<p>মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদের ওপর কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কে ‘রাজাপুর সেতু’ নির্মাণের কাজ প্রায় তিন বছর ছয় মাস আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়াতে এ সেতু দিয়ে যান চলাচল এখনো শুরু হয়নি। তবে স্থানীয় লোকজন সেতুর দুই পাশে বালু দিয়ে ভরাট করা এপ্রোচ সড়ক ব্যবহার করে দুর্ভোগ মাড়িয়ে কোনোমতে চলাচল করছেন।</p> <p>এ প্রকল্পের মেয়াদে প্রায় সাড়ে ৪ বছরে এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ। এদিকে রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য বালু পরিবহনে বর্তমান বালু ইজারাদারের বাধা ও ভূমি অধিগ্রহণে টাকা না পাওয়ায় শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর এলাকায় স্থানীয় লোকদের বাধার কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। এতেই সরকারের এত বড় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে এ সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ। এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের লোকজন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কালিয়াকৈরে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/13/1736744517-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কালিয়াকৈরে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/13/1468145" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সওজ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়ন পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২০১৮ সালে রাজাপুর সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পে ‘কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২ শত ৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও জমি অধিগ্রহণ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। ৩৪ কোটি টাকায় ব্যয়ে সেতু নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হয়।</p> <p>২০২০ সালে কার্যাদেশ পাওয়া প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর দুই পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ পায় ‘মেসার্স মো. জামিল ইকবাল’ নামের সিলেটের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা থাকায় পরবর্তীতে দুই দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানা হয়েছে। বর্তমানে রাজাপুর-চাতলাপুর সংযোগ সড়কের কাজে শরীফপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় প্রায় শতাধিক লোক এখনো জমি অধিগ্রহণের কোন টাকা পাননি। যার জন্য শরীফপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়ার নেতৃত্বে জমির মালিকরা টাকা না পাওয়ায় কাজে বাধা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দখলের দাবিটি ভুয়া" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/13/1736742618-bfcb11456569beb0d3d02e32c007b1fd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দখলের দাবিটি ভুয়া</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/01/13/1468135" target="_blank"> </a></div> </div> <p>অন্যদিকে সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বালু পরিবহনে বাধার অভিযোগ এনে গত ৩ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন মনু নদী থেকে বালু উত্তোলনের সাবেক ইজারাদার দীপক দে। এদিকে জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক আরেকটি অভিযোগ দেন সংযোগ সড়কের  কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. জামিল ইকবাল।</p> <p>পৃথক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১৪৩০ বাংলা সনে কুলাউড়া মনু নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল ইজারাপ্রাপ্ত হন দীপক দে। সরকারি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষে ঠিকাদার মেসার্স মো. জামিল ইকবালের কাছে মনু নদী থেকে উত্তোলনকৃত সম্পূর্ণ বালু বিক্রয় করেন দীপক দে। বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন কাজের মধ্যে রাজাপুর সেতুর এপ্রোচ নির্মাণ প্রকল্প, মেগাপ্রকল্প ঢাকা-সিলেট ৬-লেন জাতীয় মহাসড়কসহ বিভিন্ন সরকার প্রকল্পে রাস্তা ভরাটের কাজে বালু সরবরাহের জন্য কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা মৌজার সালন গ্রাম এবং কাউকাপন মৌজার হরিরচক ও সাধনপুর গ্রামে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়।