ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫
২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫
২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের দণ্ডাদেশ সরকারের জন্য লজ্জার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের দণ্ডাদেশ সরকারের জন্য লজ্জার’
মেঘনা আলম। সংগৃহীত ছবি

মডেল মেঘনা আলমকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। 

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মেঘনাকে বাসা থেকে জবরদস্তিমূলকভাবে তুলে নিয়ে নিবর্তনমূলক কালো আইনে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনা বিগত ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে মনে করিয়ে দেয়। এই ঘটনা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন ও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য লজ্জার। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এই ধরনের নিপীড়ন কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না।

তিনি বলেন, ৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নাগরিকদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী সব কালাকানুন বাতিল করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। এসব কালাকানুন বাতিলের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য গড়ে উঠেছে। এখন দুই দশক পর একজন নারীর বিরুদ্ধে এই আইনের অপপ্রয়োগ কেন- কিভাবে করা হয়েছে, তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা দরকার। 

আরো পড়ুন
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে কাঁদলেন লাখো মানুষ

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে কাঁদল লাখো মানুষ

 

তিনি আরো বলেন, ‘মেঘনা কোনো অন্যায় করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগ না দিয়ে যেভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যই লজ্জার কারণ হয়ে উঠেছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক বলেন, ‘একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্বরিত গতিতে বিতর্কমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ দেশের নাগরিক মেঘনা আলমের অধিকার রক্ষায় সরকার কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।

’ 

তিনি অনতিবিলম্বে নিবর্তনমূলক বিশের ক্ষমতা আইনে অন্তরীণ মেঘনা আলমের মুক্তি এবং ৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি জানান।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আ. লীগকে নিষিদ্ধ করাই সর্বপ্রথম সংস্কার : ববি হাজ্জাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগকে নিষিদ্ধ করাই সর্বপ্রথম সংস্কার : ববি হাজ্জাজ
সংগৃহীত ছবি

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, আমরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত হওয়া এই সরকারের দায়িত্ব ছিল টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করা। কারণ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাই সর্বপ্রথম সংস্কার।

আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন

স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ

স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ

 

ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্যতা একটি বিশেষ উদ্দেশে করা হয়েছে বলে আমরা এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই টার্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়েও আমরা পুরোপুরি একমত নই। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারে আমরা একমত হলেও আমরা মনে করি, একমাত্র নির্বাচিত সংসদই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশকৃত এনসিসির গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণভাবে একমত নই এবং প্রয়োজনে এনসিসির সব সদস্যের সম্মতিতে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করতে পারেন বলে যে বিধান রাখা হয়েছে তার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করেছি।

তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার যে সুপারিশ নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে মনোনীত করার বিষয়ে আমরা একমত নই। সংবিধানে বহুত্ববাদ সংযোজন নিয়েও আমাদের আপত্তি রয়েছে। রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের সুপারিশ যেভাবে করা হয়েছে, সেখানে জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে।

সংবিধানে মৌলিক অধিকার প্রশ্নে ভারসাম্য এবং আনুপাতিকতা পরীক্ষার যে কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়।’

আরো পড়ুন

‘শিক্ষার্থীদের নামে মামলা কুয়েট প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিফলন’

‘শিক্ষার্থীদের নামে মামলা কুয়েট প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিফলন’

 

ন্যূনতম ১০% আসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণ প্রার্থী দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে, সেটা অস্পষ্ট উল্লেখ করে ববি হাজ্জাজ বলেন, এমপি পদে নির্বাচনে বয়স কমিয়ে ২১ করাটা বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব নয়। একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান থাকতে পারবেন না বলে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখনো বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, ‘সদ্য গঠিত একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে বলে আমরা ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছি। উপজেলা জননিরাপত্তা অফিসার পদে একজন এএসপি পদমর্যাদার কাউকে নিয়োগ করার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি রয়েছে।

একই সঙ্গে আমরা প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু এবং জেলা পরিষদ বাতিলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছি। রাজধানী মহানগর সরকার চালুর যে সুপারিশ করা হয়েছে, সেখানেও আমাদের আপত্তি রয়েছে।’

মন্তব্য

কুয়েটে বহিষ্কারাদেশ থেকে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের অব্যাহতির দাবি শিবিরের

