<p style="text-align:justify">সরকারি চাকরিকালীন শুল্ক ফাঁকি, ঘুষ ও দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদ বানানোর অভিযোগে সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে রংপুর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই কারণে তার ভাই শাহজাদার বিরুদ্ধেও অভিযোগপত্র দিয়েছে সংস্থাটি।</p> <p style="text-align:justify">গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশন, রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গতকাল রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আদালতে শুনানি শেষে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, কাস্টমসে চাকরি করার সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালে এক ব্যক্তি দুদুকে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে রংপুর দুদকের কর্মকর্তারা ছায়া তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিষয়টি দুদকের হাইকমান্ডকে জানানো হয়। তাদের নির্দেশে ২০২৩ সালের ১৬ মে দুদকের রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক নূরে আলম সিদ্দীক বাদী হয়ে আলাউদ্দিন মিয়া ও তার ভাই শাহজাদার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">দুদুক সূত্রে জানা যায়, আলাউদ্দিন মিয়া আয়কর রিটার্নে ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত সম্পদ অর্জন ও দায়দেনা নাই মর্মে ঘোষণা করেছেন। ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আলাউদ্দিন মিয়ার আয়কর রিটার্নের ৪ কোটি ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৮০৬ টাকা এবং কর পরিশোধসহ পারিবারিক ব্যয় ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭০ টাকা দেখিয়েছেন। ২০১৭-১৮ করবর্ষের পূর্ববর্তী নিট আয় ছিল, ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ১২৪ টাকা। এই অর্থ তার কর্মজীবনে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে পেয়েছেন বলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া ২০২২-২৩ করবর্ষে রংপুর নগরীর বিনোদপুর মৌজায় ৩৭ শতক জমি হেবা মূলে গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করে আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, আলাউদ্দিন মিয়ার ভাই মো. শাহজাদা ২০২০-২১ করবর্ষে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩২ হাজার ১৭৮ টাকা ও ২০২১-২২ করবর্ষে ৯৩ কোটি ৬৫ লাখ ৬৩ টাকাসহ মোট ২ কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৪১ টাকা বৈধ দেখিয়ে জমি ক্রয় করেন এবং পরের বছর আলাউদ্দিন মিয়াকে হেবা মূলে দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">সূত্রটি জানায়, আলাউদ্দিন মিয়ার গ্রহণযোগ্য আয় ৩ কোটি ৪ লাখ ২ হাজার ৮০৬ টাকা। পারিবারিক ব্যয় বাদে গ্রহণযোগ্য সঞ্চয় পরিমাণ ২ কোটি ৬০ লাখ ২৭ লাখ ৩৩৬ টাকা। ওই সঞ্চয়ের বিপরীতে আলাউদ্দিন মিয়ার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ৮ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৪ টাকা। সুতরাং আলাউদ্দিন মিয়ার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৩০৮ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে তার ভাই মো. শাহাজাদা আয়রকর রিটার্ন ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ হতে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত মোট আয়ের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৬ টাকা। এর মধ্যে পারিবারিক ব্যয় দেখিয়েছেন ৪৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৩ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, শাহজাদা ১৯৯৩ সালের ২ জানুয়ারি জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কাশেম গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি.-এ চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে কর্মরত থাকলেও চাকরি জীবনের ৩০ বছরে তিনি বেতন পেয়েছেন ১ কোটি ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮০ টাকা। বোনাস পেয়েছেন ৮ কোটি ৪ লাভ ৮৮০ টাকা। ইনক্যাশমেন্ট সুবিধা পেয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজার ৪০০ টাকা। প্রভিডেন্ট ফান্ড জমার পরিমাণ ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮২ টাকা। তার মোট আয় ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪২ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৮২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৯ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">তার পারিবারিক ব্যয় ৪৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৩ টাকা। আয় ব্যয় শেষে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ১০৬ টাকা। কিন্তু মো. শাহজাদার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩০০ টাকা। সুতরাং মো. শাহজাদার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৮ লাখ ১৯৪ টাকা। যা তিনি তার ভাই মো. আলাউদ্দিন মিয়ার থেকে হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে দুদুক নিশ্চিত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, দুদক আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৩০৮ টাকা ও তার ভাই মো. শাহজাদার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ১৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থের খোঁজ পেয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে আলাউদ্দিন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মামলা হলে আদালত থেকে কাগজ তুললে বিষয়টি জানতে পারব।’</p> <p style="text-align:justify">দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আলাউদ্দিন মিয়া চাকরিকালীন শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ অর্জন করেছেন বলে তদন্তকালে প্রতীয়মান হয়েছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি।’</p>