</p> <p>পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরিকৃত বেড়িবাঁধ সংলগ্ন রাস্তা ব্যবহার করে প্রকল্প এলাকায় বালু পরিবহনের জন্য অনুমোদন পেতে বিলম্ব হয়। এবং প্রকল্প এলাকা রাজাপুর-চাতলাপুর সংযোগ সড়কে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা থাকায় ১৪৩০ বাংলা সনে উত্তোলনকৃত বালু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো সরকারি প্রকল্প এলাকায় নিতে পারেননি। বালু উত্তোলনের নির্ধারিত সময় পার হলে পরবর্তী বছরের জন্য খালেদ আহমদ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলনের ইজারা প্রদান করা হয়। </p> <p>বর্তমানে সংযোগ সড়কের অধিকাংশ জায়গায় অধিগ্রহণ কাজ শেষ হওয়ায় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমোদন পাওয়ায় উত্তোলিত বিক্রয়কৃত বালু সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে নতুন ইজারাদার ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ খালেদ আহমদ, তার সহযোগী ইউপি সদস্য কিবরিয়া হোসেন খোকন, জয়পাশার বাসিন্দা ফয়জুল হক লিটন, কটারকোনার বাসিন্দা খসরু মিয়া, আমানীপুরের বাসিন্দা ময়না মিয়া বাধা ও হুমকি প্রদান করছেন। যার ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে বালু ব্যবহার করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে রাজাপুর-চাতলাপুর সংযোগ সড়কে বালু ভরাটের কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান বাবলু গিলমান আলী বলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে রাজাপুর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়নি। এ প্রকল্পে সংযোগ সড়কে কিছু বালু ভরাট করলেও বালু উত্তোলনে সৃষ্ট জটিলতার কারণে সংযোগ সড়কের কাজে বিলম্ব হচ্ছে। গ্রামবাসী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, বালু ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজ শেষ করার তাগিদ দিলে তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে কয়েক হাজার লোককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামনের বর্ষা মৌসুমে চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা করছি।’</p> <p>শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়া বলেন, ‘ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় প্রায় শতাধিক মানুষ এখনো জমি অধিগ্রহণের টাকা পায়নি। যাদের জমি সংযোগ সড়কে পড়েছে তারাই কাজে বাধা দিচ্ছে এটা স্বাভাবিক বিষয়। আমি কেন বাধা দিতে যাব। প্রত্যেক জমির মালিকদের মৌরস্বী সম্পত্তি কিভাবে সরকারকে বুঝিয়ে দেবে যদি তারা তাদের টাকা না পায়।’</p> <p>বালু পরিবহনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমান ইজারাদার খালেদ আহমদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বিধি মোতাবেক বর্তমান সনে আমি বালু উত্তোলনের ইজারাপ্রাপ্ত হই। মনু নদীর নির্ধারিত ঘাট থেকে আমরা বালু উত্তোলন করে যেখানে বালু রাখব সেই স্থানে পূর্বের ইজারাদার দীপক দে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বালু স্তূপ করে রেখে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো কোনো সুরাহা পাইনি।’</p> <p>ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জামিল-ইকবাল’ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার সাইফুল আহমদ বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও বালু পরিবহনে বাধার কারণে কাজ বন্ধ আছে।’</p> <p>সওজ অধিদপ্তরের কুলাউড়া সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আক্কাছ আলী বলেন, ‘সংযোগ সড়কের কাজের জন্য পুরোপুরিভাবে জমি বুঝে না পাওয়ার কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।’</p> <p>সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়ছার হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজাপুর সেতুর কাজ প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে শেষ হয়েছে। আর সংযোগ সড়কে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে।’</p> <p>সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও স্থানীয় চাতলাপুর এলাকায় উপকারভোগীরা অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় বাঁধা দেয়ার কারণে কাজ করতে বিলম্ব হচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। </p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংযোগ সড়কের কাজে স্থানীয় লোকদের বাধার খবর পাওয়ার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও সওজের কর্মকর্তা সরেজমিনে চাতলাপুর এলাকায় গিয়ে উপকারভোগীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় মনোহরপুর মৌজায় অনেক লোকের ভোগকৃত জমিটি সরকারি ভিপি সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া যায়। সেই ভিপি সম্পত্তির জমিতে কাউকে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘তবে যারা জমির সঠিক কাগজাদি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পরও টাকা পাওয়ার বিষয়ে কোনো আস্থা পাচ্ছে না তাদেরকে নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও নির্বাহী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে আলোচনার করে টাকা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বালু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সাবেক ইজারাদার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তির বিষয়টি আমাদের জানার বিষয় না। তবে বিভিন্নস্থানে উত্তোলন করা স্তূপকৃত বালুর বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে থেকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’</p>