ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা বাপ্পারাজ। ক্যারিয়ারে অসংখ্য রোমান্টিক সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে দর্শকের কাছে অভিনেতা বাপ্পারাজ মানেই ব্যর্থ প্রেম বা ট্র্যাজেডির গল্প! অর্থাৎ ত্রিভুজ প্রেম বা স্যাক্রিফাইসের গল্প নির্ভর সিনেমাগুলোর কারণে আজও এই নায়ক বেশ জনপ্রিয়! দীর্ঘ সময় ধরে এ অভিনেতা সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেন। ‘চাপা ডাঙার বউ’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক হয় তার।
প্রথম সিনেমার পরিচালক ছিলেন তার বাবা নায়ক রাজ রাজ্জাক। প্রথম সিনেমাতেই বাপ্পা প্রশংসা কুড়ান। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সিনেমার একটি সংলাপ ভাইরাল হয়।
এ ছাড়া বিশেষ দিনগুলোতে এ অভিনেতার অভিনীত বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে কথা বলে। অনেকে আবার পুরানো অনেক ছবির ক্লিপ ফেসবুকে শেয়ার করে। এছাড়া দীর্ঘদিন পর অভিনয়েও ফিরছেন বাপ্পারাজ। সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক ব্যস্ততা ও ইন্ডাস্ট্রির নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন এ অভিনেতা। প্রায় সময়ই সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসা প্রসঙ্গেও নিজের মতামত জানান অভিনেতা। তার মতে, তিন নিজের জায়গায় সবসময় নাম্বার ওয়ান।
আরো পড়ুন
আমির-রণবীরের লড়াইয়ে সঙ্গী রোহিত-পান্থরা
বাপ্পারাজকে নিয়ে প্রায়ই ট্রল হয়, অনেকে বলে ছ্যাঁকা খাওয়া নায়কের শুভেচ্ছাদূত তিনি। এটা নিয়ে কোনো দুঃখবোধ কাজ করে কিনা জানতে চাইলে বাপ্পারাজ বলেন, ‘একদমই না। আমি মনে করি, আমার জায়গায় আমি এক নম্বর।
আমার অভিনীত চরিত্র সবার মনে জায়গা করেছে বলেই এমনটা হয়েছে, তাই এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। নিঃসন্দেহে এটা আমার সফলতা। আমাকে যখনই পরিচালকরা গল্প শোনাতেন, চরিত্র নিয়ে কথা বলতেন, তখন আমি বেছেই নিতাম ছ্যাঁকা খাওয়া চরিত্র। আমি নিজেও বুঝতাম, ছ্যাঁকা খাওয়া চরিত্রটাই ক্লিক করবে।’
অভিনয়ে কেন নিয়মিত নন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমার সেই সময় নাই, হিরোইনের পেছনে ছুটে ছুটে গান করব। সত্যি কথা বলতে আমাদের এখানে তো ওই রকম চিত্রনাট্যই হয় না। আমরা যারা, এই যেমন আমি, আমিন খান, নাঈম আমাদের নিয়ে গল্প ভাবা হয় না। যা-ও কেউ আমাদের কথা ভাবেন, চিত্রনাট্য করতে গেলে, বলবে, বাবার চরিত্র করো বা করেন। বাবার চরিত্র যে করব, আমাদের তো বাবার মতোও অবস্থা হয় নাই। আমাদের নিয়ে চরিত্র লেখা না হলে কীভাবে কী করব। মুম্বাইয়ের দিকে তাকালে দেখি, এই বয়সেও অমিতাভ বচ্চনসহ অন্যদের নিয়ে যেভাবে চরিত্র তৈরি হয়, তা সত্যিই অন্য রকম। বয়স্ক যারা, এখনো তাদের পর্দায় যেভাবে উপস্থাপন করে, তা ঠিকঠাকভাবেই করে। আমাদের এখানে গল্প এখনো একই প্যাটার্নের। হয়তো বাবার চরিত্র দরকার হলো, বলল, বাপ্পা ভাই করবেন? আমি বললাম, না, আমি করব না। এরপর দেখা গেল নাঈমের কাছ গেল, সেও করবেন না। এরপর আমিন খানের কাছে গেল, সেও করল না। এরপর এমন একজনকে নিল, যা হয়তো নিতে হবে বলেই নেওয়া। তাই বলব, আমাদের এখানে কাউকে ভেবে চরিত্র তৈরি হচ্ছে না।’