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কুয়েটে বহিষ্কারাদেশ থেকে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের অব্যাহতির দাবি শিবিরের
সংগৃহীত ছবি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ভিত্তিতে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ (১৫ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ প্রতিক্রিয়া জানান।

নেতারা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে একটি দল বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিত ও বর্বর হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাস রক্তাক্ত করে। হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনও তাদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট হামলার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও দোষীদের পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তারা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ প্রকৃত অপরাধীদের একটি বড় অংশ শাস্তির আওতার বাইরে থেকে যায় আর অনেক নির্দোষ শিক্ষার্থী অন্যায়ভাবে শাস্তির সম্মুখীন হন।

উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে, বরং অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্মম তামাশার শামিল।

নেতারা আরো বলেন, শিক্ষাঙ্গণ কোনো দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্থান হতে পারে না।

ক্যাম্পাস হবে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা প্রশাসনের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু কুয়েট প্রশাসন দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে তদন্তের নামে প্রহসনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর মনগড়া সিদ্ধান্ত আরোপ করেছে, যা স্পষ্টতই পক্ষপাতদুষ্ট, শিক্ষার্থীবান্ধব মনোভাবের পরিপন্থি এবং কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার প্রতিফলন।

আমরা ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের নামে তাদের এই মনগড়া সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, পাশাপাশি একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী বিধিমালা লঙ্ঘন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার ঘাটতি দূর করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বুধবার, চাইবে নির্বাচনী রোডম্যাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বুধবার, চাইবে নির্বাচনী রোডম্যাপ
ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আগামীকাল বুধবার বিএনপির প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করবেন।

আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুপুর ১২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মহাসচিবসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা এ সময় উপস্থিত থাকবেন।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মনে করে, এটি কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নয়। এ জন্য নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী ভাবছে কিংবা তাদের অবস্থান কী, সেটা সুস্পষ্টভাবে জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে তারা।

গত ৯ এপ্রিল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে নানামহলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট র‍োডম্যাপ চাইব।

মন্তব্য

বিএনপিকে নিয়ে এখন কী ভাবছে ভারত?

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
বিএনপিকে নিয়ে এখন কী ভাবছে ভারত?

প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা চালু আছে, যে তারা সে দেশে এতকাল ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতেই রেখেছে’ – মানে শুধু একটি দলের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক ছিল, আর সেটা আওয়ামী লীগ।

সে দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, বিএনপিকে নিয়ে ভারতের যেকোনো কারণেই হোক একটা যে ‘সমস্যা’ ছিল, সে কথাও সুবিদিত।

দিল্লিতে নেতা-মন্ত্রী-কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তি দেন অতীতে বিএনপি শাসনামলের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য তেমন ভাল ছিল না বলেই দু-পক্ষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

আবার উল্টোদিকে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য, তারা বাংলাদেশে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী এবং যেকোনো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায় – কিন্তু তাই বলে তাদের ভারতবিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনো যুক্তি নেই।

এই বাস্তবতার পরও এটা ঘটনা, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রথমবারের মতো ভারতের ক্ষমতায় আসে, বিএনপির তরফে সম্পর্কের এই শীতলতা দূর করার একটা সক্রিয় উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

সম্ভবত বিএনপির ধারণা ছিল, যে কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রায় ঐতিহাসিক একটা সুসম্পর্ক রয়েছে, তাদের শাসনের অবসানের পর দক্ষিণপন্থী বিজেপির সঙ্গে বিএনপির মধ্যে একটা নতুন সমীকরণের সূচনা হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে তাতে দিল্লির দিক থেকে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া মিললেও শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্কও কিন্তু সেভাবে দানা বাঁধেনি। উল্টোদিকে প্রায় রেকর্ড সময়ের মধ্যে জমাট বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদী আর শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ বা ব্যক্তিগত রসায়ন, মজবুত হয়েছে দুই সরকারের সম্পর্ক।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভারতের ‘চোখ বন্ধ করে’ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থনের ঘটনাও দিল্লির প্রতি বিএনপির অবিশ্বাসকে বদ্ধমূল করেছিল।

কিন্তু ২০২৪-র ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে যে নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটে গেছে, সেই ঘটনাপ্রবাহ বিএনপি-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে একটা বাঁকবদলের অবকাশ তৈরি করেছে নিঃসন্দেহে!

