ইসলামে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোনো রাতে তা হতে পারে। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রাসুল (সা.) এই রাতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন।
ইসলামে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোনো রাতে তা হতে পারে। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রাসুল (সা.) এই রাতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন।
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو قَالَ "تَقُولِينَ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي"
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তাহলে আমি কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি বলবে,
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।
সম্পর্কিত খবর
ঈদের নামাজ দুই রাকাত এবং তা পড়া ওয়াজিব। এতে আজান ও ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। জুমার নামাজের মতো উচ্চ আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।
তবে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো—অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির দিতে হবে। প্রথম রাকাতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে সুরা ফাতিহা পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে রুকুতে যাবে।
ঈদের নামাজ মাঠে-ময়দানে পড়া উত্তম।
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির : ২/৭৩, আল-মুগনি : ২/১১৭)
নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই।
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির বলা ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও সানার পর তিনটি তাকবির।
দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিনটি তাকবির। এই তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে হাত উঠাতে হবে।
তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রতি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এই তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে।
নামাজের ধারাবাহিকতা এমন :
প্রথম রাকাত
১. তাকবিরে তাহরিমা। ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা।
২. সানা পড়া
৩. অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে ‘তিন তাসবিহ’ পরিমাণ সময় বিরত থাকা।
প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেঁধে নেওয়া।
৪. আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া
৫. সুরা ফাতিহা পড়া
৬. সুরা মেলানো। অতঃপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১. বিসমিল্লাহ পড়া
২. সুরা ফাতিহা পড়া
৩. সুরা মেলানো।
৪. সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। প্রথম রাকাতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া; অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।
৫. তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৬. সিজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
তারপর খুতবা। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম দুটি খুতবা দেবেন আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবেন।
নামাজ শেষে খুতবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত; তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৯, ৫৬০)
কারো ঈদের নামাজ ছুটে গেলে শহরের অন্য কোনো জামাতে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিশেষে যদি নামাজ ছুটেই যায়, তাহলে এর কোনো কাজা নেই। তবে চার রাকাত ইশরাকের নফল নামাজ আদায় করে নেবে এবং তাতে ঈদের নামাজের মতো অতিরিক্ত তাকবির বলবে না। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৬১)
ইসলামের যাবতীয় বিধান চাঁদ দেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে শরিয়ত নির্দেশিত সাক্ষীর কথা গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু কখনো কখনো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
ইসলামী শরিয়তে মাস গণনার জন্য চাঁদ দেখার যে নির্দেশনা এসেছে, তা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জনসমষ্টির জন্য প্রযোজ্য, যাদের ওপর চাঁদ উদিত হয়েছে।
এখানে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে যে নির্দেশনা এসেছে তা হলো, ‘যারা এ মাস পাবে’, অর্থাৎ সবাই নয়, বরং তারাই রোজা রাখবে, যারা চাঁদ দেখতে পাবে।
সুতরাং রমজানের রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করার সঙ্গে ব্যক্তিসমষ্টির চাঁদ দেখা শর্ত। বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে এসেছে হাদিস শরিফে।
এ হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা গোটা বিশ্বের জন্য নয়, বরং নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জন্য প্রযোজ্য।
একই দিনে রোজা ও ঈদ অসম্ভব
একই দিনে রোজা ও ঈদ পালনের ‘প্রমাণ’ হিসেবে যে হাদিস গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়, সেটির মর্ম অনেকে উপলব্ধি করতে পারেনি।
কেননা রাসুল (সা.) যাঁদের কাছে চাঁদ দেখার সংবাদ পেয়েছিলেন, তাঁরা দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে আগমন করেননি। তাঁরা মদিনার পার্শ্ববর্তী কোনো স্থান থেকেই এসেছিলেন। আর কাছাকাছি এলাকায় এক জায়গার চাঁদ দেখা অন্য জায়গার জন্য গ্রহণযোগ্য।
