ঢাকা, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
৭ চৈত্র ১৪৩১, ২১ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
৭ চৈত্র ১৪৩১, ২১ রমজান ১৪৪৬

যশোরে খেজুরগাছের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গাছিরাও

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে
জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে
শেয়ার
যশোরে খেজুরগাছের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গাছিরাও

দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। এরই মধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলায় গাছিদের মধ্যে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহের তোড়জোড়। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও জেলার সবখানে খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা খেজুরগাছ থেকে শীত মৌসুমে জেলার কয়েক হাজার গাছি রস ও গুড় উৎপাদন করেন।

এতে তারা যে অর্থ উপার্জন করেন, তাতে তাদের বছরের অর্ধেক সময়ের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।

বিভিন্ন কারণে খেজুরগাছ কমে গেছে। আগে যেমন উপজেলার প্রায় প্রতিটি ঘরে রস-গুড় উৎপাদন হতো, এখন কৃষক খেজুরের রস উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অধিক পরিশ্রম হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কৃষকের মধ্যে রস-গুড় উৎপাদনে তেমন আগ্রহ নেই।

এর ফলে খেজুরগাছ থাকলেও গাছির সংকটে সব গাছ উৎপাদনে নেওয়া হয় না। শীত এলে গাছিরা প্রস্তুতি নেন। খেজুরগাছের উপরিভাগের নরম অংশে কিছুটা কেটে বা চেঁছে রস নামানো হয়। গাছ সাধারণত পূর্ব ও পশ্চিম দিক করে কাটা হয়, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি ওই কাটা অংশে পড়তে পারে।
একবার গাছ কেটে দুই-তিন দিন রস পাওয়া যায়। 

\"\"

যশোরে প্রায় ১৬ লাখ খেজুরগাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গাছে রস উৎপাদন হয়। যশোরে যেমন কমছে খেজুরগাছ, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছি সম্প্রদায়ও। এসব সংকটে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে খেজুরের রস।

আর বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এ রসের স্বাদ, পাটালি গুড় বা রসে ভিজানো পিঠা-পায়েস খাওয়ার আনন্দ।
একসময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। 

জেলা-উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অসংখ্য খেজুরগাছ ছিল। তখন প্রতিটি গ্রামে গড়ে আট থেকে ১০ জন পেশাদার গাছি পাওয়া যেত। এখন আর সেদিন নেই। গাছিদের পেশা বদল, নতুন করে এ পেশায় কেউ না আসার কারণে প্রতি গ্রাম তো দূরে থাক, কয়েক গ্রাম খুঁজলেও একজন পেশাদার গাছির সন্ধান মিলবে না।

শার্শা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, খেজুরগাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আগে খেজুরগাছের যেসব বাগান ছিল, এখন আর তা অবশিষ্ট নেই। নতুন করে এখন আর কেউ বাগান করছে না। 

মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অল্প-বিস্তর যেসব গাছ আছে, তারও বেশির ভাগ পড়ে আছে। অল্প কিছুসংখ্যক খেজুরগাছ কাটা হয়েছে। অনেকে বলছেন, আগে শীত এলে গ্রামে গ্রামে খেজুরের রসে ভেজানো ‘রসের পিঠা’ খাওয়ার যে ধুম পড়ত, তা এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। 

উপজেলার বাহাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বলেন, নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে যশোরে খেজুরগাছ বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়। খেজুরগাছ জ্বালানি হিসেবে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। অন্যদিকে খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় এই গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত গাছিরা চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।

যেসব গাছ অবশিষ্ট আছে, সেগুলো এখন গাছির অভাবে পড়ে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই গ্রাম-বাংলা থেকে হারিয়ে যাবে খেজুরের রস। দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাবে পাটালি গুড়। 

