<p>২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ইউরোপে ৮৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম প্রায় ছয় কোটি ৫৭ লাখ। ইউরোপের ৩০ দেশের মধ্যে ফ্রান্সে মুসলিম সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে বাস করে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার মুসলিম। দেশটির জনসংখ্যার ৮ শতাংশ মুসলিম। দেশটিতে বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা এক হাজার।</p> <p>আমেরিকার টাইমস ম্যাগাজিনের এক রিপোর্ট মতে, ফ্রান্সে মসজিদের সংখ্যা ১৯৭০ সালে ছিল মাত্র ডজনখানেক। এক রিপোর্ট মতে, ফ্রান্সে এক হাজার ৩০০ মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে এক হাজার ৬০০ ইসলামিক প্রতিষ্ঠান। দেশটিতে জাতীয় পর্যায়ে নিজস্ব রেডিও চ্যানেলও রয়েছে।</p> <p>মুসলিম জনসংখ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ বাস করে জার্মানিতে। দেশটিতে ৫৭ লাখ ২০ হাজার মুসলমান বাস করে, যা মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ। জার্মানিতে পশ্চিমা ধাঁচের যতগুলো পাবলিক স্কুল আছে, তার এক-তৃতীয়াংশের মতো মুসলমান শিশুদের জন্য। জার্মানিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটেন। এখানে জনসংখ্যার ৬.৩ শতাংশ মুসলিম, যার মোট মুসলিম জনসংখ্যা ৪১ লাখ ৩০ হাজার।</p> <p>টাইমসের রিপোর্ট মতে, ব্রিটেনে এক শরও বেশি পাবলিক স্কুলে বাচ্চাদের সিলেবাসে ইসলাম শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশে মুসলমানরা বাস করলেও উল্লেখযোগ্য হারে মুসলমানের হার বেশি নেদারল্যান্ডস, ইতালি, স্পেন ও সুইডেনে।</p> <p>আমেরিকার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, যদি অভিবাসনপ্রক্রিয়া চালু থাকে তাহলে ২০৫০ সালে ইউরোপের মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে সাত কোটিতে দাঁড়াবে। সুইডেন হবে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। সুইডেনের মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে। আর জার্মানি হবে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ এবং এই সংখ্যা হবে জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।</p> <p>একই গবেষণায় বলা হয়, অভিবাসনপ্রক্রিয়া যদি বন্ধ থাকে, তাহলে ২০৫০ সালে স্বাভাবিকভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে তিন কোটিতে, যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশের বেশি। নানা প্রতিকূলতা ও ইসলামবিদ্বেষ সত্ত্বেও ইউরোপে ইসলামের বিকাশ ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে ইসলাম ইউরোপের দ্রুত বিকাশমান ধর্ম হিসেবে পরিচিত।   </p> <p><strong>ইউরোপে ইসলামের আগমন</strong></p> <p>অষ্টম থেকে দশম শতক পর্যন্ত সময়ে উত্তর আফ্রিকায় মুরদের বিপ্লবের মাধ্যমে দক্ষিণ ইউরোপে ইসলাম প্রবেশ করে। ফলে বর্তমান স্পেন, পর্তুগাল, সিসিলি ও মাল্টায় মুসলিম জাতির বিকাশ ঘটে। সপ্তম শতাব্দীতে পারস্যের মুসলিম বিকাশের ফলে ককেশাসে ইসলাম প্রসারিত হয়। তুর্কি উসমানি সাম্রাজ্যের উত্থান ও প্রসারের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে ইসলামের আলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। বাড়তে থাকে মুসলিম জনসংখ্যা। বিশ শতকের শেষ ভাগ এবং একবিংশ শতকের গোড়ার দিকে বিপুলসংখ্যক মুসলিম পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসিত হয়। ফলে বাড়তে থাকে মুসলিম জনসংখ্যা। </p> <p><strong>ইউরোপে মুসলিমবিদ্বেষ</strong></p> <p>ইউরোপে ইসলামের প্রসার যেমন ঘটছে, তেমনি বাড়ছে মুসলিমবিদ্বেষও। মুসলিমরা সেখানে ধর্মীয়, সামাজিক ও চাকরির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার। অ্যামনেস্টির এক রিপোর্ট মতে, ইউরোপজুড়ে মুসলমানরা ধর্ম থেকে শুরু করে শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র ইউরেটা টিগানি বলেন, ‘মূলত ইউরোপের পাঁচটি দেশ তথা ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড ও স্পেনে মুসলিমদের ব্যাপারে একটা প্রবণতা লক্ষ করছি। যেমন—ধরুন মুসলিম মহিলাদের মুখ ঢাকা বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। এটা চরম বৈষম্য হিসেবে বিবেচিত।’</p> <p><strong>ইসলাম ধর্ম বিকশিত হচ্ছে</strong></p> <p>ইউরোপে মুসলিমবিদ্বেষ অব্যাহত, এমনকি বৃদ্ধি পেলেও মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ইউরোপে সবচেয়ে বেশি। নাইন-ইলেভেন ঘটনার পর সুইজারল্যান্ডে ছয় হাজার খ্রিস্টান ইসলাম গ্রহণ করেছে। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কানাডায় মুসলিম বেড়েছে কয়েক গুণ। আমেরিকার একটি স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ হবে মুসলিম। বিশিষ্ট গবেষক জন বেগস বলেছিলেন, ২০২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হবে মুসলিম। আমেরিকার আরেক গবেষণা মতে, ২০২৫ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে মুসলমান হবে ৩৫.৫ শতাংশ। বিপরীতে খ্রিস্টান হবে ২০.২ শতাংশ। ইউরোপে মুসলিম জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি দেখে প্রসিদ্ধ খ্রিস্টান পাদ্রি মাজুলিনি বলেন, ‘আগামী শতকের ভবিষ্যৎ হবে ইসলামের।’</p> <p><em>লেখক : প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি</em></p>