সুতরাং এই হাদিসের বাস্তবতা হলো, মদিনার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা চাঁদ দেখতে পাননি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী মরুভূমির মানুষ আকাশ পরিষ্কার থাকায় তা দেখতে পেয়েছিল। তাই তাদের সংবাদ রাসুল (সা.) আমলে নিয়ে রোজা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কাজেই বোঝা গেল, আলোচ্য হাদিস নিকটবর্তী এলাকার চাঁদের ব্যাপারে প্রযোজ্য। দূরবর্তী এলাকার চাঁদের ব্যাপারে নয়। এ বিষয়ে ইবনে কুদামা (রহ.) লিখেছেন, ‘যদি দুই শহরের মধ্যে দূরত্ব কম থাকে, তখন চাঁদের উদয়স্থলও অভিন্ন হবে। যেমন—বাগদাদ ও বসরা শহরের দূরত্ব কম থাকায় এক শহরে চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু হেজাজ, ইরাক ও দামেস্কের মতো এক দেশ থেকে অন্য দেশের দূরত্ব বেশি হলে প্রতিটি দেশের চাঁদের বিধান হবে ভিন্ন ভিন্ন। এক অঞ্চলের চাঁদ দেখা অন্য অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ (শরহে কাবির : ৩/৭)
জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে একই দিনে ঈদতত্ত্ব
আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ হলো, কোনো অঞ্চলের উদিত চাঁদ তার আশপাশের ৫৬০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে দেখা সম্ভব। এমন দূরত্বের অধিবাসীরা ওই চাঁদের হিসাব অনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালন করতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞান বলছে, সূর্যাস্তের পর একটি নতুন চাঁদ তার উদয়স্থলে দৃশ্যমান থাকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। সুতরাং পার্শ্ববর্তী কোনো এলাকার সময়ের পার্থক্য যদি ৩০ মিনিট হয়, তাহলে সেখানে এক দিন পরও চাঁদ দেখা যেতে পারে। (সূত্র : www.moonsighting.com)
সাহাবায়ে কেরামের যুগে ঈদ উদযাপন
সাহাবায়ে কেরামের যুগে দূরবর্তী অঞ্চলের চাঁদের খবর পাওয়ার কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু সাহাবাদের যুগেই ঘটনাচক্রে সংঘটিত হয়েছে এমন একটি ঘটনার মাধ্যমে এ বিষয়টির সুরাহা সম্ভব। বিশিষ্ট তাবেয়ি কুরাইব (রহ.) গিয়েছিলেন দামেস্কে। দামেস্ক মদিনা থেকে প্রায় এক হাজার ৯২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে শুক্রবার রাতে রমজানের চাঁদ দেখা যায়। শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হয়। কুরাইব (রহ.) রমজান মাসের শেষের দিকে মদিনায় পৌঁছলেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে অব্বাস (রা.) কুরাইব (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?’ কুরাইব (রহ.) বললেন, ‘শুক্রবার রাতে।’ ইবনে আব্বাস (রা.) জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি নিজেই দেখেছ?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমিও দেখেছি, অন্যরাও দেখেছে। সবাই রোজা রেখেছে। আমিরুল মুমিনিন মুয়াবিয়া (রা.)ও রোজা রেখেছেন।’ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কিন্তু আমরা তো শনিবার রাতে চাঁদ দেখেছি। সুতরাং আমরা আমাদের হিসাবমতো ৩০ রোজা পুরা করব, তবে যদি ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে চাঁদ দেখি, সেটা ভিন্ন বিষয়।’ কুরাইব (রহ.) জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি মুয়াবিয়া (রা.)-এর চাঁদ দেখা ও রোজা রাখাকে যথেষ্ট মনে করেন না?’ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘না, রাসুল (সা.) আমাদের এমন আদেশই করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৮৭)
এখানে লক্ষণীয় যে স্থান পরিবর্তন হওয়ার কারণে কুরাইব (রহ.)-এর মতো একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির সাক্ষ্য থাকার পরও সিরিয়ায় দেখা চাঁদের ওপর ইবনে আব্বাস (রা.) আমল করেননি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘রাসুল (সা.) আমাদের এ আদেশই করেছেন।’ আর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ ছিল, ‘স্থানীয়ভাবে চাঁদ না দেখে রোজা ও ইফতার নয়’—এই মূলনীতির অনুসরণ করা।
সুতরাং ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মাজহাব হলো, রোজা ও ঈদ পালনের জন্য নিজ নিজ এলাকায় উদিত চাঁদের ওপর নির্ভর করা। এ বিষয়ে অন্য কোনো সাহাবি তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার প্রমাণও খুঁজে পাওয়া যায় না। সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে সুদীর্ঘ ১৩০০ বছর ধরে চলে আসা চাঁদের প্রচলিত বিধানকে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় চ্যালেঞ্জ করা শুধু অজ্ঞতাই নয়, ধৃষ্টতাও?
বর্তমানে যাঁরা সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ উদযাপনের পক্ষে কাজ করছেন, তারা কি বলতে চান যে এই সুদীর্ঘকাল মুসলমানরা সঠিক সময়ে রোজা ও ঈদ পালনে ব্যর্থ হয়েছে? নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপানোর জন্য সবাইকে অজ্ঞ ভাবা সুস্থ মানুষের কাজ নয়।
একই দিনে ঈদতত্ত্ব অবৈজ্ঞানিক মতবাদ
যদি পৃথিবীতে চাঁদের দেখা মিললেই রোজা ও ঈদ শুরু করতে হয়, তাহলে চাঁদের সর্বপশ্চিমের উদয়স্থল আমেরিকার আলাস্কা অঙ্গরাজ্যকে মানদণ্ড ধরে রোজা ও ঈদ পালন করা উচিত। কারণ সেখানেই চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হয়। ইসলামী শরিয়তে এমন কোনো ইঙ্গিত কি আছে যে সৌদি আরবের চাঁদই সারা বিশ্বের জন্য মানদণ্ড হবে?