আরো পড়ুন
তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

 

দিল্লিতে রাজনীতি, নিরাপত্তা বা কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতের দিক থেকেও বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে কোনো অসুবিধা থাকার কারণ নেই।

যেহেতু কোণঠাসা আওয়ামী লীগের চট করে রাজনৈতিক কামব্যাকের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে – তাই খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

এই পটভূমিতে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের প্রেক্ষাপট ও আগামী দিনের সমীকরণের রূপরেখা কী হতে পারে, সে দিকেই নজর দিয়েছে এই প্রতিবেদন।

‘কথাবার্তা মোটেই বন্ধ ছিল না’
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার (২০১৯-২০২০) রিভা গাঙ্গুলি দাস অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, বিএনপির সঙ্গে ভারতের এতকাল কোনো যোগাযোগ ছিল না, এই কথাটা মোটেও ঠিক নয়।

‘দেখুন এটা একটা ভুল ধারণা! এই ধারণাটা তৈরি হওয়ার কারণ আওয়ামী লীগ একটা খুব লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল। তো ওই পুরো সময়টা আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট লেভেলে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ডিল করব, তাই না?’

আরো পড়ুন
নববর্ষের আনন্দে বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি

নববর্ষের আনন্দে বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি

 

‘কিন্তু তার মানে এই না যে অন্য কোনো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আমরা ডিল করতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না! বরং ভালোই ছিল।’

তিনি বিবিসি বাংলাকে আরো বলছিলেন, ‘আমি নিজে হাই কমিশনার হিসেবে অনেকবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি, বহুবার তাদের বলেওছি যে আপনারা ক্ল্যারিফাই করুন ভারতের প্রতি আপনাদের পলিসিটা ঠিক কী ... তো এরকম কনভার্সেশন আমাদের অনেক হয়েছে।’

রিভা গাঙ্গুলি দাস আরো জানাচ্ছেন, তখন সেখানকার তরুণ পার্লামেন্টারিয়ানদের যে ডেলিগেশন ভারতে আসত, তাতে বিরোধী দল ও বিএনপি-র এমপিরা সব সময় থাকতেন।

‘কাজেই এটা বলা ভুল যে আমরা ওদের সঙ্গে কথাই বলতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না!’ তবে বিএনপির সঙ্গে ভারতের যে ঠিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, এ কথাটা দু-দেশে সকলেই জানেন ও মানেন।

আরো পড়ুন
ঢাকার গরম নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

ঢাকার গরম নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

 

প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী যখন ২০১৪তে দেশের ক্ষমতায় আসেন, তার পরেও বেশ কয়েক বছর দিল্লিতে ১১ নম্বর অশোকা রোডের ঠিকানাতেই ছিল বিজেপির সদর দপ্তর ... তখন বাংলাদেশ থেকে বিএনপির নেতারা সেখানে একাধিকবার এসেছেন।

তখন দলে অত্যন্ত প্রভাবশালী রাম মাধব-সহ বিজেপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিরা আলাপ-আলোচনাও করেছেন, এমন কী ঢাকায় দুর্গাপুজো দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুতেই কিছু হয়নি, দুপক্ষের সম্পর্ক সেভাবে স্বাভাবিক হয়নি কখনওই!

হিন্দুদের সুরক্ষাই দিল্লির অগ্রাধিকার
আজ কিন্তু বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেকে সে দেশে অন্য কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ইস্যুটিই সবার আগে টেনে আনছেন।

বিজেপির সিনিয়র নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, ‘ওপার বাংলায় যারা ঘোষ-বোস-দত্ত-মিত্র গুহঠাকুরতারা আছেন, যারা গুপ্তা-জয়সওয়াল আছে, যারা মতুয়া আছে, বৌদ্ধ আছে - তারা তো আমাদের রক্ত, আমাদের ভাই!’

‘কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে আজকে সমস্ত হিন্দু যদি ভারতবর্ষে চলে আসতে বাধ্য হয় এবং এটাকেই তাদের ডেস্টিনেশন মনে করে – তাহলে সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পক্ষেও কাঙ্ক্ষিত নয়!’

