<p style="text-align:justify">পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও এখনও সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। হাটবাজার, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য সেতুর দুই পাশে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এতে ১৩ গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর ওপর ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য নাওটানা-পাকুরিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের সময়সীমা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিমরান মায়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ধীরগতিতে মূল সেতুর কাজ প্রায় শেষ করলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই পুরো টাকা তুলে নেয়। ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু এখন স্থানীয়দের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তালতলা শাখা নদীর পশ্চিম প্রান্তে পাকুরিয়া, শিংখালী, গোলারহাট, কদমবাড়ি, আছরা, জুগিয়া, সাচিয়া ও লড়া গ্রাম। পূর্ব প্রান্তে নাওটানা, জিলবুনিয়া, রামনগর, চাঁদকাঠি ও কলারদোনিয়া গ্রাম। এছাড়া, সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুর পূর্ব প্রান্তে রয়েছে দীর্ঘা মহিলা কলেজ, দীর্ঘা টেকনিক্যাল কলেজ, গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বৈঠাকাটা কলেজ, চাঁদকাঠী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, নাওটানা বিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলারদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলারদোনিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লেবুজিলবুনিয়া দাখিল মাদরাসা, গাওখালী বাজার, চাঁদকাঠি বাজার, বৈঠাকাটা বাজার, কলারদোনিয়া বাজার ও দীর্ঘা বাজার।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, সেতুর পশ্চিম প্রান্তের আটটি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ি দিয়ে সেতু পারাপার হন। আবার, সেতুর পূর্ব প্রান্তের গ্রামগুলোর মানুষও পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলোতে যেতে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে সেতু পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে দেখা গেছে, নাওটানা-পাকুরিয়া সেতুর মূল সেতুর কাজ প্রায় শেষ হলেও, রেলিংয়ের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তবে, সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। আগে এখানকার মানুষ খেয়া দিয়ে নদী পারাপার করলেও, সেতু হওয়ায় খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কাঠের সিঁড়ি বেয়ে সেতু পারাপার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা মনিকা বিশ্বাস বলেন, ব্রিজটি দীর্ঘদিন অকেজো ছিল। এখন কিছু কাজ হলেও তা যথেষ্ট নয়। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না এবং বৃদ্ধদের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। সেতুর সংযোগ সড়ক যেন দ্রুত তৈরি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">আরেক বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম ইউনুস জানান, ব্রিজের কাজ সমাপ্ত না করে ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। আমরা নিজের খরচে সিড়ি বানিয়ে ও বালুর বস্তা দিয়ে চলাচল করছি। আমি একাধিকবার অফিসে গিয়েছি, তারা জানিয়েছে ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন।</p> <p style="text-align:justify">স্কুল ছাত্র অতনী বিশ্বাস বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে বৃষ্টির সময়ে। অনেকেই এখান থেকে পড়ে গেছে। খেয়া পার হয়ে অনেক দূর ঘুরে আসতে হত, এখন ব্রিজ পার হতে হলেও সমস্যা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় কৃষক অজয় হালদার জানান, রাস্তা দিয়ে উঠতে সমস্যা হচ্ছে, পাঁচ কেজি চাল নিয়ে যাওয়াও কঠিন।</p> <p style="text-align:justify">আরেক বাসিন্দা নিখিল রঞ্জন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই ব্রিজটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পারাপার হতে হয়, এবং অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। আমরা আশা করছি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজটি শেষ করবে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা পার্থ সরকারও সেতুর দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান। আমরা যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারি, সেটি নিশ্চিত করা হোক।</p> <p style="text-align:justify">পিরোজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে জানান, নাওটানা সেতুর মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে, তবে সংযোগ সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। ৫ আগস্টের পরে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন হওয়ায় ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তবে আমরা দ্রুতই সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা করব। স্থানীয়রা এই পরিস্থিতিতে কষ্ট পাচ্ছেন, এবং আমি খবর পেয়েছি যে, অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি দুই-এক দিনের মধ্যে সেতুটি পরিদর্শন করব। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ হবে এবং জনগণের কষ্ট দূর হবে।</p>