বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাসে এবারই প্রথম দুই পর্বে তিনটি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে আজ রবিবার শেষ হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। এ ছাড়া এবারই প্রথম ইজতেমা ময়দানে পালিত হয়েছে পবিত্র শবেবরাত।
রাজধানীর পাশে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ রবিবার দুপুর ১২টায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান এবং সাদপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিরাপত্তাবলয়, ধর্মীয় উদ্দীপনায় তাবলিগ জামাতের দেশি-বিদেশি শীর্ষ মুরব্বি, বুজুর্গ আলেম-মাওলানাদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ও ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করেছেন আগত মুসল্লিরা। তবে এ পর্বে আখেরি মোনাজাত আরবি ও উর্দুতে পরিচালনা করার কথা রয়েছে। মোনাজাতের আগে হবে হেদায়াতি বয়ান।
মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান : গতকাল বাদ ফজর তাবলিগের ছয় উসুলের (মৌলিক বিষয়) ওপর বয়ান করেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ, তরজমা করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম।
সকাল সাড়ে ৯টায় তালিমের মওজুর (ফজিলত ও আদব) বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মুফতি ইয়াকুব।
বাদ জোহর বয়ান করেন আরবের মেহমান, তরজমা করেন মাওলানা মোস্তফা খলিল। বাদ আসর বয়ান করেন হাফেজ মঞ্জুর, তরজমা করেন মাওলানা রুহুল আমিন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, তরজমা করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ।
উর্দুতে বয়ান হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ করা হচ্ছে। বয়ান চলাকালে পুরো ইজতেমা ময়দানে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম জানান, গতকাল বিকেল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার ৭০০ মেহমান উপস্থিত হয়েছেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, কম্বোডিয়া, কানাডা, চায়না, ফিজি, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুদান, থাইল্যান্ড, তিউনিশিয়া উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে।
সেখানে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গুজব সৃষ্টির অভিযোগে একজন হেফাজতে : গতকাল গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) ড. নাজমুল করিম খান প্রেস ব্রিফিং করে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইজতেমায় হামলার হুমকিসংক্রান্ত গুজব সৃষ্টিকারীকে আইনের হেফাজতে আনা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলা চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইজতেমার পরিবেশ ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা আছে।’ মোনাজাত চলাকালে সড়ক ও মহাসড়কে যান চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
এ সময় জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হাসান, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান, উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন, ইজতেমার আয়োজক সাদপন্থীদের পক্ষে মাওলানা ওসামা ইসলাম, হাজি মনির এবং মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম উপস্থিত ছিলেন।
তিন মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গতকাল বিকেল পর্যন্ত তিন মুসল্লি মারা গেছেন। তাঁরা হলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা সদরের আব্দুল আজিজ শেখ (৬২), বগুড়ার শেরপুর থানার চকপাতালিয়া গ্রামের নাজমুল হোসেন (৭৫) এবং খুলনার লবণচরা থানার বাঙালগলি গ্রামের দিদার তরফদার (৫৫)।
যৌতুকবিহীন বিয়ে : দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ৯টি যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।