‘তো সে জায়গা থেকেই আমরা চাই যে বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক, বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক।’

আরো পড়ুন
প্রবল বাতাস ও ঝড়ের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি বন্ধ

প্রবল বাতাস ও ঝড়ের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি বন্ধ

 

‘তো মানুষ যাকে চাইবে সেখানকার দেশের, তারা তাকে বেছে নেবে – কিন্তু মৌলবাদ থেকে সরতে হবে’, বিবিসিকে বলছিলেন শমীক ভট্টাচার্য।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সেখানকার হিন্দুরা ভারতে চলে আসতে পারেন এমন একটা কথা বিজেপি নেতাদের প্রায়শই বলতে শোনা গেছে, যদিও বাস্তবে তেমন কোনও ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি।

তবে বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দাবিতে ভারতের নানা প্রান্তে লাগাতার বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলছেই।

এই পটভূমিতেই ভারতের বিজেপি নেতারা পরিষ্কার বলছেন, বাংলাদেশে বিএনপি বা অন্য যে কোনও দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থাপনের মূল ভিত্তিটাই হবে ক্ষমতায় এলে তারা সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছেন কি না, সেটা!

‘ভারত বিরোধিতার রাজনীতি’র কী হবে?
দীর্ঘদিন ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে কাজ করেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রসিকতা করে বিএনপিকে ডাকে ‘ভারতে নারাজ পার্টি’ নামে!

আরো পড়ুন
জাবির মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

জাবির মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

 

আসলে ভারতের সাউথ ব্লকে একটা বিশ্বাস আছে যে বিএনপির ডিএনএ-তেই আছে ভারত বিরোধিতার রাজনীতি, আর দলটার রাজনৈতিক উত্থানের পেছনেও এর একটা বড় ভূমিকা আছে।

বিএনপি অবশ্য বলে থাকে বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা কখনওই তাদের নীতি ছিল না, তারা চায় ভারতের সঙ্গে একটি মর্যাদা ও সম্মানের সম্পর্ক।

এই অবস্থানকে যে নামেই ডাকা হোক, বিএনপি তাদের সেই পুরনো রাজনীতি থেকে এখন কতটা সরবে তা নিয়ে কিন্তু সন্দিহান দিল্লিতে অনেক পর্যবেক্ষক।

ভারতের সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা শান্তনু মুখার্জি ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন বহুদিন ধরে। মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন, বাংলাদেশও তার আগ্রহের ক্ষেত্র।

সেই মি মুখার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, "দেখবেন পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ বিএনপির এখন অনেক বেড়ে গেছে। এখন মনে রাখতে হবে ভারতের বিরুদ্ধে তারেক রহমান বলেছিল যা কিছু চুক্তি হয়েছিল সেগুলো বাতিল করা যাক, আবার খতিয়ে দেখা যাক!"

আরো পড়ুন
খুলনায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

খুলনায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

 

‘এইটা একটা হচ্ছে। এগুলো ইলেকটোরাল জিনিস হচ্ছে, কেন না ক্ষমতায় আসতে চায়, পনেরো বছর ক্ষমতায় ছিল না – এগুলো তাই ইলেকশনের ব্যাপার, আমি এইভাবে দেখছি।’

‘দ্বিতীয়ত এর পরে ওর মা, খালেদা জিয়া, যার অনেক ক্যারিশমা আছে, তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন লন্ডন থেকে চিকিৎসার পরে। আর দেশে যখন এসে যাবেন, তিনিও ক্যানভাসিংয়ে যোগ দেবেন অবধারিতভাবে – তখন পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হবে।’

শান্তনু মুখার্জির আরও বিশ্বাস, "তখন খালেদা জিয়া যে বক্তৃতাগুলো দেবেন ভারতের বিরুদ্ধে, পাবলিক সেন্টিমেন্টটা দেখে … আমার এই ধারণা যে ভারতের বিরুদ্ধে ওনারা বলবেনই ... কেন না ওনাদের ধারণাতে ভারতকে যত ডিসক্রেডিট করা যাবে তত ওদের ভোটের পার্সেন্টেজটা বেড়ে যাবে!"

