<p style="text-align:justify">খেজুর রস আর গুড় ছাড়া যেন শীতকাল পানসে লাগে। সেই রস-গুড়ের বড় একটি অংশ উৎপাদন হয় দেশের দক্ষিণের জেলা ঝিনাইদহে। প্রতিবছর ঋতু পরিক্রমায় শীত এলেই রস সংগ্রহে সবচেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ জেলার গাছিরা। মূলত তারাই রস-গুড তৈরির প্রধান কারিগর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা নির্ভেজাল খাঁটি রস গুড় পেতে চাইলেও আমরা কারিগর সংগ্রামী গাছিদের কখনো খোঁজ রাখি না। </p> <p style="text-align:justify">তবে ঝিনাইদহ জেলার ঐতিহ্য খেজুরের রস গুড় উৎপাদনের কারিগরদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদেরকে সম্মানিত করতে ব্যতিক্রমী এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে ডি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের উদ্যোগ নেয় কাজী আব্দুল ওয়াহেদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।</p> <p style="text-align:justify">কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সম্ভাব্য রস আহরণকৃত খেজুর গাছের সংখ্যা ১০ হাজার ৮২৫টি। রস আহরণ করা হয় না এমন গাছের সংখ্যা ১ হাজার ৫০। রস আহরণের উপযোগী হয়নি এমন বাড়ন্ত গাছের সংখ্যা ২ হাজার ৬২৫। সর্বমোট উপজেলাটিতে খেজুর গাছ রয়েছে ১৪ হাজার ৫০০টি। এসব গাছ থেকে উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন খেজুর উৎপাদন হয়, ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ লিটার রস আহরণ হয়। ২৯.৫ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়। আর উপজেলাটিতে উপকারভোগী ১ হাজার ১৫ জন গাছি রয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">সমাবেশে অংশ নেওয়া উপজেলার কামালহাট গ্রামে হাফিজুর রহমান নামের এক গাছি জানান, আমার বেশ কিছু খেজুরের গাছ আছে। নতুন করে আবার এমদাদ স্যারের পরামর্শে প্রায় ১০০টি খেজুরের চারা রোপণ করেছি। আমরা গাছিরা যদি সৎ থেকে খেজুরের রস গুড় উৎপাদন করতে পারি, তাহলে আমার এলাকার সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে বলে আমি মনে করি। </p> <p style="text-align:justify">কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, এ অঞ্চলের ঐতিহ্য খেজুরের রস গুড়। বাংলাদেশ খেজুর গুড়ের জন্য এ অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই আমরা নিরাপদ গুড় উৎপাদন করব। তাছাড়া আমরা গাছিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। </p> <p style="text-align:justify">কাজী আব্দুল ওয়াহেদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক কাজী এমদাদুল হক এমদাদ বলেন, আমরা জেলা এবং উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভেজালমুক্ত খেজুরের রস গুড় উৎপাদন করতে, খেজুর গাছ কাটার গাছির সংখ্যা  বাড়াতে ফাউন্ডেশনটি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাদের এ কাজে নানাভাবে সহযোগিতা প্রদান করছেন। </p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি খেজুরের নতুন জাতের চারা ঈশ্বরদী থেকে এনে গাছিদের দিতে। তাছাড়া গাছি সংকটে আমাদের এলাকার অনেক খেজুর গাছ শীত মৌসুমে কাটা সম্ভব হয় না। আমরা এই সমাবেশের মাধ্যমে  গাছিদের সচেতন করছি ওইসব গাছ কাটার ব্যাপারে। একইসঙ্গে পরামর্শ দিচ্ছি খেজুরের রস গুড় উৎপাদনে কোন প্রকার ভেজাল না দেওয়ার জন্য। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফাউন্ডেশনটির অর্থনৈতিক সংকট থাকায় আমরা গাছিদের নিয়ে আরো ভালো কিছু করতে পারছি না বলেও তিনি যোগ করেন।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, অনেক আগে থেকে এ অঞ্চল খেজুর রস গুড়ের জন্য বিখ্যাত। আমরা উদ্যোগ নেব ভালো জাতের খেজুর গাছের চারা এনে এখানকার গাছিদের দেওয়ার জন্য। যাতে কালীগঞ্জের খেজুর রস গুড়ের খ্যাতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে আমরা গাছিদের জন্য কাজ করবো। পরিশেষে চমৎকার এ আয়োজনের জন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।<br />  </p>