আসছে গরমের দিন। এই সময়ে শরীরের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা। তবে কখনো কখনো এই গন্ধের জন্য অনেকেই বিব্রতকর সমস্যায় পড়েন। যদিও খারাপ স্বাস্থ্যবিধি, পোশাক পছন্দ ও মেডিকেল কন্ডিশন এর নেপথ্য কারণ হতে পারে।
আসছে গরমের দিন। এই সময়ে শরীরের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা। তবে কখনো কখনো এই গন্ধের জন্য অনেকেই বিব্রতকর সমস্যায় পড়েন। যদিও খারাপ স্বাস্থ্যবিধি, পোশাক পছন্দ ও মেডিকেল কন্ডিশন এর নেপথ্য কারণ হতে পারে।
স্ট্রেস হরমোনের উচ্চ কর্টিসল অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি শরীরের দুর্গন্ধের কারণও হতে পারে। জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্টিসলের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
কর্টিসল হলো স্ট্রেসের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত একটি হরমোন। এটি বিপাক নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার মাত্রা ও স্ট্রেসের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া পরিচালনা করার মতো বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে দীর্ঘস্থায়ী চাপ বা অন্যান্য কারণে যখন কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন এটি শরীরে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। এই ভারসাম্যহীনতার ফলে অতিরিক্ত ঘাম, শরীরের দুর্গন্ধ, ওজন বৃদ্ধি ও হজমের সমস্যার মতো শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
সূর্যের আলোর সংস্পর্শে দিন শুরু করুন
সকালের সূর্যের আলো সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা কর্টিসল উৎপাদনে সহায়তা করে। এই প্রাকৃতিক আলোর সংস্পর্শে সেরোটোনিনও বৃদ্ধি হয়, যা সারা দিন ধরে চাপের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। সকালে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার চেষ্টা করুন।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়ে দিন শুরু করুন
ভেজা বাদাম ও আখরোটের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করলে তা কর্টিসলের মাত্রাসহ হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে।
খাবারের আগে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন
খাওয়ার আগে ৩-৪ রাউন্ড গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরের চাপের প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে এবং কর্টিসলের মাত্রা কমায়। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস শরীরকে শিথিল করে এবং হজমে সহায়তা করে। ঘাম ও শরীরের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী স্ট্রেস হরমোনের সক্রিয়তা রোধ করে।
সন্ধ্যায় ক্যামোমাইল চা পান করুন
ক্যামোমাইল চায়ের শান্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চাপ ও কর্টিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে সন্ধ্যায়। ঘুমানোর আগে এক কাপ ক্যামোমাইল চা পান করলে ভালো ঘুমও হতে পারে, যা হরমোনের ভারসাম্যের জন্য অপরিহার্য।
খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন
ম্যাগনেসিয়াম হলো একটি খনিজ, যা শরীরকে শিথিল করতে এবং কর্টিসল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কলা, কুমড়োর বীজ ও বাদামের মতো খাবার ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ। খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো যোগ করলে তা চাপ ও শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
কর্টিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো ঘুম। ঘুমের অভাব কর্টিসোল উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। কর্টিসলের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে এবং শরীরের দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা বিশ্রামের ঘুমের চেষ্টা করুন।
সারাদিন হাইড্রেটেড থাকুন
ঘাম ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ শরীরের সর্বোত্তম কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরের দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং দুর্গন্ধ কমাতে সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন।
সম্পর্কিত খবর
সেমাই ছাড়া ঈদ, কল্পনাই করা যায় না। ঈদে সবার বাড়িতেই বিভিন্ন মিষ্টান্নের আয়োজন থাকে। আর সেমাই এই জায়গায় সবার আগে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন পদের সেমাই খেতে খেতে একঘেয়েমি চলে আসে।
কুনাফা
কুনাফা হলো আরব বিশ্বের ঈদ উৎসবের এক বিশেষ মিষ্টি, যা ক্রিসপি কাতাইফি বা সেমাইয়ের স্তর এবং ক্রিমি পনির দিয়ে তৈরি হয়। এটি প্রস্তুতের জন্য প্রথমে সেমাইগুলোকে গলানো মাখন দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া হয়, যাতে তা সম্পূর্ণ ভিজে যায়।
তারপর বাকি সেমাই পনিরের ওপর ঢেকে দেওয়া হয় এবং ওভেনে ৩০ মিনিটের জন্য বেক করা হয়। বেক করার পর, একপাশ লালচে হয়ে গেলে কুনাফার ওপর সুগন্ধি সিরাপ ঢেলে দেওয়া হয়, যা চিনির সিরাপ, গোলাপজল এবং অল্প লেবুর রস দিয়ে তৈরি। কুনাফার ওপর পেস্তা বাদাম ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়।
সেমাইয়ের নাড়ু
উপকরণ
১০০ গ্রাম ভার্মিসিলি সেমাই, ১/২ কাপ কনডেন্স মিল্ক, ১/২ কাপ নারকেল কোরা, ২ টেবিল চামচ ঘি, ৩টা এলাচ, ২টা তেজপাতা ও ১ টেবিল চামচ চিনাবাদাম (খোসা ছাড়ানো)।
রান্নার প্রণালী
সেমাইগুলো ভেঙে ছোট করে নিন। প্যানে এক টেবিল চামচ ঘি গরম করে সেমাই ভেজে নিন। একটা বাটিতে সেমাই তুলে নিন।
সেমাইয়ের বরফি
উপকরণ
৪ জনের জন্য ২ কাপ লম্বা সেমাই, ২৫০ গ্রাম লিকুইড দুধ, পরিমাণমতো চিনি, পছন্দমতো বাদাম, ১/২ কাপ গুঁড়া দুধ, একচিমটি লবন, ২ চা চামচ ঘি, ফুড কালার (ঐচ্ছিক), ২ টুকরা দারুচিনি, ২টা এলাচ ও ২টা তেজপাতা।
রান্নার প্রণালী
চুলায় পাতিল বসিয়ে ঘি দিয়ে গরম করে নিন। এবার দারুচিনি এলাচি তেজপাতা দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। এবার সেমাইগুলো ছোট ছোট করে পাতিলে দিয়ে ভেজে নেবেন। মুচমুচে ভাজা হয়ে গেলে তাতে লবণ লিকুইড দুধ আর চিনি দিয়ে দিন। ১ মিনিট রান্না করার পর বাদাম দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। যখন পাতিল এর ঘা ছেড়ে আসবে তখন নামিয়ে নিন।
এবার যে প্লেটে বরফি বসাবেন সেটাতে হালকা ঘি ব্রাশ করে নিন। এবার তাতে সেমাই ডেলে দিয়ে ওপরে কিছু গুঁড়া দুধ দিয়ে দিন। এবার পছন্দমতো সাজিয়ে নিন। একটু গরম থাকা অবস্থায় বরফিটা কেটে নেবেন। ঠাণ্ডা হওয়ার পর পরিবেশন করুন মজাদার সেমাইয়ের বরফি।
ভুনা সেমাই
উপকরণ
১ প্যাকেট লাল সেমাই, ১টি বড় নারকেল কোরানো, ১ কাপ তরল দুধ, চিনি পছন্দমতো, লবণ, কিশমিশ, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও ৪ চা চামচ ঘি বা তেল।
