ঈদুল ফিতর আসন্ন। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) পর্যন্ত সড়কে যানজট নেই।
ঈদুল ফিতর আসন্ন। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) পর্যন্ত সড়কে যানজট নেই।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু থেকে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ এবং এর বিপরীত ৩৩ হাজার ৭৬৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাত ১২টা থেকে বুধবার (২৬ মার্চ) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৭৬৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার যমুনা সেতু দিয়ে ৪ হাজার ৫৩৩টি যানবাহন বেশি পারাপার হয়েছে। গত ৩ দিনে সেতুর ওপর দিয়ে মোট ৮৭ হাজার ৯৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে৷ এতে টোল আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ‘মহাসড়কে যানজট নিরসনে যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই যানজট। আশা করছি ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্বপালন করছেন। এরমধ্যে মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেল টিম করছে। মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। মহাসড়কে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সেদিকে নজরদারি রয়েছে।’
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এ মহাসড়কটি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলে অংশ ৬৫ কিলোমিটার। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। প্রতিবছর ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হয়। এ সড়ক দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার যানবাহন চলাচল করে। গড়ে প্রতিদিন ১৮/২০ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু ঈদে এর সংখ্যা ২ থেকে ৩ গুণ বেড়ে অর্ধ লক্ষ অতিক্রম করে।
সম্পর্কিত খবর
মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত জাভেদ আলী (১৫) নামের এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় ধানখোলা ইউনিয়নের ভাটপাড়া - কচুইখালী সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আজ সোমবার (৩১ মার্চ) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত জাভেদ আলী গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের শাহিন আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ভাটপাড়া ও কচুইখালির মধ্যবর্তী জায়গায় মোটরসাইকেল ও সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে জাভেদ আলী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
এদিকে, জাভেদ আলীর মৃত্যুতে তার পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকায় ঈদের আনন্দ শোকে পরিণত হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে গাংনী থানার ওসি বানি ইসরাইল বলেন, ‘দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়েছি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ শেখ সাকিব রায়হানের পিতা শেখ আজিজুর রহমান ঈদের নামাজ শেষে ছেলের কবর জিয়ারত করেছেন।
আজ সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ৮টায় তিনি তার এলাকা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার নবপল্লীর বায়তুল আকাবা জামে মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেন। পরে বসুপাড়া কবরস্থানে ছেলের কবর জিয়ারত শেষে বাড়িতে ফেরেন। এরপর
তিনি তার ছোট্ট মুদি দোকানে গিয়েই সময় কাটান।
এদিকে, শহীদ সাকিব রায়হানের বড় ভাই সাব্বির ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে খুলনার বাড়িতে এলেও এখনো আসতে পারেননি তার একমাত্র বোন আন্নী আক্তার।
সাকিবের বাবা আজিজুর রহমান জানান, ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) তারা ঢাকা থেকে খুলনায় আসবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে সাকিববিহীন প্রথম ঈদ ভালো কাটছে না ওই পরিবারের। যদিও ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সাকিব পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সহায়তাও।
ঈদের দুই দিন আগে নগর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেন বলেও জানান সাকিবের বাবা আজিজুর রহমান।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকার মিরপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাকিব রায়হান। পরে তাকে খুলনায় এনে বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাকিব রায়হান তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। তিনি পবিত্র কোরআনের ১৮ পারার হাফেজ ছিলেন। খুলনা থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন চাকরির খোঁজে।
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে লক্ষাধিক মুসল্লির অংশ গ্রহণে ঈদুল ফিতরের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) উত্তরের ১৬ জেলাসহ সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার ও মাঠ গোর-এ শহীদ ময়দানে এবার ঈদের নামাজ আদায় করতে বাগেরহাট ও গাজীপুর থেকেও কয়েকজন মুসল্লি এসেছেন।
সকাল ৯টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৬টা থেকেই মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন এই ঈদগাহে।
বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রমজানে আমরা যে তাকওয়া অজর্ন করেছি তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। এ সময় তারা বলেন, লাখো মুসুল্লির অংশগ্রহণে দেশের এই বৃহৎ ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তারা।
এদিকে, বৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে পেরে খুশি মুসল্লিরা। তারা জানান,ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা এসে অংশ গ্রহণ করতে পেরেছেন।
বাগেরহাট থেকে আগত আরিফুল ইসলাম ও গাজীপুর থেকে আসা হাফেজ ইমরান হোনের বলেন, আমরা প্রতিবার শুনি দিনাজপুরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিনার ও ময়দানে লাখো মানুষ নামাজ আদায় করেন। আমরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করলাম। বড় জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