কিন্তু ভোটের সময় বিএনপি যে রাজনীতিই করুক, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে তাদের প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে অনেক 'বাস্তববাদী' মনোভাব নিতে হবে বলেই ভারতে অনেকে মনে করেন।

আর সেই বিশ্বাসটাও দু'পক্ষের মধ্যে এখন থেকে একটা সম্পর্কের সেতু গড়ার কাজ করে রাখছে।

রিভা গাঙ্গুলি দাস যেমন বলছিলেন, "আবার এখন যখন বাংলাদেশের রাজনীতিটা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, তখন আমার মনে হয় বিএনপির পক্ষ থেকে যদি খুব স্পষ্ট করে শোনা যায় ভারতের প্রতি তাদের পলিসিটা কী, র‍্যাদার দ্যান বারবার এক একটা ইস্যুতে আলাদা করে রিঅ্যাক্ট করার জায়গায় ... তাই বিএনপি তাদের নীতিটা পরিষ্কার করে বললে অবশ্যই একটা কমফর্টের জায়গা তৈরি হতে পারে!"

আরো পড়ুন
খুলনায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

খুলনায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

 

জামাতের সঙ্গে দূরত্ব ভারতের জন্য ‘সুযোগ’
ভারতের দিক থেকে সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণেও বিএনপি-র সঙ্গে দিল্লির এখন একটা সম্পর্ক স্থাপনের ভাল সুযোগ তৈরি হয়েছে – কারণ দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াত-ই-ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে।

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলছিলেন, "ডেফিনিটলি জামায়াত আর বিএনপির মতবিরোধগুলো এখন খুব স্পষ্ট। ওনাদের একজন বড় নেতা এটাও বলেছেন যে কোনও অ্যালায়েন্স হওয়া সম্ভব না।"

"তো আমি নিশ্চিত যে এই ডেভেলপমেন্টগুলো ভারত সরকার নিজেদের তরফ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং অ্যাসেস করছে!"

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরের কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার এমনিতে কোনও কারণ নেই – তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অবশ্যই কিছুটা ভিন্ন!

আরো পড়ুন
এক এগারোর কুশীলব ও সৃষ্টির নেপথ্যে

এক এগারোর কুশীলব ও সৃষ্টির নেপথ্যে

 

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় গিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন, এমনও নজির আছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তখনকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় গিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন, যে সফর নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি।

এরপর থেকে ভারত যদিও প্রকাশ্যে অন্তত বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখারই চেষ্টা করে, কিন্তু জামায়াত বা ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে ভারতের আপত্তি একেবারেই কোনও গোপন বিষয় নয়।

বিজেপি এমপি শমীক ভট্টাচার্য যেমন সরাসরি বলছেন, "তবে আমরা স্পষ্টতই জামাতের যে চিন্তাভাবনা, তালেবানেইজেশনের যে কনসেপ্ট তার ঘোরতর নিন্দা করি। এটার যে বিরোধিতা করে যাওয়া, সেটা আমরা করছি এবং করেও যাব!"

ভারতের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা এখনও একান্ত আলোচনায় পরিষ্কারই বলছেন আগামী দিনে বিএনপি-র সঙ্গে তাদের যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান 'শর্ত' হতে হবে জামায়াতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সঙ্গ তাদের ত্যাগ করতেই হবে।

আরো পড়ুন
এক এগারোর কুশীলব ও সৃষ্টির নেপথ্যে

এক এগারোর কুশীলব ও সৃষ্টির নেপথ্যে

 

‘সিকিওরিটি কনসার্নগুলো অ্যাড্রেস করতে হবে’
বিএনপি ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় অস্বস্তির জায়গাটা হল ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনা।

ভারত বিশ্বাস করে সে সময় আলফা-সহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢালাও আশ্রয় পেয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলফার জন্য ট্রাকে করে অস্ত্র পাচারের ঘটনাও এই সময়কারই।

ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ রিভা গাঙ্গুলি দাসের কথায়, "আমার মনে হয় ভারতের মাথায় এটাও থাকবে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়কার রেকর্ডটা!"

"সেটা তো একটা সময় ছিল যখন এমন অনেক কিছুই হয়েছে যেগুলো ভারতের সিকিওরিটির দিক থেকে ও ভারতের 'কোর কনসার্ন'গুলোর ক্ষতিই করেছে! তো সেই রেকর্ডটাও কিন্তু আছে!"

