এবার ঈদ বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদাসহ কয়েকটি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। তবে এলাচের দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায়। ৫০ থেকে ১০০ টাকার নিচে খুচরা বিক্রেতারা এখন এলাচ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।
তাঁরা বলছেন, পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে তাঁরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং মসলার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ ঘিরে দেশের বাজারে এলাচ ছাড়া অন্য কোনো মসলার দাম নতুন করে বাড়েনি। জিরাসহ কয়েকটি মসলার দাম কিছুটা কমেছে বলেও বিক্রেতারা জানান।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে খুচরায় প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকায়।
জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, লবঙ্গ কেজি এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৬০০, দারচিনি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০, কালো গোলমরিচ কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০, কিশমিশ কেজি ৭০০ থেকে ৮০০, পেঁয়াজ কেজি ৩৫ থেকে ৪০, দেশি রসুন কেজি ১০০ থেকে ১২০, আমদানি করা রসুন কেজি ২৩০ থেকে ২৪০, দেশি আদা কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুয়াতেমালা, ভারতসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান এলাচ উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ফলন কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর দাম বেড়েছে। এ ছাড়া শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করা ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এলাচের আমদানি আশানুরূপ হয়নি।
আমদানির তথ্য থেকে এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন ছাড়া দেশে মসলার বার্ষিক বাজার এখন ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এই বাজারের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। দেশে এলাচের বার্ষিক চাহিদা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন। খাদ্যপণ্য ছাড়াও ওষুধ, কনজিউমার পণ্য উৎপাদনে এলাচের ব্যবহার হয়।
কারওয়ান বাজারের মাসুদ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মাসুদ রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার ঈদ উপলক্ষে এলাচ ছাড়া অন্য সব মসলার বাজার স্থিতিশীল। এলাচের দাম বাড়তে বাড়তে এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে।
’
রামপুরা কাঁচাবাজারের মেসার্স মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এলাচের কেজি ছয় হাজার টাকা শুনে ক্রেতারা অবাক হয়ে যান। বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে। যাঁরা আগে ১০০ গ্রাম নিতেন, তাঁরা এখন ৫০ গ্রাম বা ২৫ গ্রাম নিচ্ছেন। তবে রোজার ঈদ উপলক্ষে এলাচ ছাড়া অন্যান্য মসলার দামে কোনো অস্থিরতা নেই।’
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত সোমবারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ছোট আকারের এলাচের খুচরা দাম কেজি চার হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এক বছর আগে এলাচের দাম ছিল তিন হাজার ৫০০ টাকা। বাজারে বড় আকারের এলাচের দাম আরেকটু বেশি। খুচরা বাজারে বড় আকারের প্রতি কেজি এলাচ সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির বাজারদরের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়, যা গত বছরের এই সময় ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। লবঙ্গর কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত। দারচিনি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি এলাচের শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। আগে কেজিপ্রতি শুল্ক ছিল সাড়ে সাত ডলার। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ ডলার। যার কারণে গত এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দাম আরো বেড়ে এলাচের কেজি মানভেদে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়লে এলাচের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।