সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং সিনেমা আমাদের বাস্তব জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দেয়। সিনেমা কাল্পনিক উপস্থাপনের মাধ্যমে দর্শকদের শুধু মুগ্ধই করে না, বরং অনুপ্রাণিতও করে। কখনো ভাবায়, কখনো বা আবেগে ভাসায়। আর সেই সিনেমা যদি তৈরি হয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে, তাহলে তা হয়ে উঠে শিক্ষনীয়।
ইতিহাস, বীরত্ব, সংগ্রাম কিংবা বেঁচে থাকার লড়াই—এইসব গল্প যখন রূপালী পর্দায় উঠে আসে তখন তা শুধু সিনেমা নয়, হয়ে ওঠে এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। তবে কিছু গল্প যেমন হুবহু সত্য ঘটনা থেকে নির্মিত, আবার কিছু গল্প নেওয়া হয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা বিভিন্ন বই-উপন্যাস থেকে। যেগুলো সত্য ঘটনার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই ধরা হয়।
রুপালী পর্দায় সত্য ঘটনা অবলম্বনে অসংখ্য সিনেমা নির্মিত হয় প্রতি বছর। যেখানে উঠে আসে বাস্তব জীবনের সত্য। পর্দায় গল্প আকারে হাজির হলেও বাস্তবে রয়েছে তার অস্তিত্ব। যা গল্প হলেও সত্যি। আজকের আয়োজনে থাকছে এমন এক সিনেমার গল্প যা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। আজকের গল্প ‘মঞ্জুম্মেল বয়েজ’-কে ঘিরে।
আরো পড়ুন
‘১২৭ আওয়ারস’ : মৃত্যুর দুয়ারে টিকে থাকার এক অবিশ্বাস্য লড়াই
‘মঞ্জুম্মেল বয়েজ’ একটি বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত মালয়ালম ভাষার চলচ্চিত্র। ২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অসাধারণ সারভাইভাল থ্রিলারটির নির্মিত হয়েছে কেরালার কোচির মঞ্জুম্মেল এলাকার একদল বন্ধুকে ঘিরে, যারা মজার ছলেই কোড়াইকানালের বিখ্যাত ‘গুনা গুহা’ ঘুরতে যায়। এই গুহা একদিকে যেমন রহস্যময়, তেমনই বিপজ্জনক। একে শয়তানের গুহাও বলা হয়।
বন্ধুরা যখন সেখানে দলবেঁধে অ্যাডভেঞ্চারের মজা নিতে ব্যস্ত, তখন তাদের একজন, সুবি (শ্রীনাথ ভাসি অভিনীত চরিত্র) হঠাৎ করেই দুর্ঘটনাবশত গুহার গভীরে পড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দঘন ভ্রমণ রূপ নেয় এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে। এরপর শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। টান টান উত্তেজনায় এগিয়ে যায় গল্প।
গুহার গভীরে পড়ে যাওয়া সুবিকে উদ্ধারের জন্য বাকি বন্ধুরা আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু সমস্যা একটাই—গুহাটি এতটাই গভীর ও সংকীর্ণ যে কোনো সাধারণ উপায়ে সেখানে নামা সম্ভব নয়। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীদের সাহায্য পেতে দেরি হওয়ায় বন্ধুরা নিজেরাই উদ্ধারের পরিকল্পনা করতে শুরু করে। এই সময়েই বন্ধুত্বের প্রকৃত পরীক্ষা শুরু হয়। একজন বন্ধুর জীবন বাঁচাতে অন্যরা নিজের জীবন বাজি রেখে চেষ্টা চালিয়ে যায়। কীভাবে তারা এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করল, কিভাবে সুবিকে জীবিত উদ্ধার করল! জানতে হলে দেখে নিন চমৎকার মালয়ালম এ সিনেমাটি।
আরো পড়ুন
১২০ কোটি কর দিলেন, গতবছর কত আয় করেছেন অমিতাভ?
২০০৬ সালে ঘটে যাওয়া বাস্তব এই ঘটনায়, সেই বন্ধু দলের সদস্য সিজু ডেভিস অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ১২০ ফুট গভীর ফাটল থেকে তার বন্ধু সুবাসকে বাঁচিয়েছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সিনেমার কারণে সেই ঘটনা আবারও আলোচনায় এসেছে, যেখানে তামিলনাড়ুর স্বরাষ্ট্র সচিব পি. আমুধা রাজ্যের পুলিশ মহাপরিচালককে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গুনা গুহায় ঘুরতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৬ জনেরও বেশি পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন।
এর আগে, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গুহায় পড়ে যাওয়া সেই সুবাস জানিয়েছেন, তিনি সেই গুনা গুহায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা করেন আজও। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অনুশোচনা তো করি। তবে এখন আমি দেখছি, আমার গল্প থেকে মানুষ অনুপ্রেরণা নিচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি বিপদে পড়া মানুষদের উৎসাহ জোগাতে সহায়তা করছে। এছাড়াও, পুরনো বন্ধুরা আবার যোগাযোগ শুরু করেছে। আগে আমি ভাবতাম, কেন আমি বেঁচে গেলাম! এখন আমি বুঝতে পারছি – হয়তো অন্যদের আশার আলো দেখানোর জন্য বেঁচেছি আ। আমি এর জন্য ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আরো পড়ুন
কেউ বাদ নেই! ডেটিং প্রসঙ্গে কার্তিককে খোঁচালেন নোরা ফাতেহি
চিদাম্বরমের পরিচালনায় ‘মঞ্জুম্মেল বয়েজ’ মুক্তি পায় ২০২৪ সালে। সিনেমাটিতে অভিনয় করা প্রতিটি চরিত্রই বাস্তবধর্মী ও প্রাণবন্ত ছিল পর্দায়। বিশেষ করে শ্রীনাথ ভাসি, সৌবিন শাহির, দীপক পরমবল, বালু ভার্গিসদের বন্ধুত্বের যে আবেগ ফুটিয়ে তুলেছেন, তা দর্শকের মনে গভীর দাগ কাটে। পরিচালক চিদাম্বরম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গল্পটিকে পর্দায় উপস্থাপন করেছেন। সিনেমার টানটান উত্তেজনা, আবেগ ও বাস্তববাদী উপস্থাপন সিনেমাটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মাত্র ২০ কোটি বাজেটে নির্মিত সিনেমাটি ২৪২ কোটি টাকা আয় করে বক্স অফিসের পাশাপাশি দর্শক সমালোচকদের মনও জয় করেছে।