<p>প্রকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের কারণে চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে সৈকতের ঝাউবনের গাছও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও বেশি উচ্চতার জোয়ারে সৈকতের প্রায় দুই শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। তবে সমুদ্র সৈকতের চর ও ঝাউগাছ রক্ষায় বনবিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা নেই বলে জানান স্থানীয়রা।</p> <p>এদিকে, স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু সমস্যা হবে। আনোয়ারা উপজেলার বেড়িবাঁধের কাজ শেষে সৈকতসহ নতুন করে ১৭ হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা।</p> <p>সোমবার (৭ জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পারকির ১ কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক গাছ পড়ে আছে। আরো কিছু গাছ পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে গাছগুলো রক্ষায় কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। জাহাজ আটকে থাকার সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে পলি মাটি জমে গেছে। সাগরের জোয়ারে পানির ধাক্কায় ঝাউগাছের গোড়া থেকে বালু সরে গেছে। যার ফলে সৌন্দর্য্য হারিয়ে বিলীনের পথে সৈকত।</p> <p>বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপকূলকে রক্ষায় পারকি সৈকত ও আশপাশ এলাকায় ১৯৯৩-৯৪ এবং ২০০২ সালে পর্যায়ক্রমে ৮০ হেক্টর জায়গাজুড়ে ঝাউবিথি রোপণ করে বনবিভাগ। আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে লাগানো এ গাছগুলো বড় হয়ে ওঠলে পরবর্তীতে পারকি পর্যটন এলাকা হিসেবে রূপ লাভ করে। বর্তমানে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এ সৈকত। এটি আধুনিকায়ণে সরকার ৩৮.০২ একর জমি অধিগ্রহণ করে ৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দের উন্নয়ন কাজ করছে। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ১৬৮ মিটার দৈর্ঘের ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ নামক বিশালাকৃতির জাহাজটি এসে আটককে যায় পারকির চরে। এরপর থেকেই সাগরের ঢেউয়ে সৈকতের বালি সরে কাঁদামাটিতে পরিণত হয়ে বিলীন হচ্ছে ঝাউগাছগুলো।</p> <p>স্থানীয় বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ বলেন, জাহাজটির কারণে সৈকতের ক্ষতি হচ্ছে। পলি জমে নষ্ট হচ্ছে সৈকতের পরিবেশ। ভাঙনের কারণে সৈকত এলাকা ছোট হয়ে আসছে। পারকির আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভেঙে যাচ্ছে এবং বিলীন হচ্ছে গাছগুলো। ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, সৈকতে আটককে থাকা জাহাজটি যথাযথ নিয়ম মেনে দ্রুত সৈকত থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত। না হলে ধীরে-ধীরে একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে এ পারকি সৈকত।</p> <p>চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের বন্দর বিট কর্মকর্তা মো. হান্নানুজ্জামান জানান, সাগরের ঢেউয়ে ও ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজের কারণে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে উপড়ে পড়া গাছগুলো চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই এসব গাছ নিলামে বিক্রি করা হবে। সৈকতের পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত গাছ রোপণ করলেও সেগুলো থাকবে না।</p>