<p>আজ ১৩ জানুয়ারি দিনাজপুরের হিলি ট্রেন ট্র্যাজেডি দিবস। ৩০ বছর আগে ১৯৯৫ সালের এই দিনে হিলি রেলস্টেশনে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেই মর্মান্তিক দিনের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি হিলিবাসী। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন স্থানীয়রা।</p> <p>জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি, দিনটি ছিল শুক্রবার। রাত সোয়া ৯টার দিকে গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী ৭৪৮ নম্বর আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময় ভয়াবহ মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। বিকট শব্দে গোয়ালন্দ লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে আন্তঃনগর ট্রেনের ওপর উঠে যায়।</p> <p>ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হন এবং দুই শতাধিক যাত্রী আহত হন। নিহতদের অনেকের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে ছিল। স্থানীয় মানুষ, রেলওয়ে একতা ক্লাবের সদস্য এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় লাশ উদ্ধার এবং আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। সরকারিভাবে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৭ জন এবং আহতের সংখ্যা শতাধিক বলে জানানো হয়।</p> <p>দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি নিহত ও আহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেন। তবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আজও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।</p> <p>হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও শরীর শিউরে ওঠে। দুর্ঘটনার সময় আমরা রেলওয়ে একতা ক্লাবে বসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে স্টেশনে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি ভয়াবহ পরিস্থিতি—শত শত মানুষের আহাজারি, ক্ষতবিক্ষত দেহ, রক্তমাখা লাশ। স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য কখনও দেখিনি।</p> <p>ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবার এবং স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে হিলি রেলস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার এবং পয়েন্টসম্যানের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছিল।</p> <p>হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বুলু জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে কালো ব্যাজ ধারণ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।</p> <p>এ দিনের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার স্মৃতি আজও হিলিবাসীর মনে অমলিন হয়ে আছে।</p>