তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছিল। তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছিল। তাকে কপি কলে ঝুলিয়ে ওপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে তার কোমর ভেঙে দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ৮৩টি মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়। সেই মামলাগুলো এখনো শেষ হয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর হাজিরা দিতে এখনো আদালতে যেতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়া কখনো আপস করেননি। বিএনপিকে ভাঙতে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু পারেনি। একমাত্র ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ছাড়া কাউকে নিতে পারেনি। একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন করেছে তাদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। এমনকি আলেম-ওলামাদের রেহাই দেওয়া হয়নি। আমরা ভুলে যায়নি, শাপলা চত্বরে আলেম, এতিমদের নির্বিচারে হত্যা করার কথা। আমরা ভুলে যায়নি জামায়াতের ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার কথা, আমাদের নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা। তাদের কোনো অপরাধ ছিল না। তারা তো শুধু গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।’
মির্জা ফকরুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনব্যবস্থা, রাষ্ট্রের সব ইনস্টিটিউট ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৪ সালে কোনো ভোট হয়নি। ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সরকার গঠন করা হয়। আর ভোট কেন্দ্রগুলোতে কুত্তা ঘোরাঘুরি করেছে। শফিউল আলম প্রধান তখন বলেছিলেন, ওটা কুত্তা মার্কা নির্বাচন হয়েছে। ১৮ সালে ওয়াদা করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেব এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে ওই নির্বাচনে গিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করে নিয়েছিল। প্রচার করতে দিত না, আর আগের রাতে সব ভোট সিল মেরে নিয়ে গেল। এরপরের নির্বাচনের তামাশা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে ডামি প্রার্থী দিয়ে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণবিস্ফোরণে মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। ড. ইউনূস সবার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ, নোবেল পুরস্কার পাওয়া মানুষ। আমরা সবাই তাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তার নেতৃত্বে একটা সরকার গঠন করা হয়েছে। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সংস্কার করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবেন।’
অন্য দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশ আর ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন ন। কিছু কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।
সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের সহযোগিতা করব, যত দিন পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে থাকবে। তত দিন পর্যন্ত সহযোগিতা করতে চাই।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, বিএনপি ভাঙতে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। একমাত্র ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে গিয়েছে। আমরা একটি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে তাড়িয়েছি তিনি পালিয়ে গেছেন। সব শেষে তিনি এ সরকারের কাছে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ধামরাই পৌরসভার যাত্রাবাড়ী মাঠে ঢাকা জেলার বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি ও দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উন্নয়নের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানাবিধ অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে বিএনপির মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরো বক্তব্য দেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বেনজীর আহমেদ টিটু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান আমান, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সালাহউদ্দিন বাবু, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল ইসলাম, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিকুর রহমানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা প্রমুখ।