অন্য দলগুলো তাদের পলিসি নিয়ে যাবে। যেখানে জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই সরকার গঠন করবে, তারাই পার্লামেন্ট গঠন করবে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।
আমরা বলছি যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য যে ন্যূনতম সংস্কারগুলো করা দরকার, সেগুলো করতে হবে। যেমন নির্বাচনব্যবস্থা-কেন্দ্রিক যে সংস্কার। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা, এটা করতে হবে। দুই নম্বরে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, তিন নম্বরে জুডিশিয়াল রিফর্ম (বিচার বিভাগীয় সংস্কার)। এই তিনটি একেবারে মাস্ট করতে হবে। সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সেই ছয়টি কমিশনের মধ্যে বেসিক ইম্পরট্যান্ট এই তিনটি। এই তিনটি তো আমরা করতে বলেছি। এবং ইতোমধ্যে আপনারা জানেন, সরকারের প্রত্যেকটা সংস্কারের প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা কিন্তু প্রত্যেকটাই ক্লোজবাই ক্লোজ জবাব দিয়েছি এবং উত্তর দিয়েছি এবং তাদেরকে (সংস্কার কমিশনকে) অনুরোধ করেছি, এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে।
আমরা যে বিষয়ে জোর দিচ্ছি, যে জিনিসটা বুঝতে অনেকে অক্ষম হচ্ছে। বিএনপি কখনোই এ কথা বলেনি যে আগে নির্বাচন, আর তারপরে সংস্কার। এটা যদি কেউ বলে থাকে, তাহলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
আমরা বলছি, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো করা দরকার, সেটা করতে হবে। আপনারা একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন কেন?
সংস্কারের দাবি তো আমাদের। বিএনপির দেওয়া ৩১ দফার একটি হলো নির্বাচনীব্যবস্থার সংস্কার। ২০১৬ সালে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন প্রথম। সেই ভিশন ২০৩০-এ আমরা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার যে পরিবর্তনগুলো করা দরকার, সে কথাগুলো আমরা তখনই বলেছি।
এই আজকের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা উঠছে এবং সংস্কার কমিশনও বলছে, এটাই করতে হবে। এ কথা তো আমরা তখনই বলেছি। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের অধীনে ৯ মাসের মধ্যে নির্বাচন, এ কথা আমরা তখনই বলেছি। তাহলে কী বোঝা যাচ্ছে? আমরা যা বলেছি, সেগুলোই তো আসছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
পুলিশ প্রশাসন আওয়ামী লীগের ধামাধারা পুলিশ প্রশাসন ছিল। তারা যা বলত, তা-ই করত। যার ফলে প্রশাসনিক যে কনফিডেন্স, এটি তাদের কমে গিয়েছে। যার ফলে তারা যে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তারা সেভাবে নিতে পারছে না। যেটা তাদের নেওয়া উচিত।
আমাদের দলের যেটা দায়িত্ব, আমরা দল হিসেবে ইতোমধ্যে দলের কিছু কিছু ব্যক্তি, তারা কিছু কাজ করেছিলেন, যেগুলো আমরা প্রশ্রয় দিই না। সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আপনারা খুব ভালো করে জানেন, কোন কোন সংগঠনকে ভেঙে দিয়েছি, কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আমরা দল থেকে বহিষ্কারও করেছি। আমাদের যেটা রাজনৈতিক দায়িত্ব, আমার দল অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করছে। কোনো কোনো জায়গায় ব্যর্থই ঘটছে, তার বিরুদ্ধে আমরা রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিচ্ছি, শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যে কথাটা আমরা বলতে চেষ্টা করি, হয়তো বোঝাতে পারি না অথবা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বোঝেন না। বিএনপিকে টার্গেট করে একটা জিনিস সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি করে প্রচারণা করা হচ্ছে যে বিএনপি আগে নির্বাচন চায়, তারপরে সংস্কার চায় অথবা সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। আমি আপনাদের সামনে পরিষ্কার করে বলছি, এটা একটা ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করা হচ্ছে জনগণের মধ্যে। আমরা বারবার করে এ কথাটাই বলছি, আমরাই তো সংস্কারের প্রবক্তা। আমরাই সংস্কার চেয়েছি। আমরা আমাদের ৩১ দফা যেটি দিয়েছি, একটাও দেখবেন না গভমেন্টের যে সংস্কার, তার সঙ্গে কোনো অমিল আছে। হ্যাঁ, কতগুলো বিষয় আছে, সংবিধানের সংস্কারের ব্যাপার। সেখানে আমরা সুস্পষ্টভাবে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি।
কতগুলো বিষয় আছে মীমাংসিত, সে বিষয়গুলোতে আমরা হাত দিতে চাই না। এখন বলুন তো দেখি, গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে বহুত্ববাদ আমাদের দেশের কয়টা লোকে বোঝে? এ দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক কাদের? রাজনৈতিক দলগুলোর। জামায়াত, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ হোক, জাতীয় পার্টি হোক, জাকের পার্টি হোক বা ছাত্রদের সংগঠনটাই হোক, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হচ্ছে জনগণের। আর যারা এসেছেন সংস্কারের খুব জ্ঞানী মানুষ, পণ্ডিত লোক, বিশাল বিশাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। তাদের আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তারা যদি জনগণের বাইরে গিয়ে কিছু করেন পলিটিক্সে, আমরা তাদের সমর্থন করতে পারব না। জনগণ যেটা চাইবে, আমরা সেটাই সমর্থন করব! রাজনৈতিক দল নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে কাজ করে। রাজনৈতিক দল তো আকাশ থেকে উড়ে আসে না। এটা তো জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করতে হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কেউ যদি ফলো করে, তাহলে সেখানে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা যায় না। আজকে গোটা পৃথিবীতে ডানপন্থীদের একটা উত্থান ঘটেছে এবং তারাই বলছেন যে, গণতন্ত্র ইজ গইং ডাউন।
জাতিসংঘের মহাসচিব এসেছিলেন দেশে, ওনার সঙ্গে আমাদের একটা এক্সক্লুসিভ মিটিং হয়েছিল। কয়েকটা রাজনৈতিক দল এবং সংস্কার প্রধানদের। সেখানে তিনি নিজেই বলেছিলেন, গণতন্ত্র এখন খুব বিপদের সম্মুখীন। গণতন্ত্র বিভিন্ন দেশে ডানপন্থীদের উত্থান হচ্ছে, কর্তৃত্ববাদের উত্থান হচ্ছে, গণতন্ত্রের নিচে নামছে। কিন্তু তারপরেও গণতন্ত্রই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা, সুশাসনের জন্য, রাষ্ট্র পরিচালানার জন্য।