<p>বাংলাদেশের নির্বাচনীব্যবস্থাকে যারা ধ্বংস করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বলে মন্তব্য করে নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনীব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য যারা কাজ করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান যৌক্তিক।</p> <p>রাজশাহীতে নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক মতবিনিময়সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্ততে একথা বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এত অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। </p> <p>নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের নির্বাচনীব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে। এটি সংস্কারের জন্য অংশীজনরা মতামত দিয়েছেন। যেখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। </p> <p>ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না জানিয়ে তিনি জানান, ইভিএম পদ্ধতি বাতিলসহ ইভিএমের সরঞ্জাম ক্রয়ে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতির তদন্ত হওয়া উচিত।</p> <p>ইভিএম প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা নিশ্চিত করেই বোধ হয় বলা যায়, নির্বাচন কমিশনও বলেছে। ইভিএম হবে না। কারণ এটা দুর্বল যন্ত্র। এটার মাধ্যমে কারচুপি সম্ভব। নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। সেটা ছিল না। শুধু তাই নয়, ইভিএম কেনার ব্যাপারে কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির যিনি প্রধান ছিলেন, জামিলুর রেজা চৌধুরী তিনিও এটাতে দ্বিমত করেছিলেন। সেটা উপেক্ষা করে কেনা হয়েছিল। এবার এটা হবে না, নিশ্চিত করেই বলতে চাই।’</p> <p>বিতর্কিত নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছে, নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে, নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে কিংবা কারচুপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। যারা অন্যায় করেছে, নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি প্রদান করার প্রস্তাব এসেছে। </p> <p>নির্বাচন কবে হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটা কী? এই কমিশনের কাজ নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা না। আমাদের কাজ হলো নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভেঙে গেছে, এ ব্যাপারে অংশীদারের ভিত্তিতে কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব করা। নির্বাচন কবে হতে পারে, এটাও আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।’</p> <p>অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘আপনারা অনেকেই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন অথবা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। আমরা জানতে চাই, নির্বাচন ব্যবস্থায় কী কী ত্রুটি আছে, কী কী ঘটেছে অতীতে। আপনাদের অভিজ্ঞতার আলোকে খোলামেলাভাবে আমাদেরকে আপনাদের মতামত জানাবেন।’</p> <p>সভায় নির্বাচন কমিশনকে কীভাবে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বাধীন করা যায়, ভোটার তালিকায় নারী ভোটারদের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে লিঙ্গবৈষম্য নিরসন, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।</p> <p>মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচন সংস্কারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই ব্যক্তি যেন দুয়ের অধিক বার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, অহেতুক নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে শব্দ দূষণ যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ, সারাদেশে চারটি বা বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচনী অঞ্চল ঘোষণা করে ধাপে ধাপে নির্বাচনের আয়োজন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের অনলাইনে ভোট প্রদানের সুযোগ দেওয়া, নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা, না ভোট প্রদানের বিধান পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আনা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত না করে প্রয়োজনে পুনরায় ভোট গ্রহণ, পোলিং এজেন্টদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়ে আসা এবং ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বাতিলসহ বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন।</p> <p>এ সময় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী, মীর নাদিয়া নিভিন, ড. মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস, সাদিক আরমান, বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ এবং জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার প্রমুখ বক্তব্য দেন।</p>