মামলাকে পুঁজি করে কাশিয়ানী থানার ওসি মো. শফিউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তিনি তার পছন্দের এসআইকে দিয়ে করছেন এই ‘মামলা-বাণিজ্য’। নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের ঘুষ। ইতিমধ্যে এসি ঘুষ নেওয়ার একটি কথোপকথন (অডিও) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।
এসব অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
আরো পড়ুন
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড
অভিযোগ উঠেছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যবসায়ী ও ‘বিত্তশালী’ নেতাকর্মীদের টার্গেট করে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ‘এজাহারে’ নাম বা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক দাবি করে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা পেলেই মেলে বাড়িতে ঘুমানো ও এলাকায় থাকার নিশ্চয়তা আর টাকা না দিলে মামলার ‘অজ্ঞাত আসামি করে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাশিয়ানী থানার এসআই হারুন অর রশিদকে দিয়ে চাওয়ানো হয় টাকা।
জানা যায়, কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময় হাতিয়ে ওসি শফিউদ্দিন খান বিপুল পরিমাণ অর্থ নেন। পরে আবারও মামলার ভয় দেখিয়ে ওই ইউপি সদস্যের কাছ থেকে একটি এসি নেন তিনি। এসি নেওয়ার একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভয়ে অনেক কথা বলতে না চাইলেও কয়েকজন ভুক্তভোগী মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ ও এসি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন।
আরো পড়ুন
বড় ম্যাচে বিকল্প ভাবনা কিংসের
ভুক্তভোগী কাশিয়ানী জাকির হোসেন বলেন, ‘মামলার ভয় দেখিয়ে ওসি সাহেব আমার কাছ থেকে কয়েক দফা টাকা নিয়েছেন। আবার একটা এসি দাবি করেন। আমার কাছে নগদ টাকা না থাকায় নিরুপায় হয়ে কিস্তিতে কিনে দিয়েছি। কিন্তু এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি, ঈদের আগের দিন আবারও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করে টাকা চান।
’
আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার বরাশুর গ্রামের রবিউল মিয়া। তিনি জানান, গত ১৫ মার্চ অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে কল করে ওসির সঙ্গে দেখা করার কথা বলে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। রবিউল ওসির কক্ষে গিয়ে তার পরিচয় দিতেই ওসি তুই-তোকারি শুরু করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায় বলেন, ‘তোর নাম মামলায় ঢুকিয়ে দেব। তুই গাড়ি ডাকাতি করিস।’ এরপর রবিউল দিহানের পরিচয় দিয়ে ওসিকে ফোন ধরিয়ে দেন। ওসি দিহানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর কনস্টেবল সাইফুলকে ডেকে বলেন, ‘ওকে হাজতখানায় আটকে রাখো।’
আরো পড়ুন
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু
তিনি আরো জানান, ইফতারের পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রবিউলকে ফোন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে তার বড় ভাই ধার-দেনা করে ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে দিহানের মাধ্যমে ওসিকে দেন। নানা নাটকীয়তার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রবিউলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।
কাশিয়ানী থানায় আটককৃত ডালিমের স্ত্রী রোকসানা বেগমের অভিযোগ করে জানান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে ঘোনাপাড়া গ্রামের হাসিব নামে এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ চলছিল। ওই যুবক ওসিকে টাকা দিয়ে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। টাকা হলে ওসি শফিউদ্দিন সবই পারেন। ওসিকে টাকা দিলেই নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকেও রাজনৈতিক মামলার ‘অজ্ঞাত আসামি’ করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। গত ২২ মার্চ উপজেলার চরচাপ্তা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন ডালিমকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান এসআই হারুন অর রশীদ।
এসব অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য কাশিয়ানী থানার ওসি শফিউদ্দিন খানের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হলে তিনি জানান, ‘বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি ও বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেপ্তার করায় আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত না।’
আরো পড়ুন
কর্মকর্তাদের বাহবা দিয়ে যা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরে গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’