পাশাপাশি এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। কেননা প্রথম দৃশ্যমান চাঁদ অনুযায়ী সর্বত্র রোজা ও ঈদ পালন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যেমন—আমেরিকায় চাঁদ উঠেছে কি না, তা জানতে বাংলাদেশের মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ১২ ঘণ্টা। অর্থাৎ পরদিন ভোর ৬টায় জানা যাবে চাঁদের খবর। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমেরিকার আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের সময়ের পার্থক্য প্রায় ২৪ ঘণ্টা। তাহলে আমেরিকার চাঁদ ওঠার খবর নিউজিল্যান্ডবাসী জানতে পারবে পরদিন রাতে। তাহলে তাদের ওই দিনের রোজার উপায় কী!
আসলে যতটুকু অঞ্চলজুড়ে একই দিনে চাঁদ দেখা সম্ভব, ঠিক ততটুকু অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই চাঁদ দেখার বিধান সীমাবদ্ধ থাকবে—এটিই শরিয়তের বিধান। সুতরাং সারা পৃথিবীতে একযোগে রোজা পালন ও ঈদ উদ্যাপন করার মতাদর্শ কোরআন-সুন্নাহবিরোধী, কাল্পনিক, অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক
১৪৬১ সালে সৌদি আরবে সারা বিশ্বের মাজহাবের ওলামায়ে কেরাম বসেছিলেন। ওই বৈঠকে একই দিনে সারা বিশ্বে রোজা করা বা ঈদ করা সম্ভব নয় বলে তাঁরা ফতোয়া দিয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর ২০১৪ ময়মনসিংহে এ বিষয়ে একটি বাহাস (বিতর্ক) অনুষ্ঠান হয়। সেখানেও চাঁদ দেখে রোজা ও ঈদ রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়—ওই বিতর্কে সবাই এ মর্মে একমত হন যে সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা বা ঈদ করা সম্ভব নয়। (দৈনিক ইনকিলাব : ১২ অক্টোবর ২০১৪)
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। টানা এক মাস সংযমে থেকে পরিশুদ্ধ হৃদয়ে কলুষমুক্ত জীবন, পরিবার ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে একে অপরকে পরমাবেগে বুকে জড়িয়ে ধরার নামই হলো ঈদ। ঈদের দিন যেমন বিশেষ কিছু আমল আছে, তেমনি আছে ঈদের আগের রাতেও।
ঈদের আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা
পবিত্র রমজানের ইবাদতের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন্যতম একটি ইবাদত। রমজানের রোজার ভুল-ত্রুটি পরিপূর্ণতার জন্যই এটি আবশ্যক করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতর হলো নামাজের সিজদায়ে সাহুর মতো।
অর্থাৎ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সিজদায়ে সাহু যেমন এটার পূর্ণতা দেয়, তেমনি রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সদকাতুল ফিতর দ্বারা এর প্রতিকার লাভ হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা পালনকারীর জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন, যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা-কাজ পরিশুদ্ধকারী ও অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)
নতুন চাঁদ দেখা ও দোয়া পড়া
মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন—
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
ঈদের রাতে নফল ইবাদত করা
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের বার্তা যেমন নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহাসুযোগ। বিশেষত ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতমণ্ডিত। হাদিসে বর্ণিত আছে—
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দুই ঈদের রাত জেগে ইবাদতে করবে, কিয়ামতের কঠিনের দিনেও তার অন্তর মরবে না, যেদিন ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে মানুষের অন্তর মারা যাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)
সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি বা সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শায়খ উসামা আল-রিফায়ি। শুক্রবার (২৯ মার্চ) দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারায়া তাঁকে নিয়োগ দেন।
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গ্র্যান্ড মুফতির পদটি বাতিল করে তৎকালীন মুফতি আহমদ বদরুদ্দিন হুসাইনকে বরখরাস্ত করে। পরে ২০২১ সালে সিরিয়ার বিপ্লবের সমর্থক দল শায়খ আল-রিফাইকে মুফতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।
গ্র্যান্ড মুফতি নিয়োগের বিষয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারায়া বলেন, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট যেসব ক্ষেত্র ধ্বংস করেছে তা পুনরায় চালু করা আমাদের কর্তব্য। এরমধ্যে সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতির পদটি উল্লেখযোগ্য। এই পদে আজ দায়িত্ব গ্রহণ করছেন শাম অঞ্চলের সর্বোত্তম আলেম ব্যক্তিত্ব শায়খ উসামা বিন আবদুল করিম আল-রিফায়ি। তিনি কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগের প্রধানের হিসেবে ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান নিয়ে কাজ করবেন।
সূত্র : আল-জাজিরা ও দ্য নিউ আরব