<p style="text-align:justify">৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, ওই শোডাউন থেকে দ্রুত নির্বাচনের দাবিই জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারকে সহযোগিতার কথাও বলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।</p> <p style="text-align:justify">দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, কোনো অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন ঝোলানো যাবে না এবং দ্রুত তারিখ ঘোষণা করতে হবে- এটি দলের মহাসচিবসহ অন্য নেতারা অনেকটা সরাসরিই বলেছেন, যার উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের জন্য ক্রমে চাপ বাড়ানো।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে তারেক রহমান দলের কৌশল হিসেবেই গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য সরকারকে সহযোগিতার কথা বলেছেন, যার লক্ষ্য হলো সরকারকে নির্বাচন ও এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করা।</p> <p style="text-align:justify">সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য কিছু কমিশন গঠনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে এবং সেই কমিটি এখন কাজ করছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ইতোমধ্যেই বলেছেন যে নির্বাচনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">একজন বিশ্লেষক বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের এই উদ্যোগ সত্ত্বেও বিএনপির অনেকে মনে করেন যে নির্বাচনটি তাদের প্রত্যাশিত দ্রুততম সময়ে না-ও হতে পারে। সে কারণেই ৭ নভেম্বরকে উপলক্ষ করে তারা সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন। জিয়াউর রহমান সেদিন গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষা করে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।’</p> <p style="text-align:justify">১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ৩ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থান হয়েছিল। এ ঘটনায় আটক হয়েছিলেন তখনকার সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। এরপর নানা ঘটনা ও পাল্টা ঘটনার ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানে মুক্তি পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। পরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। প্রেসিডেন্ট হয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">এবার ভিন্ন পরিবেশে ৭ নভেম্বর পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করেছে দলটি। ঢাকার সমাবেশে বিপুল লোক সমাগম হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে তিন মাস হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ বা সময়সীমা সরকারের দিক থেকে না আসায় কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।</p> <p style="text-align:justify">আবার সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতার বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দেওয়া নানা বক্তৃতা-বিবৃতিও দলের দৃষ্টিতে এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">‘রাজনীতিকরা ক্ষমতায় যেতে উসখুস করছে’- একজন উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই প্রতিক্রিয়ায় তিনি মাইনাস টু ফর্মুলা (ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুই নেত্রীকে রাজনীতিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার বিতর্ক) নিয়েও সতর্ক করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">এসব কারণে শুক্রবার ঢাকায় যে সমাবেশ হয়েছে তাতে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটানো হয়েছে মূলত সরকারকেই বোঝানোর জন্য যে- ‘আরো দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি’।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘শুক্রবার বিশাল সমাবেশ ও জনস্রোত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের আকাঙ্ক্ষার বার্তা দিয়েছে এবং এখন সরকারের উচিত হবে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে এই দিনটি আমাদের পালন করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার মুক্ত পরিবেশে সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছে। এখান থেকে একটাই বার্তা দেওয়া হয়েছে- তা হলো নির্বাচনের স্পষ্ট তারিখ বা রোডম্যাপ চায় মানুষ। কারণ নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হবে না আর গণতন্ত্রের জন্যই লড়াই করেছে মানুষ।’</p> <p style="text-align:justify">শুক্রবার হওয়া এই সমাবেশটি শেষ হয়েছিল মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে। সেখানে সমাপনী বক্তৃতায় দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ‘আমাদের সামনে জাতীয় সংসদ। এত দিন মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট দিয়ে এই সংসদে জনগণের প্রতিনিধি পাঠাতে চায়। এই বার্তা আমরা দিতে চাই। এটাই এই শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য।’</p> <p style="text-align:justify">আবার এই সমাবেশের শুরুতে দেওয়া বক্তৃতায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি সংস্কারসহ সব কার্যক্রমে সরকারকে সহযোগিতার কথা সব সময় বলে আসছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে একটি অন্তর্বর্তী সরকার আনলিমিটেড সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বরং তাদের উচিত দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের দিকে যাত্রা করা।’</p> <p style="text-align:justify">যদিও সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর যে সংলাপ হবে সেখানে নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন।</p> <p style="text-align:justify">তবে এর মধ্যেই কিংস পার্টি গঠনের আলোচনা উঠে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে কমিটি করছে। তাদের কেউ কেউ আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন- এমন মন্তব্যও করেছেন বলে খবর এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রশ্নে মানুষ যে বেশি আগ্রহী সেটি বোঝানোর চেষ্টা থেকেও ঢাকা ও সারা দেশে জেলায় জেলায় শুক্রবার জন সমাগম ঘটিয়েছে দলটি- এটাও মনে করেন অনেকে।</p> <p style="text-align:justify">দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, সারা দেশে জেলাগুলোতে সমাবেশ ছিল এবং এ সত্ত্বেও ঢাকার জনসমাগম থেকে জনপ্রত্যাশার যেই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তা দ্রুত সরকারকে গণতন্ত্র উত্তরণের দিকে যেতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তারা।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সরকারকে সহযোগিতার কথা বলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক রেখে সঠিক গণতান্ত্রিক যাত্রায় যাওয়ার যে অঙ্গীকার সেটাই সমাবেশে বলা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে দেশের ক্ষমতায় না থাকলেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে মূলত বিএনপিরই কর্তৃত্ব চলছে। এর মধ্যেই চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ নানা অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু নির্বাচন বিলম্বিত হলে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখা দুরূহ হবে এবং তাতে করে দলটির বর্তমান জনপ্রিয়তার ভাটা পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে ‘তৃতীয় কোনো পক্ষ’ সুযোগ নিতে পারে- এমন আশঙ্কাও আছে দলের মধ্যে।</p> <p style="text-align:justify">রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলছেন, ‘অভ্যুত্থানের পর অনেকের মতো বিএনপিরও হয়তো ধারণা ছিল যে তিন বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে। কিন্তু এখন কারো কারো কথায় মনে হচ্ছে নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘দলটি নির্বাচন চায়। আবার সংস্কারের আগে নির্বাচনের জন্য চাপও দিতে পারছে না। আবার নির্বাচন বিলম্বিত হলে সমর্থকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগও বাড়তে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য কৌশলে চাপ বাড়ানোই হতে পারে তাদের রাজনৈতিক কৌশল।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির প্রত্যাশা ছিল দ্রুত নির্বাচন হবে। কিন্তু এখন সরকারঘনিষ্ঠ কোনো কোনো পক্ষ বলছে যে সরকার পতনে বিএনপির চেয়ে তাদের অবদান বেশি। কেউ বলছে আগে রাষ্ট্র সংস্কার হোক। আমার মনে হয়, এসব বিষয় মাথায় রেখেই শুক্রবার জনসমাগম ঘটিয়ে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের জন্য বার্তা দিয়েছে তারা।’</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : বিবিসি</p>