আরো পড়ুন
চট্টগ্রামে সিআরবি মালিপাড়া বস্তিতে ভয়াবহ আগুন

চট্টগ্রামে সিআরবি মালিপাড়া বস্তিতে ভয়াবহ আগুন

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি আবার মনে করেন, নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে বিএনপি-র সেই পুরনো রেকর্ড 'অবশ্যই বদলাতে পারে' এবং ভারতও তখন উপযুক্ত সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে।

মি মুখার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, "দেখুন, পূর্বদিকে তারা আমাদের খুব ইম্পর্ট্যান্ট নেইবার, আমরা প্রতিবেশী দেশ। সম্পর্ক সব সময়ই ভাল ছিল ১৯৭১ থেকে ... তো যে কেউই সেখানে নির্বাচিত হয়ে আসুক আমার মনে হয় যে ভারতের দিক থেকে তাদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক থাকবেই! থাকতেই হবে!"

"আসলে এটা তো মিউচুয়াল কনসার্ন ... ওদেরও যেমন ভারতকে দরকার, তেমনি আমরাও চাইব একটা সুস্থ পরিবেশে আমরা থাকি।"

"ফলে আমাদের নিরাপত্তার জিনিসগুলোকে যদি অ্যাড্রেস করে দেয়, আমাদের ওদের এগেইনস্টে যাওয়ার মানে হয় না … কোনও কারণ দেখছি না আমি", বলছিলেন শান্তনু মুখার্জি।

অন্যভাবে বললে ভারতের পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি 'প্রশ্রয়' না পায় কিংবা ধরা যাক চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুবিধা বহাল থাকে, বিএনপির সঙ্গে 'ডিল' করতেও ভারতের কোনও সমস্যা নেই!

আরো পড়ুন
আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে : টিউলিপ

আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে : টিউলিপ

 

নির্বাচনের আগে কোনও দলের সঙ্গেই সম্পর্ক নয়!
তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, ভারত কিন্তু এখন স্থির করেছে নির্বাচনের আগে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলের প্রতিই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হবে না, বা থাকলেও অন্তত সেটা প্রকাশ করা হবে না।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারে বারেই বলছে, তারা চায় বাংলাদেশে একটি ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) ও পার্টিসিপেটরি (অংশগ্রহণমূলক) নির্বাচন – যাতে সব দল ও মতের মানুষ ভোটে লড়ার সুযোগ পায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকেও ঠিক এই বিষয়টির ওপরেই জোর দিয়েছেন এবং সে দেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে একরকম তাগাদা দিয়েছেন।

এই মুহুর্তে ভারতের কৌশলটাই হল – বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে চাপ দেওয়া এবং তাতে যারাই জিতে ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ তৈরির পথ প্রস্তুত করে রাখা।

এই প্রেক্ষাপটেই বিজেপির রাজ্যসভা এমপি শমীক ভট্টাচার্য বিবিসিকে বলছিলেন, "আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তার বেশি থাকবে। এটাই কাঙ্ক্ষিত ও এটা হওয়াই স্বাভাবিক।"

"এখন তাদের যে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, তাদের দেশের ভেতরকার যে নিজস্ব ইন্টারনাল ফিউড – এর মধ্যে তো কোনও দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না, এবং সেটা কাম্যও নয়! সে জন্য ভারতও সে ক্ষেত্রে ওটা করেনি।"

আরো পড়ুন
সমুদ্রে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

সমুদ্রে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

 

"কিন্তু এর মধ্যেও যেটা মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে কোনও বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্ক করাটা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধাজনক নয় – কারণ তাহলে একজন 'বিগ ব্রাদার' পার্শ্ববর্তী একটা ছোট দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছে এই ভুল বার্তাটা সারা পৃথিবীতে চলে যাবে", বেশ সতর্কতার সুরেই বলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপির এই পার্লামেন্টারিয়ান।

ফলে বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত যখনই হোক, তার আগে বিএনপি-র সঙ্গে ভারতের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা দেখা যাবে এই সম্ভাবনা আসলে নেই বললেই চলে।

কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিয়ে ভারত যে বিএনপিকে ইতিমধ্যেই ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করেছে তাতেও কোনও ভুল নেই।

এখন নির্বাচনে তারা কেমন ফল করে, ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের জায়গাগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করে এবং জামায়াত সম্বন্ধে কী মনোভাব নেয় – তার ওপরেই নির্ভর করছে এই নতুন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