দ্বিন পালনেই মুমিনের কল্যাণ ও সাফল্য নিহিত। দ্বিন পালনের অর্থ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য ঈমানের দাবি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগত হও ও রাসুলের অনুগত হও যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
আল্লাহর আনুগত্যে মুমিন যেসব পুরস্কার লাভ করবে
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

নিম্নে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের কয়েকটি পুরস্কার তুলে ধরা হলো—
১. আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ : অনুগত বান্দার প্রতি আছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো, যেন তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। ’( সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩২)
২. আল্লাহর ভালোবাসা লাভ : আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর আনুগত্য করে।
৩. আল্লাহর দয়া লাভ : অনুগত বান্দাদের আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর প্রিয় ও দয়াপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি কেউ আল্লাহ এবং রাসুলের আনুগত্য করে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ—যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেছেন তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী।
৪. উভয় জগতে সাফল্য লাভ : আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য মানুষের উভয় জগতের সাফল্য নিশ্চিত করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম ও তাঁর রাসুলের হুকুম মান্য করবে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭১)
৫. জান্নাত লাভ : চূড়ান্ত পুরস্কার হিসেবে অনুগত বান্দা চিরসুখের জান্নাত লাভ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশমতো চলে, তিনি তাকে জান্নাতগুলোতে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।
আল্লাহ সবাইকে তাঁর দ্বিন পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা
সম্পর্কিত খবর

আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আমল
মাইমুনা আক্তার

বান্দার সৌভাগ্যের মূল ভিত্তি হলো, আল্লাহর ভালোবাসা। যার অন্তরে মহান আল্লাহর ভালোবাসা আছে, তার আত্মা প্রশান্ত হয়। তার অন্তরে হিদায়াতের আলো প্রজ্বলিত হয়। তার দুনিয়া ও আখিরাত সাফল্যমণ্ডিত হয়।
কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসে তখন আসমানের অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যদি কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডাক দেন এবং বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক লোককে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস।
এই হাদিসটি দেখলে পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি মনে পড়ে যায়, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সত্ কাজ করে, পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে) ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৯৬)
বর্তমান যুগে চারদিকে ফিতনা ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষের মধ্যে গাফিলতি জেঁকে বসেছে, দুনিয়াবি আকর্ষণে মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তাঁর মহব্বত অর্জনের উপায় অনুসন্ধান করা।
নিম্নে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত : পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে গবেষণা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। তাই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে।
ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল আমল করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে...। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
নিজের ইচ্ছার চেয়ে আল্লাহর ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেওয়া : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যায়, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে—(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, (৩) কুফরে ফিরে যাওয়া এতটাই অপছন্দ করা, যেমন—আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬)
আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে জানা : আল্লাহর গুণবাচক নাম সম্পর্কে জানা এবং সেগুলোর অর্থ ও গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করা : কারণ আমাদের যা কিছু আছে, সব তাঁরই দেওয়া, ভালোবাসার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যে কোনো নিয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৩)
আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য গ্রহণ করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসরণ করে থাকে, তাই তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত কাকে সে বন্ধু বানাচ্ছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)

বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে না পারলে করণীয়
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