আরো পড়ুন
ইন্ডাস্ট্রির দুরবস্থা গ্রাস করেছে তাঁদেরও
ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান বেহাল দশায় পরিচালক-প্রযোজকদের ভূমিকা ও মুল সমস্যা প্রসঙ্গে এ অভিনেতা বলেন, ‘প্রযোজকেরা সাধারণত কী চায়, আমার ছবিটা হিট হোক। লগ্নি ফেরত আসুক। লাভ করুক। বাবা, ভাই, বোন, মা কাকে নেবেন, এটা নিয়ে মোটেও তিনি ভাবেন বলে মনে হয় না। খুব বেশি কিছু হলে প্রযোজক নায়ক-নায়িকা পর্যন্ত কে হতে পারেন, তা নিয়ে নাক গলায়। এখন যদি বলি, প্রযোজকেরা চাইবেন যে শাকিব খান থাকুক। শাকিব থাকলে তাদের মার্কেটের ভ্যালুটা ঠিক থাকবে, টাকা ফেরত আসবে, লাভও হবে। যে-সে থাকলে আবার ঝুঁকি। এরপরও বুঝলাম পরিচালক বোঝাল, গল্প খুব ফাটাফাটি। তারপরও প্রযোজক চিন্তা করবে, ফাটাফাটি হলেও যদি গল্প দর্শক না পছন্দ করে, তাহলে তো আমি শেষ। প্রযোজক চান তার বিনিয়োগের নিরাপত্তা। আমাদের পরিচালনার প্যাটার্ন বদলাতে হবে। না বদলাতে পারাটা অবশ্যই তাদের দীনতা। তবে নতুন যে কয়জন পরিচালক কাজ করছেন, তাদের কারণে প্যাটার্ন আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছে। নির্মাণের ধরন বদলে যেতে শুরু করেছে, ভাবনাচিন্তাও বদলেছে। আর আমাদের পুরানোদের চিন্তাভাবনা ওখানেই আটকে আছে, যেখানে তারা শুরু করেছিলেন। তাদের বক্তব্যটা অনেকটা এ রকম, হ্যাঁ, আমি ২০-৩০টি ছবি বানাইছি, তোমরা এখন আমারে জ্ঞান দাও। তারা এখনো ওই ২০-৩০টি ছবির মধ্যে আটকে আছেন। এখন যে দুনিয়া কোথায় চলে গেছে, তা তারা জানতে বা বুঝতে চান না। অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন আর গোঁ ধরে বসে থাকলে হবে না।’
আরো পড়ুন
পর্দায় আজও ‘চিরসবুজ’ দেশ-বিদেশের মুক্তিযুদ্ধ
কিছুদিন আগে ছোট্ট একটা টিজারে দেখা গিয়েছিল বাপ্পারাজকে। অবশেষে অভিনয়ে ফিরছেন তিনি। নিজের আসন্ন এ কাজ প্রসঙ্গে বাপ্পারাজ বলেন, ‘ওটা একটি ওয়েব সিরিজ। মোস্তফা খান শিহান বানাবে। সিরিজের প্রতিটা চরিত্রের ওপর একটা করে টিজার বানিয়েছে। বানানোর পর চুপচাপ ছিল, ভাবছিল পরে প্রকাশ করবে। কিন্তু হেনা-বকুল নিয়ে এত মাতামাতি শুরু হলো, তার মধ্যেই এটি ছেড়ে দিয়েছে। সময় ও সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। সিরিজটির নাম ‘রক্তঋণ’। কোনো চ্যানেলের সঙ্গে চূড়ান্ত হলে তবেই শূটিং শুরু হবে। এটি আমার অভিনীত প্রথম ওয়েব সিরিজ হতে যাচ্ছে। বিষয়বস্তুর কারণে সিরিজটিতে কাজ করতে রাজি হয়েছি। যেমন এটার মধ্যে হিরোইন নাই। নাচ-গান নাই। চরিত্রনির্ভর। চরিত্রে অভিনয়ের দুর্দান্ত সুযোগ আছে। ধুমধাম ব্যাপারও আছে।’