বেনাপোলের ছোট আঁচড়া গ্রামের গাছি কোরবান আলী (৬০) বলেন, 'আগে শীতকালে শত শত গাছ কাটিছি। অনেক রস পাতাম। রস বাজারে বিক্রি করতাম। জ্বালিয়ে গুড় বানাতাম। গুড় পাটালি বাজারে বিক্রি করতাম। শীত আসলিই বেশ টাকা আয় করতাম। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই দিন কাটত। কিন্তু এখন এলাকায় তেমন একটা খেজুরগাছ নেই। যা আছে তা মালিকরা নিজেদের জন্য কাটাচ্ছে। তাই কাজ না পেয়ে গাছিরাও অন্য পেশায় চলি যাচ্ছে।

ভবারবেড় গ্রামের গাছি ইউনুচ আলী জানান, শীতকালে আগে শহর থেকে মানুষ দলে দলে আসত খেজুরের রস খেতে। সন্ধ্যায় গ্রামীণ পরিবেশ খেজুরের রসকে কেন্দ্র করে জমে উঠত। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ করা যেত সেই সময়ে। এখন আর তেমনটি লক্ষ করা যায় না। তবে খেজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যায়।

কাগজপুকুর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন জানান, তিনি এবার ১০০ খেজুরগাছ প্রস্তুত করেছেন রস নেওয়ার জন্য। দুই-তিন মাসের রস-গুড় বিক্রির অর্থ দিয়ে তার বছরের পাঁচ-ছয় মাস সংসার চলে। তিনি আরো জানান, খেজুরগাছ প্রস্তুত করার পর খেজুরের যে পাতা পেয়েছেন, সেগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি আকর্ষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি করবেন। এগুলো বাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ আয় করার কথা জানান তিনি।

শার্শার শ্যামলাগাছি গ্রামের গাছি আমিনুর রহমান জানান, বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে একসময় হয়তো এলাকায় গাছ দেখা যাবে না। এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে কৃষকের বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো এবং তা পরিচর্যা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

প্রায় ৪০ বছর খেজুরগাছ কেটে রস বের করছেন সামটা গ্রামের গাছি উজির আলী (৭২)। প্রবীণ এই গাছি বলেন, খেজুরগাছ কেটে এখন আর পেট চলে না। বয়স হয়েছে, তাই গাছির পেশা ছেড়ে দিয়েছি।

বেনেখড়ি গ্রামের আবু জাফরের ছেলে আবু হানিফ (৪০) বলেন, তাঁর বাবা একজন পেশাদার গাছি ছিলেন। বাবার কাছ থেকে খেজুরগাছ ছোলা শিখেছেন হানিফ। 

তিনি বলেন, খেজুরগাছ ছোলা কঠিন ও কষ্টের কাজ। সাত-আট বছর ধরে কাজটি আমি করছি। তবে বাবার মতো আর পেশাদার হিসেবে নয়। শৌখিন গাছি হিসেবে অল্প কিছু গাছ কেটে রস বের করছি।

উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের শাহাজান কবির বলেন, পাঁচ বছর আগেও আমাদের প্রায় ৫০-৬০টি খেজুরগাছ ছিল। তখন অনেক রস পেতাম। বাড়িতে গুড় বানাতাম। কিন্তু গাছির অভাবে আমরা আর রস উৎপাদনে যেতে পারিনি। এখন কিনেই খাওয়া লাগে। গাছগুলোও বিক্রি করে দিয়েছি।

যশোরের শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রতাপ মণ্ডল বলেন, উপজেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ৫২ হাজার ২৮০টি। এর মধ্যে মোট ফলন্ত (রস দেওয়া) গাছের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫২০টি। 

তিনি বলেন, খেজুরগাছ কেটে রস বের করা একটা শিল্প। কিন্তু সেই শৈল্পিক পেশাদার গাছি এখন তো চোখেই পড়ে না। গাছির অভাবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় না। আর টাকার লোভ দেখিয়ে এই অনাবাদি খেজুরগাছগুলো অবৈধ ইটভাটার মালিকরা কেটে নিয়ে যান।

নতুন করে গাছ রোপণ কম, অনাবাদি পড়ে থাকা, অনাগ্রহ, ভেজাল গুড় তৈরিসহ নানা কারণে যেমন খেজুরগাছ হ্র্রাস পাচ্ছে, তেমনি খেজুরগাছ কমে যাওয়া, রস ও গুড়ের ঐতিহ্য হারানোর কারণে গাছিও কমে যাচ্ছে। এর মধ্যেও উপজেলায় ৪৬০ জন গাছি এখনো টিকে আছেন বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। 