যেসব নারী-পুরুষ অতিশয় বার্ধক্যের কারণে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় উপনীত, তাদের জন্য রোজা না রাখা বৈধ।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
মাসআলা : রোজা রাখতে অক্ষম বৃদ্ধ ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করবেন।
বৃদ্ধের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়েছে, এই পরিমাণ বৃদ্ধ যে তার মধ্যে একেবারে ক্ষমতা নেই এবং মৃত্যুর নিকটবর্তী পৌঁছে গেছে, বয়সের কোনো সীমা নেই। শক্তি থাকা এবং না থাকাটাই বিবেচ্য। যতক্ষণ পর্যন্ত রোজা রাখতে পারে যদিও না কি কষ্টের সঙ্গে হয়, রোজা রাখবে। কাজা রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখা প্রয়োজন নেই।
রোজার ফিদিয়ার পরিমাণ
রোজার ফিদিয়া হচ্ছে, একজন মিসকিনকে দুই বেলা ভরপেট খাবার খাওয়ানো। মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের বেশির ভাগ আলেমের মতে, খাদ্যদানের মাধ্যমে রোজার ফিদিয়া আদায় করবে।
তবে হানাফি মাজহাব মতে, খাবারের পরিবর্তে প্রতি রোজার জন্য সদকাতুল ফিতর পরিমাণ দ্রব্য বা মূল্য দিলেও ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে।
সদকাতুল ফিতিরের পরিমাপ হলো এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম, আটা বা তার মূল্য অথবা তিন কেজি ২৭০ গ্রাম জব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ বা তার মূল্য গরিবকে দান করা।
মাসআলা : ফিদিয়া আদায় করার পর সুস্থ হলে ভাঙা রোজাগুলো কাজা করতে হবে। আগের ফিদিয়া প্রদান যথেষ্ট হবে না। তবে ফিদিয়া আদায়ের কারণে তার সওয়াব আমলনামায় থেকে যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৬৫)
মাসআলা : ফিদিয়া আদায় করার মতো কোনো সম্পদ না থাকলে তাওবা-ইস্তিগফার করবে। সেই সঙ্গে এই নিয়ত রাখা যে ‘আল্লাহ তাআলা সচ্ছলতা দান করলে ফিদিয়া আদায় করে দেব।’ অসচ্ছল অবস্থায় মারা গেলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কারণ সাধ্যের বাইরে বান্দার ওপর আল্লাহ কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৪৯, আপকে মাসায়েল : ৪/৬০২)
মাসআলা : প্রশ্ন—রমজান মাসের ফিদিয়ার টাকা যদি রমজান আসার আগেই অগ্রিম দেওয়া হয়, তাহলে কি ঠিক হবে?
উত্তর : রমজান শুরু হওয়ার আগে ফিদিয়া দেওয়া ঠিক নয়। রমজান শুরু হওয়ার পর দেবে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর বাকি সামনের দিনের ফিদিয়াও একসঙ্গে দিতে পারবে। এর বিপরীতে সদকায়ে ফিতর রমজান মাস আসার আগেও দেওয়া বৈধ; বরং কয়েক বছরের সামনের ফিতরও দিতে পারবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৬)
মাসআলা : জাকাতযোগ্য খাতে ফিদিয়া দিতে হবে। (রাদ্দুল মুহতার : ২/৭৯, ৮৫৪)
মাসআলা : ফিদিয়ার অর্থ কোনো এতিমখানায় প্রদান করা যাবে। নাবালেগ নিঃস্ব এতিমের পেছনে ব্যয় করার জন্য তার অভিভাবককে অর্থ দেওয়া জায়েজ আছে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/২৫৮, রাদ্দুল মুহতার : ২/৮৫)

সবচেয়ে লম্বা সময় রোজা রাখছেন যেসব দেশের মুসলিমরা
ইসলামী জীবন ডেস্ক

মহিমান্বিত রমজান মাসে রোজা পালন করছেন বিশ্বের শত কোটি মুসলিম। সৌর বর্ষপঞ্জির হিসাবের বিবেচনায় চান্দ্রবর্ষপঞ্জিতে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ দিন কম হওয়ায় রোজার সময়সীমায় পরিবর্তন হয়। আর প্রতি ৩০ বছরের মধ্যে গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমের মধ্যে রমজান মাস ঘূর্ণায়মান থাকে। মূলত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ এবং নিরক্ষরেখা থেকে দেশের অবস্থান অনুসারে রোজার সময়সীমায় এ তারতম্য হয়।
সবচেয়ে বেশি সময় রোজা রাখবেন যারা
এবার সবচেয়ে বেশি সময় রোজা রাখবেন গ্রিনল্যান্ডের নুউক ও আইসল্যান্ডের রেকজাভিক অঞ্চলের মুসলিমরা। তারা প্রায় ১৭ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় রোজা রাখছেন। তা ছাড়া ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি, সুইডেনের স্টকহোম, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, কানাডার অটোয়া শহরের মুসলিমরা প্রায় ১৭ ঘণ্টা রোজা রাখছেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিসের মুসলিম বাসিন্দারা ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা রোজা রাখছেন।
সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখবেন যারা
এবার সবচেয়ে কম সময় রোজা রাখছেন চিলির পুয়ের্তো মন্ট ও নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে অবস্থানরত মুসলিমরা। তারা ১২ ঘণ্টা বা এর চেয়ে বেশি সময় রোজা রাখবেন।
এদিকে আর্জেন্টিনার বুয়েনেস এইরেস ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের মুসলিমরা ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় রোজা রাখছেন।
সূত্র : আলজাজিরা

প্রতিদিনের আমল
শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তির দোয়া
ইসলামী জীবন ডেস্ক

শয়তান মানুষকে নানাভাবে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এজন্য সব সময় আল্লাহর কাছে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে এমনি একটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তা হলো-
رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَتِ الشَّيْطِينِ وَ أَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ
উচ্চারণ : রব্বি আউযুবিকা মিন হামাযাতিশ শায়াতিন, ওয়া আউযুবিকা রব্বি আনইয়াহযুরুন।
অর্থ : হে আমার রব, আমি শয়তানদের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। হে আমার রব, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, যাতে তারা আমার কাছেও আসতে না পারে। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯৭-৯৮)