি দিচ্ছে।’
জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির দাবি নিয়ে সোমবার (২৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে বিক্ষোভ করেন শহীদ পরিবারের স্বজনরা। সেই বিক্ষোভ থেকে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের আদেশ নিয়ে ব্রিফ করার সময় শহীদ পরিবারের স্বজনদের দাবির বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরের প্রতিক্রিয়া জানতে চান এক সংবাদিক।
তখন তাজুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু শহীদ পরিবারের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ আছে, তাই একটি বিশেষ মহল উসকানি দিয়ে তাদের আদালতের সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আদালতের সামনে মিছিল করে বিচার করা যায় না।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, চিফ প্রসিকিউটর একজন আইনজীবী। চিফ প্রসিকিউটরের ক্ষমতা, দায়িত্ব আইন দ্বারা নির্ধারিত।
আমাদের কাছে (প্রসিকিউশনে) তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দিলে চিফ প্রসিকিউটরের কাজ শুরু হয়। তদন্ত করার কাজ সম্পূর্ণভাবে তদন্ত সংস্থার। যে কারণে তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত চিফ প্রসিকিউটর তাড়াতাড়ি করে মামলা শুনানি করতে পারেন না। প্রথমে তদন্ত শেষ হতে হবে, এরপর চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তদন্ত রিপোর্ট আসবে, চিফ প্রসিকিউটর ওইটার ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করবেন, এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। চার-পাঁচটা মামলার তদন্তকাজ শেষ হয়েছে, রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আসেনি। এখানে চিফ প্রসিকিউটরের কিছু করার নেই। যারা চিফ প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, হয় তারা না বুঝে বলছেন, নয় কোনো একটি বিশেষ মহল তাদের উসকানি দিচ্ছে।’
‘আমরা শহীদ পরিবারের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন।
তারা দ্রুত বিচার চাইবেন, এ ব্যপারে কোনো আপত্তি নেই। দ্বিমত করারও কোনো কারণ নাই। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, এই বিচারটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হতে হবে। এটা (ট্রাইব্যুনাল) মোবাইল কোর্ট না যে, আমি বললাম আসামি অমুক, আর তাকে ধরে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেব। এটার সুযোগ এখানে নেই। যেহেতু শহীদ পরিবারের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ তাদের আছে, তারা (একটি বিশেষ মহল) উসকে দিয়ে আদালতের সামনে (শহীদ পরিবারের স্বজনদের) নিয়ে এসেছেন। আমি মনে করি, এটা উচিত হয়নি। কারণ আদালতের সামনে মিছিল করে বিচার করা যায় না। তদন্ত সংস্থা যদি কাজ না করে, সরকারের কাজে যদি ধীরগতি থাকে, তাহলে সরকারের কাছে তারা দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের সামনে এসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা শোভনীয় নয়। আমরা অনুরোধ করব, এটা বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার একটা প্রচেষ্টা হবে, জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে কোথাও এটা ভালভাবে দেখা হবে না।’ -বলেন তাজুল ইসলাম।
শহীদ পারিবারগুলো তদন্ত কাজে সহযোগিতা করছে না বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) যে দুই-তিনজন শহীদ পরিবার ছিলেন (ট্রাইব্যুনালের সামনে বিক্ষোভে), তাদের প্রত্যেককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছি। এখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। হয়তো কেউ তাদের উসকানি দিচ্ছে। তা ছাড়া এরকম হওয়ার কোনো কারণ নেই। শহীদ পরিবারের অনেকেই আছেন, যাদের তদন্ত সংস্থায় গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত সংস্থাকে তারা কেউ সহযোগিতা করেন না। বক্তব্যও রেকর্ড করবে না। কোনো তথ্য-প্রমাণাদি দেবে না। শুধু বলবে আসামিদের ফাঁসি দাও। চৌদ্দ শ শহীদ পরিবারের মধ্যে এক-দেড় শ শহীদ পারিবারও তো আমাদের কাছে আসেনি। বাকি শহীদ পরিবারগুলো যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে তদন্তে সময় লাগবে। আর তদন্ত প্রতিবেদন না পেলে চিফ প্রসিকিউটর কিছু করতে পারবেন না। তদন্ত প্রতিবেদন এসে গেছে, আদালতে কোনো কারণ ছাড়া আমি সময় নিচ্ছি, শুনানি পিছিয়ে দিচ্ছি, তাহলে বলা যাবে প্রসিকিউশন টিম এর জন্য দায়ী।’
আগামীতে ট্রাইব্যুনালের সামনে এ ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন না করার আহ্বান জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আর বিচারের জন্য ভিকটিম ও শহীদ পরিবারের স্বজনদের সহযোগিতা চান তিনি।