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, জেলায় প্রায় ১৬ লাখ খেজুরগাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গাছে রস উৎপাদন হয়। এসব খেজুরগাছ থেকে বছরে পাঁচ কোটি লিটারের বেশি রস উৎপাদিত হয়। এই রসে বছরে গুড় উৎপাদিত হয় প্রায় ৫২ লাখ কেজি। যার মূল্য শত কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে জেলায় ১৩ হাজার ১৭৩ জন গাছি রয়েছেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিলের মাছ ধরা নিয়ে সরিষাবাড়ীতে বিএনপির দুই পক্ষের উত্তেজনা

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
বিলের মাছ ধরা নিয়ে সরিষাবাড়ীতে বিএনপির দুই পক্ষের উত্তেজনা
সংগৃহীত ছবি

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সরকারি একটি বিলের মাছ ধরা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দিনভর দফায় দফায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসত বাড়িসহ মাছ ধরার নৌকা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষই অস্ত্রের মহড়া দেখিয়েছেন।

দুপুর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় পাল্টাপাল্টি অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে তালতলা এলাকায় সরকারি একটি বিলের মাছ ধরা নিয়ে জেলা বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও মহাদান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল ও মহাদান ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের (লিটন) মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আব্দুল আউয়ালের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই বিলে মাছ ধরতে যান।

এ সময় ইসমাইল হোসেনের লোকজনও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া দেন।

এরপর থেকে থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে মহড়া চলে। এরপর উভয় পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের কয়েকটি দোকানপাট, বসতবাড়ি ও মাছ ধরার নৌকা ভাঙচুর করেন।

বিএনপি নেতা আনোয়ার উস সাদাত লাঞ্জু, ইসহাক মেম্বার, ইসমাইল হোসেন লিটনসহ অনেকেই অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা বিএনপির জলাবায়ু বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আওয়াল ও তার ভাই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত।

এর প্রতিবাদ করলে তার সমর্থকরা আমাদের লোকজনের দোকানপাট ও বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আনোয়ার উস সাদাত লাঞ্জু, ইসমাইল হোসেন লিটন, ইসাহাক আলীর একটি পক্ষ সরকারি তালতলার বিল থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বিএনপি সর্মথিত জেলে হাসমত আলী, মিজানুর রহমান মিজানসহ অনেক জেলে বঞ্চিত হচ্ছে।’ বঞ্চিত জেলেরা মাছ ধরতে গেলে উল্টো তাদের ওপর হামলা চালায় বলে দাবি তার।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই ওই ইউনিয়ন দুইটি পক্ষের মধ্যে পারিবারিক রেষারেষি হয়ে আসছিল।

আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকেই বুঝিয়ে শান্ত করেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দলীয় পর্যায়ের কোনো ঘটনা এটি নয়।’

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরিষাবাড়ী ও সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বন্যহাতির মৃত্যু

শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বন্যহাতির মৃত্যু
শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত হাতিটি। ছবি : কালের কণ্ঠ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত ১১টার দিকে বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যহাতিটি কৃষকের আবাদ করা বোরো ধানক্ষেত রক্ষায় পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা গেছে।

শেরপুর বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী হাতি মৃত্যুর ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, স্থানীয় জিয়ারুল নামে এক কৃষক ধান ক্ষেত রক্ষায় জেনারেটরের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।

তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন বন বিভাগের লোকজন। সেই সঙ্গে ইআরটি (এলিফেন্ট রেসপন্স টিম) সদস্যরাও গেছেন।

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মধুটিলা রেঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসে। স্থানীয় কৃষকরা আবাদ করা ফসল রক্ষার জন্য জমির চারপাশে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে বৈদুুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। এতে ভয়ে বন্য হাতির দল ধানক্ষেতে আসে না।

বৃহস্পতিবার সন্ধার পর প্রায় ২০টি বন্যহাতির একটি দল পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগর এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা জিয়ারুলের বোরো ধানের ক্ষেতে খাবারের সন্ধানে হানা দেয়। একপর্যায়ে ক্ষেতের পাশে থাকা বৈদ্যুুতিক লাইনের স্পর্শে এলে একটি হাতি বিদ্যুৎস্পর্শে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

মন্তব্য

ঝোপখালী পাখির চর অনেকটাই অজানা

স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা)
স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা)
শেয়ার
ঝোপখালী পাখির চর অনেকটাই অজানা
ছবি: কালের কণ্ঠ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিন দিন যখন দক্ষিণের জনপদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় ঠিক সেই সময়ে বরগুনার বেতাগীর বুকে জেগে ওঠা নতুন নতুন চর।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের বিষখালী নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি চর; স্থানীয়দের কাছে ‘ঝোপখালীর চর’ নামেই এটি পরিচিত। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এখানকার জীববৈচিত্র্য। রয়েছে পাখির অভয়ারণ্য।

চরের ভেতরে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে ছোট ছোট ৫ থেকে ৭টি নালা। মৎস্য প্রজাতি ধ্বংসের মাঝেও এসব নালায় রয়েছে সুস্বাদু প্রজাতির মাছ।

নদীর মাঝে জেগে ওঠায় জোয়ারের সময় চরটি পানিতে প্রায় পরিপূর্ণ থাকে। নৌকায় করে উপভোগ করা যায় এখানকার পাখির কলতান ও চরের সবুজের সমারোহ।

যা সহজেই সকলকে আকৃষ্ট করে।

বিষখালী নদীর বুক চিরে আগামী দশকে এখানে আরো ভূমি জেগে ওঠার আশা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। নদীর অব্যাহত ভাঙনে এখনকার ব্যাপক পরিমাণ ভূমি যেভাবে বিলীন হচ্ছে, তেমনিভাবে চারপাশে যেভাবে চর জেগে উঠছে তা আশাই জাগাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এই চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা অনেকের কাছেই অজানা।

দেড় লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি পৌরসভাসহ বেতাগী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ২৫ একর আয়তনের উল্লেখযোগ্য চরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষখালীর নদীর মাঝে জেগে ওঠা ‘ছোট ঝোপখালীর চর’।

এসব চরের অধিকাংশই বেদখলে রয়েছে। তবে এসব চরের সমভূমিতে জনবসতি গড়ে ওঠার পাশাপাশি চাষাবাদ, নতুন নতুন বনায়ন করতে পারলে নদীর ভাঙন কিছুটা রোধ পাবে। স্থানীয়দের দাবি, এজন্য  প্রশাসনের উদ্যোগ জরুরি।

2

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের জেলা সন্বয়কারী হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি ঘেষেই প্রচুর সম্ভবনাময় এ স্পটটি এখনো উন্মোচিত হয়নি।

দেশ তো দূরের কথা এমনকি এলাকার মানুষের কাছেই অনেকটাই অজানা রয়েছে।’

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, ‘মানুষকে সচেতন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগী করে তুলতে পারলে এখানে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠবে। এ থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে।’

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ‘পাখিদের আশ্রয়স্থল ঝোপখালী চরকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া অবৈধ দখলে থাকা খাস জমিগুলো উদ্ধার করে ভূমিহীনদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’

মন্তব্য

মহেশপুরে বিএনপি কর্মী হত্যা, অভিযোগ জামায়াতের দিকে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
শেয়ার
মহেশপুরে বিএনপি কর্মী হত্যা, অভিযোগ জামায়াতের দিকে
ছবি: কালের কণ্ঠ

ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জাফর হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সামন্তা গ্রামের জীবননগর পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জাফর হোসেন ওই গ্রামের মৃত জবেদ আলীর ছেলে। জাফর স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ উদ্দিন মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আছি। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জাফরকে হত্যার পেছনে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন।

কাজীড়বেড় ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতা সাইদুর রহমান জাফরকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন।

পরে জামায়াতের নেতা আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি দল তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। সে সময় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।’

যদিও অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামায়াত নেতা সাইদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে বিএনপি কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