নীলফামারী জেলা থেকে এসেছিলেন রংপুরের একটি হিমাগারে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আব্দুস সাত্তার। তিনি জানান, এবার নিয়ে সাতবার এই মাঠে নামাজ আদায় করলেন। তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবারে ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল। এতো বড় মাঠ ও এতো মুসল্লির সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করার যে অনুভূতি তা প্রকাশ করার মতো নয়।
বৃহৎ এ জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচাগার, ছিল ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এতো কিছু ছাপিয়েও এবার সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে আলোচনা ছিল মাঠে নামাজে আসা অনেক নতুন মুখ ও নতুন ইমাম। তারা বলেন, প্রতিবার আয়োজকরা ময়দানে যে সংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় করতেন, তার চেয়ে অনেক বাড়িয়ে বলা হতো। যারা বাড়িয়ে বলত এবার তারাও উধাও হয়ে গেছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান ও ঈদগাহ মিনার। ১৯.৯৯ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে।
লোকে লোকারণ্য মাঠ। মুসল্লিতে ঠাসা আশপাশের রাস্তা। বাসাবাড়ির ছাদেও ভিড়। ঈদগাহ মাঠ ছাড়িয়ে যতদূর চোখ যায়, ঠাঁই নেই অবস্থা।
জামাতের পর বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত থেকে বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের আহ্বানও জানানো হয়।
এটি ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম ঈদ জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হয় জামাত।
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশপাশের এলাকা। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। কঠোর নিরাপত্তার কারণে মাঠে প্রবেশ করতে মুসল্লিদের খানিকটা দেরি হয়। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যেমে মুসল্লিদের ঈদগাহে ঢুকতে দেওয়া হয়।
মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধা করে দিতে সকাল থেকে শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়ায়। সকাল ৬টার পর থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে ঈদগাহ মাঠে। চারদিক থেকে আসা জনস্রোতের গন্তব্যে ছিল এই শোলাকিয়া মাঠ।
জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই কানায় কানায় ভরে যায় ঈদগাহ। পাশের সড়ক, ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হতে দেখা যায় অনেককে। এবারও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, প্রায় এক হাজার ২০০ পুলিশ, শতাধিক র্যাব সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়। এবার প্রথমবারের মতো সেনা সদস্যারা নিরাপত্তাব্যবস্থায় যুক্ত হন। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নজরদারিতে আকাশে ছিল শক্তিশালী ক্যামেরাযুক্ত পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। মাঠ, শহরসহ প্রবেশপথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে দুরবিন নিয়ে নিরপত্তার দায়িত্ব পালন করেন র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তাচৌকি। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেন। ঈদগাহ এলাকায় তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল টিম এবং অগ্নিনির্বাপণ দলও মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল স্কাউট সদস্যরা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেছেন, উৎসবমুখর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজন করতেই নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নিয়েছে।
গত ৩০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করছেন গাজীপুরের আব্দুল খালেক (৬৫)। তিনি জামাতের একদিন আগে ভাতিজাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। গতবার নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। এবার ভাতিজা নিয়ে এলেন। তিনি বলেন, ‘যত দিন বেঁচে আছি এভাবে সক্ষম সব আত্মীয়-স্বজনকে শোলাকিয়ায় নিয়ে আসব। এখানে নামাজ আদায় করলে মনে শান্তি পাই। তাই বারবার আসি। শোলাকিয়ায় আসাটাই আমার ঈদ।’
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সিদলা থেকে সাইকেল চালিয়ে এসেছেন আবু তালেব (৫০)। এবারই প্রথম এলেন। এ মাঠের ঐতিহ্য সুনামের কথা তিনি অনেক শুনেছেন। আশা ছিল আসবেন, কিন্তু আসতে পারেননি। তিনি বলেন, গত বছরও আমার বাবা ঈদের নামাজ পড়তে এসেছিলেন। তিনি মারা গেছেন সম্প্রতি। তাই বাবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এসেছি। এত মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করে ভালো লেগেছে। আগামীতে ছোট ভাইকে নিয়ে আসব।
ময়মনসিংহের নান্দাইলের মুসল্লির বাসিন্দা আরাফাত মিয়া (৩২) তিন বছর ধরে ঈদে শোলাকিয়ায় আসেন। তিনি বলেন, এবার নিয়ত করেছিলাম। হেঁটে শোলাকিয়ায় গিয়ে নামাজ আদায় করব। ফজরের নামাজ পড়েই রওনা হয়েছি। জামাতের আগে পৌঁছে গেছি।
তিনি আরো বলেন, বড় জামাতে নামাজে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এ কারণে নিজে থেকে কষ্ট করে এসে ঈদ জামাতে অংশ নিয়েছি।
দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী এবারও শোলাকিয়ার ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিটি আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়। এটি নামাজ শুরু করার সংকেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, এবার পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন বলে আমাদের ধারণা। এবারের জামাতের ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই ভালো। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে মুসল্লিদের।
ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। নামাজ শেষে জামাতে আসা যাত্রীদের নিয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে যায় ট্রেন দুটি।
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া মাঠ। এর আয়তন ৭ একর। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই মাঠে বিশাল ঈদের নামাজের জামাত হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ঈদের প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে।