গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন ফয়সাল সরকার। এরপর রাত ঘনিয়ে এলেও খোঁজ মেলেনি তার। মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে ফয়সালের স্বজনরা।
ওই দিন বাহিরে তখনো চলছিল গোলাগুলি।
এই হাসপাতালে ওই হাসপাতাল খোঁজাখুঁজি করে হদিস না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণখান থানায় জিডি করেন ফয়সালের ছোট ভাই ফাহাদ। এরপর ১ আগস্ট বিকেলে একজন গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জানতে পারেন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে অনেক বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন করা হয়েছে, সেখানে খোঁজ নিলে ফয়সালের মরদেহের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন
ঈদ মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীলতা, ৩ নারীসহ গ্রেপ্তার ৩৮
এরপর ফয়সালের স্বজনরা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ১৫-২০টি মরদেহ একসাথে গণকবর দেওয়া হয়েছে, কাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তারা জানে না। এরপর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে গণকবর দেওয়া মরদেগুলোর ছবি দেখালে মাথায় ধবধবে সাদা একটি ব্যান্ডেজের ওপর লেখা, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’ এমন একটি ছবি দেখে ফয়সাল সরকারের মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্বজনরা।
মরদেহ শনাক্ত করা গেলেও তাকে কোথায় কিভাবে দাফন করা হয়েছে তা জানতে পারেনি।
বুধবার (২ এপ্রিল) বিকালে ফয়সাল সরকারের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে ছেলের ছবি নিয়ে আহাজারি করছেন তার বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম। তিনি বারবার সন্তানের কবরের সন্ধান চাচ্ছিলেন।
ফয়সালের মা হাজেরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুত ছাড়া এবারের ঈদ গেল, প্রতি ঈদ চান্দের আগে আমার পুতে বাইত আইয়া আনন্দ-ফুর্তি করত, ঘরের ঈদ বাজার করত।
বোনদের বাড়িতে কাপড়চোপড় পাঠাইত এবার তো আমার নিমাই চান আইল না। রাস্তাঘাটে কত মানুষ দেখি আমার নিমাই চানরে দেখি না। আমার সোনার চান কই শুইয়া আছে তা-ও জানি না। কবরের কাছে দাঁড়াইয়া যে একটু কানমু তা-ও পারি না, আমি আমার পুতের কবরের সন্ধান চাই।’
তিনি সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ‘হাসিনার নির্দেশে পুলিশ আমর পুতের ওপর গুলি করছে।
আমার পুতের অপরাধ নাই তারে কেন গুলি করা হলো? এমনভাবে গুলি করছে মাথার মগজও খুইল্লা পড়ে গ্যাছে।’
এদিকে বুধবার বিকেলে জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া শহীদদের জীবনী নিয়ে লেখা ‘শহীদ স্মৃতি স্মরণিকা’ তুলে দেন কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদসহ জামায়াতের স্থানীয় নেতারা।
শহীদ ফয়সালের বাবা সফিকুল ইসলাম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ছেলের কবরটা একটু দেখতে চাই। সংসারের সব খরচ চালাই তো ছেলে। সরকার যদি আমার ছোট ছেলেরে একটা চাকরি দিত তাহলে সংসারটা কোনো রকম চলত।’
জানা যায়, শহীদ ফয়সাল সরকার ঢাকার দক্ষিণখান এসএম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪.৩৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের অভাব ঘোচাতে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকতেন আবদুল্লাহপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়।