<p> ফুটবল কানায় কানায় জীবন যেমন ভরিয়ে দেয়, তেমনি ডুবিয়েও দেয়। ফ্রান্সের সাবেক স্ট্রাইকার ডেভিড ত্রেজেগে নিজের জীবন থেকে পেয়েছিলেন এই শিক্ষাই। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জেতা এই ফুটবলার দুই বছর পর ফ্রান্সের হয়ে জিতেছিলেন ইউরোও। কিন্তু ২০০২ সালে পরের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে তাঁদের বিদায়টা ছিল চূড়া ছোঁয়ার পর পাদদেশে আছড়ে পড়ার মতো ব্যাপারই। চার বছরের মধ্যে উত্থান-পতনের চূড়ান্ত দেখে ছাড়া ত্রেজেগে তাই কান্নাজড়ানো কণ্ঠে <img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/14-01-2025/2/kalerkantho-sp-1a.jpg" height="231" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/14-01-2025/2/kalerkantho-sp-1a.jpg" style="float:left" width="250" />জীবনের ওঠা-নামা ভাষায় প্রকাশ করেছিলেন এভাবে, ‘দারুণ এক গল্পের সমাপ্তি, যা ১৯৯৮ সালে শুরু হয়েছিল আর শেষ হলো আজ। ফুটবলের ধর্মটাই এমন।’</p> <p>ক্রিকেটও কি একই ধর্ম মেনে চলে? গোটা ক্যারিয়ারে শুধুই উত্থানের সিঁড়ি ভেঙে চলা সাকিব আল হাসানের পড়ন্ত বেলার দিনলিপির সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পেতেই পারেন। তিন সংস্করণেই দীর্ঘদিন শীর্ষ অলরাউন্ডারের অদৃশ্য মুকুট মাথায় পরে থাকা ক্রিকেটারকে কিনা প্রায় ২০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষাব্দে এসে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হলো। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে অতি মানবীয় পারফরম্যান্সে কট্টর সমালোচকদেরও মুখ বন্ধ করে দেওয়া ব্যাটারকে চোখের সমস্যাও গত বেশ কিছুদিন ব্যাটিংয়ে কম ভোগায়নি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নিজের দেশে ফিরতে না পারার নিয়তি সাকিবের এত দিনের ‘পিকচার পারফেক্ট’ জীবনের ছবিটাকেও ধূসর করে দিয়েছে কী অবলীলায়! শুধুই ব্যাটার পরিচয় এখন আর তাঁকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা পাওয়ার বিবেচনায়ও তুলে আনতে পারে না। ক্রিকেট মাঠে অনেক কিছুই নিজের সাধ্যসীমায় নামিয়ে আনা পারফরমারের জীবনে এখন যেন শুধুই বিরুদ্ধ স্রোতের বৈরী ঝাপটা।</p> <p>সেটি সামলে তাঁকে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে দেখার সম্ভাবনাও তাই আর অবশিষ্ট দেখছেন না অনেকে। এঁদের অন্যতম বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ বরং ব্যথিত এভাবে সাকিবকে বিদায় নিতে দেখায়, ‘হয়তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেই সে বিদায় নিত। সেটি তো আর হলো না। তবে ব্যথা থেকে গেল। একজন বীরের বিদায় বীরোচিতই হওয়া উচিত। আমাদের আর কোনো ক্রিকেটার তো কোনো দিন বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে যায়নি। সাকিব শুধু যায়নি, অনেক দিন সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পতাকা উড়িয়ে গেছে।’ সাকিবের বিদায় নিয়ে অবশ্য ভিন্নমতও আছে। আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার যেমন মনে করেন, ‘সাকিব চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। ওর মতো পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার বিশ্ব ক্রিকেটেই বিরল। এখনকার বাস্তবতায় তেমন কাউকে পাওয়া কঠিনও। ও নিজে যেহেতু শেষ বলে দেয়নি, আমিও শেষ বলে দিতে চাই না। তবে হ্যাঁ, ওর উজ্জ্বল ছবিটা একটু মলিন তো হয়েছে অবশ্যই। শেষবেলায় বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা ওর সঙ্গে একদমই বেমানান।’ স্থানীয় কোচ মিজানুর রহমান বাবুল চাননি সাকিবের সুন্দর গল্পের সমাপ্তিটা এভাবে হোক, ‘সাকিবের ব্যাপারটি কষ্টকর। সবাইকেই থামতে হয়। সে-ও একদিন থামত। তাই বলে এভাবে? ওর শেষটা সুন্দরভাবে হলেই ভালো লাগত।’</p> <p>শেষ হোক বা না হোক, দারুণ এক গল্পের ধূসর সমাপ্তিরেখায় দাঁড়িয়ে নতুন এক অপেক্ষাও শুরু হয়ে গেছে মাহমুদ-হাবিবুলদের। কিসের অপেক্ষা? সেটি পরের সাকিবকে পাওয়ার। হাবিবুল নিশ্চিত, ‘আরেকজন সাকিবকে পেতে অনেক অনেক দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।’ মাহমুদের বিশ্বাস পাওয়া যাবেই, তবে, ‘জানি না যে আরেকটা সাকিব কবে পাব। নিশ্চয়ই একদিন না একদিন পাওয়া যাবে। আমি সেই অপেক্ষায় থাকলাম।’</p> <p style="text-align:center"><img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/14-01-2025/2/kalerkantho-sp-1a.jpg" height="175" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/14-01-2025/2/kalerkantho-sp-1b.jpg" width="1000" /></p> <p> </p>