<p>পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কথা। গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমল তখন। ওই আমলে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা লস্কর পরাগল খাঁ ও তার ছেলে ছুটি খাঁ নির্মাণ করেন। চট্টগ্রামের  মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় স্থাপনাটি। প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্থান পেয়েছে এটি।</p> <p>ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের পশ্চিম পাশে মসজিদটির অবস্থান। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে মাত্র পাঁচ শ গজ উত্তরে। স্থানীয় ছুটি খাঁ দীঘির পূর্ব পাড়ে।</p> <p>আহমদ মমতাজের 'মিরসরাইর ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি' গ্রন্থে মসজিদটি সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন লস্কর পরাগল খাঁ। পরবর্তীতে তাঁর ছেলে ছুটি খাঁ। গৌড়ের শাসনকর্তা রুকুনুদ্দীন বরবাক শাহের শাসনামলে পরাগল খাঁর পিতা রাস্তি খাঁও চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন। পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁর শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসন কেন্দ্র ছিল পরাগলপুর। এসময় এখানে বেশ কয়েকটি দীঘি ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।</p> <p>জানা গেছে, ছুটি খাঁ মসজিদের মূল নকশা বহুদিন আগে ভেঙে  পড়ে। পরে নতুনভাবে তা নির্মাণ করা হয়। তবে মূল মসজিদের বেশকিছু ছোট-বড় পাথর ও শিলালিপি পাওয়া যায়। পুরনো মসজিদের কিছু নিদর্শন (ধ্বংসাবশেষ) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।</p> <p>আহমদ মমতাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মসজিদের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথর ও শিলালিপি দেখে বিভিন্ন সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেছেন পঞ্চদশ শতাব্দীতে এ মসজিদটি নির্মাণে ভারতের রাজস্থান বা অন্যান্য প্রদেশ থেকে পাথর ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়। </p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষ্ণবর্ণের নানা নকশা ও আকৃতির পাথরগুলো মসজিদ প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখনো। মসজিদের ভেতর একাধিক শিলালিপি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি শিলালিপিতে পবিত্র কোরআন শরীফের আয়াতুল কুরসি লেখা আছে।</p> <p>দেখা গেছে, ছুটি খাঁ মসজিদ লিপি খোদিত পাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত ছিল। সেগুলো এখনো পড়ে আছে বর্তমান মসজিদের আঙিনায়। এসব লিপি তোগরা হরফে কোরআনের নানা আয়াত ও আরবি দোয়া। তবে ঐতিহাসিক মূল্যবিশিষ্ট কোনো লিপি পাওয়া যায়নি এখানে।</p> <p>জানা যায়, ছুটি খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে। তবে এর প্রতিষ্ঠাতা পরাগল খাঁ নাকি ছুটি খাঁ, তার কোনো লিখিত সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। নির্মাতা যেই হোন, এ মসজিদটি অদ্যাবধি পাঁচ শ বছর ধরে এ অঞ্চলের শাসক, পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা ও আরাকানি অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক ছুটি খাঁর স্মৃতি হিসেবে টিকে আছে।</p> <p>স্থানীয়রা জানায়, প্রতি শুক্রবার ও ঈদের সময় বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ও মসজিদ প্রাঙ্গণে। শত শত মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন।</p> <p>মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, ছুটি খাঁ মসজিদ দেশের একটি প্রাচীনতম স্থাপত্য। এটি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোনো  উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় সাধারণ নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে মেরামতের কারণে এর মূল নকশা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনো সময় আছে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার।</p> <p>জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকসুদ আহম্মদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটি দেশের প্রত্নতত্ত্ব ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আগেই এটি সংরক্ষণ করা।' </p>