<p style="text-align:justify">গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের করা অসম বিদ্যুৎ চুক্তির ফলস্বরূপ, এখন দেশবাসীকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শুরুর দিক থেকেই এই চুক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর, বিশেষ করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহচর গৌতম কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ফলে যে আর্থিক চাপ পড়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ঢাকার বাতাস আজ খুবই অস্বাস্থ্যকর, তালিকায় তৃতীয়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/14/1731562232-6575830aadafecff4352ac3f5f9302a0.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ঢাকার বাতাস আজ খুবই অস্বাস্থ্যকর, তালিকায় তৃতীয়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/14/1446493" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এখন, এই চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ আমদানি করতে গিয়ে কিছু অসঙ্গতি সামনে আসছে, যার ফলে দেশের জনগণ শুল্ক ফাঁকির খেসারত দিচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এখন একদিকে বাড়তি শুল্ক, আরেকদিকে উচ্চহারে সুদ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>চুক্তির কারণে দেশের স্বার্থের ক্ষতি</strong><br /> আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আদানি গ্রুপের সাথে যে চুক্তি করা হয়েছিল, যা ছিল দেশের স্বার্থবিরোধী। বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশের পক্ষে এটি ছিল একধরনের ক্ষতিকর চুক্তি। এতে বাংলাদেশ অতিরিক্ত দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এর পাশাপাশি, আদানি গ্রুপ নিয়মিত বিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে এবং একাধিক ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="টঙ্গীতে কারখানায় আগুন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/14/1731562124-d82319912041449cd31bdb7e7569d171.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>টঙ্গীতে কারখানায় আগুন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/14/1446492" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">হাসিনা সরকারের পতনের পর এই চুক্তির নানা সমস্যা সামনে আসতে শুরু করেছে। একদিকে যেখানে পিডিবি তাদের দায় পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে, অন্যদিকে আদানি গ্রুপ অতিরিক্ত পাওনা দাবি করে যাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ</strong><br /> কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সময় শুল্ক ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য পিডিবি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।</p> <p style="text-align:justify">বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো ধরনের পণ্য আমদানি করার সময়, সেটি কাস্টমসের শুল্ক-আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। কিন্তু আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে তা হয়নি। রহনপুর কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি হলেও, সেখানে কোনো বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়া হয়নি। ফলে, পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ এবং আইনের প্রতি হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা এই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চোরাচালানের কথা বলছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আখক্ষেতে পড়ে ছিল অটোরিকশা চালকের মরদেহ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/14/1731561828-7151184986aed9f8f418938930271d37.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আখক্ষেতে পড়ে ছিল অটোরিকশা চালকের মরদেহ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/14/1446490" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪২ ডলারের বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে। এ বিদ্যুতে মোট ৩১ শতাংশ শুল্ক-কর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে রয়েছে ৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং ৫ শতাংশ আগাম কর। তবে, আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতির কোনো আদেশ দেয়া হয়নি। ফলে, ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ ডলার শুল্ক-কর পাওনা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমান।</p> <p style="text-align:justify"><strong>চুক্তির আইনি অবস্থা</strong><br /> পিডিবি জানিয়েছে, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সরকারের যে বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা অনুযায়ী শুল্ক-কর মওকুফ করার জন্য তারা ২০২২ সালের মার্চে এনবিআরের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু এনবিআরের পক্ষ থেকে কোনো শুল্ক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসে আবারও এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তবে সেসব চিঠির কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তাপমাত্রা বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/14/1731561257-45fca35bf2e29ddb2e49305da1c813d6.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তাপমাত্রা বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/14/1446486" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তবে পিডিবি কর্তৃপক্ষের দাবি, আদানির বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক-কর মওকুফের বিষয়টি চুক্তির ১২তম অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে। তবে এনবিআরের অনুমোদন না নেওয়ায় শুল্ক-কর আদায়যোগ্য ছিল এবং তা পরিশোধের প্রয়োজন ছিল।</p> <p style="text-align:justify"><strong>অনিয়মের প্রক্রিয়া</strong><br /> আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত, এবং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসতো মনকষা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে। তবে, যেখানে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বিশেষ অনুমোদিত কাস্টমস স্টেশন থাকার কথা, সেখানে তা ছিল না। এর ফলে, কাস্টমস আইন ২০২৩ অনুযায়ী বিদ্যুৎ আমদানির রুট অননুমোদিত ছিল।</p> <p style="text-align:justify">কমিটি জানায়, যে রুট দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে, সেটি কাস্টমস আইনের আওতায় অনুমোদিত নয়। ফলে, পিডিবি কর্তৃপক্ষের কাছে শুল্ক-কর পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে, এবং কাস্টমস আইনের ৯০ ও ৯১ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তাপমাত্রা বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/14/1731561257-45fca35bf2e29ddb2e49305da1c813d6.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তাপমাত্রা বাড়বে না কমবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/14/1446486" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, কোনো পণ্য আমদানি করার সময় বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে এটি করা হয়নি, ফলে এটি অবৈধ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে, পিডিবি কর্তৃপক্ষকে শুল্ক-কর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">পিডিবি জানায়, আদানি পাওয়ার তাদের কাছে জুন মাস পর্যন্ত ৮০ কোটি ডলার দাবি করেছে, যা অক্টোবরের শুরুতে ৮৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তবে, পিডিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই দাবির সাথে একমত নয় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চলছে।</p> <p style="text-align:justify">ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, আদানির সঙ্গে করা চুক্তিটি ছিল অত্যন্ত অসম। এই চুক্তির শর্তগুলো দেশের জনগণের জন্য ক্ষতিকর এবং এর কারণে দেশকে ২৫ বছরে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হতে পারে। এভাবে, হাসিনা-আদানির অসম চুক্তির ফলে, শুল্ক ফাঁকির খেসারত হিসেবে বাংলাদেশি জনগণ বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।</p>