<p>লাল শাপলার বিল। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নিচে বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রংতুলির আঁচড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পানির ওপরে লাল গালিচা বিছানো রয়েছে। এক পলক দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মুগ্ধতা ছড়ানো এ শাপলার বিলটি অবস্থিত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ উত্তরপাড়া গ্রামে, তিস্তা নদীর তীরের ডানে, প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে।</p> <p>লাল শাপলা বিলটি শুধু সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত নয়, এখান থেকে শাপলা তুলে রংপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে এলাকার কিছু দরিদ্র পরিবার। ডিসেম্বর মাসে শীতের শুরুতে বিলের পানি কমে যায় এবং শাপলা গাছও মরে যায়। সে সময় কৃষকেরা এখানে বোরো ধান চাষ করেন। একই জমিতে ধান ও শাপলার এই সহাবস্থান উত্তরাঞ্চলের আর কোথাও দেখা যায় না। বিলটি গঙ্গাচড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। রংপুর মহানগরী থেকে অটোরিকশা যোগে বুড়িরহাট হয়ে সরাসরি এখানে যাওয়া যায়, এ ছাড়া গঙ্গাচড়া উপজেলা সদর থেকেও বালারঘাট হয়ে সরাসরি অটোরিকশায় যাওয়া সম্ভব।</p> <p>এ বিলটি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং এর বর্তমান আয়তন প্রায় ২৫ একর। বিলের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। ১৮ বছর আগে এই বিলের সৃষ্টি হয়। আগে এই বিলটি ‘উত্তরপাড়া বিল’ নামে পরিচিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি ‘লাল শাপলা বিল’ নামে পরিচিত। গ্রামীণ প্রকৃতির মধ্যে শাপলার এই অবারিত রঙিন রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে। সাধারণত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফুটে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পর্যটক ফুটন্ত লাল শাপলা ফুল দেখতে আসেন।</p> <p>সম্প্রতি সরেজমিনে বিলে গিয়ে স্থানীয় যুবক জাহিদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, শুনেছেন বিলের একটি অংশের মালিক জমসের আলী। ১৮ বছর আগে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেক চিকিৎসার পরও তার অসুখ ভালো হয়নি। এক সময় এক কবিরাজ তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং তার চিকিৎসায় প্রয়োজন হয় লাল শাপলার। জমসের আলী অনেক খুঁজে একমাত্র একটি লাল শাপলা সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। শাপলার শালুক দিয়ে তৈরি ওষুধ খাওয়ানো হলে, তার স্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা ঘটে। ভবিষ্যতের প্রয়োজন চিন্তা করে জমসের আলী তার বাড়ির পাশে বিলে শাপলা গাছটি পুঁতে রাখেন। এর পর থেকে ফুলগুলো বেড়ে গিয়ে কয়েক বছরেই প্রায় ১০ একর জমি লাল শাপলার বিলে পরিণত হয়। এইভাবে বিলে বাড়তে বাড়তে ১৮ বছরে এর আয়তন ২৫ একর জায়গা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।</p> <p>এ বিল থেকে শাপলা তুলে রংপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন আব্দুর রহমান। তার বাড়ি রংপুর নগরীর বাহাদুর সিং এলাকায়। আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি পায়ের পানি জমার সমস্যায় ভুগছেন। এর ফলে তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না। তবে প্রতিবছর তিন মাস ধরে তিনি এই বিল থেকে লাল শাপলা তুলে বিক্রি করেন। ফুল বিক্রি করে তিনি দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন, যা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান।</p> <p>এ সময় স্থানীয় কৃষক ছকমেল, ইসলাম উদ্দিন, শাহিন, মজমুল, বাবুসহ অনেকে জানান, লাল শাপলা বিলের মালিকেরা সবাই কৃষক শ্রেণির লোক। তারা নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তারা যদি প্রয়োজনীয় আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা পেতেন, তবে এই বিলটিকে একটি পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দিতে পারতেন।</p>