রান্নার প্রণালী
পানি ফুটিয়ে সেমাই ছেড়ে দিয়ে একবার বলক এলেই ছেঁকে নেবেন। পেনে তেল বা ঘি গরম করে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা দিয়ে দিন। তারপর সেমাই ও নারকেল দিয়ে নেড়ে চিনি দিয়ে নেড়ে নিন। এবার ১ কাপ দুধ ও লবণ দিয়ে মিশিয়ে ঢেকে ২ মিনিট রাখুন। ঢাকনা খুলে নেড়েচেড়ে ভুনা ভুনা করে কিশমিশ মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
সেমাই কাস্টার্ড
উপকরণ
১/২ কাপ লাল সেমাই, ১ লিটার তরল দুধ, ১ কাপ চিনি, লবণ সামান্য, ১টি তেজপাতা, ২ চা চামচ কাস্টার্ড পাউডার
টুকরা ও পছন্দমতো ফল।
রান্নার প্রণালী
দুধ জ্বাল দিয়ে তেজপাতা ও চিনি দিয়ে নেড়ে নিন। তারপর সেমাইগুলো অল্প পানিতে একটু ভাপিয়ে নিয়ে দুধে ছেড়ে দিন। সামান্য লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন, তবে বেশি ঘন করবেন না।
১/৪ কাপ তরল দুধে কাস্টার্ড পাউডার গুলে নিন। অল্প অল্প করে গোলানো কাস্টার্ড সেমাইয়ে দিন এবং সাবধানে নাড়তে থাকুন। সবটুকু কাস্টার্ড দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নামিয়ে নিন। বেশি ঘন করবেন না, সেমাই ঠাণ্ডা হলে এমনিতেই ঘন হয়ে যাবে।
এবার পছন্দমতো ফল, যেমন— পেঁপে, কলা, আপেল টুকরো করে সেমাইতে গরম থাকতেই দিয়ে দিন। মেশানোর পর একটু ঠাণ্ডা হলে ডিশে তুলে ফ্রিজে রেখে দিন। পুরোপুরি ঠাণ্ডা হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ঈদ কিংবা অন্য যেকোনো উৎসবে, অতিথি আপ্যায়নে সেমাই পছন্দের তালিকায় সবসময় একটু ওপরে থাকে। সেমাই ছাড়া তো ঈদ কল্পনাই করা যায় না। আর তাই আজকে হরেক পদের সেমাই রেসিপি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি। পরিবার পরিজনের সঙ্গে এবার ঈদে আনন্দটুকু আরো গাঢ় করতে রান্না করতে পারেন পছন্দসই মজাদার হরেক পদের সেমাই।
সেমাই শনপাপড়ি
উপকরণ
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে একটি ননস্টিক পাত্রে ঘি গরম করে নিন। এবার সেমাই ছোট ছোট করে ভেঙে গরম ঘিয়ে দিয়ে মৃদু আঁচে ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। সেমাই লালচে হয়ে এলে এতে চিনি, কনডেন্সড মিল্ক ও বাদাম-কিশমিশ মিশিয়ে আঠালো হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
এবার একটি সমান ট্রেতে সামান্য ঘি মেখে সেমাইগুলো ঢেলে চেপে চেপে সমান করে নিন। ফ্রিজে ১ ঘন্টা জমাট বাঁধার জন্য রেখে দিন। এরপর ছোট ছোট টুকরো করে কেটে দুধের গুঁড়ো দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার সেমাই শনপাপড়ি।
সেমাই কেক
উপকরণ
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে তেল দিয়ে সেমাই হালকা বাদামি করে ভেজে রাখুন। এরপর ডিমগুলো হাতে অথবা এগ বিটারে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। সঙ্গে বাটার, চিনি ও দুধ মিশিয়ে আবার ফেটাতে থাকুন। এরপর মিশ্রণের সঙ্গে সেমাই, বেকিং পাউডার ও কাজু কিশমিশ মিশিয়ে নিন। এখন কেকের পাত্রে হালকা তেল মেখে সেমাই মিশ্রণটি ঢেলে ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৪৫ মিনিট বেক করুন।
যদি ওভেন না থাকলে চুলায় তাওয়ার ওপরে পাত্রটি রেখে মৃদু আঁচে ঢেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তৈরি হয়ে গেলে সার্ভিং ডিশে চেরি দিয়ে পরিবেশন করুন মজার সেমাই কেক।
সেমাইয়ের মালাই ক্ষীর
উপকরণ
প্রস্তুত প্রণালি
সর্বপ্রথম বাদাম গুলো খোসা ছাড়িয়ে মোটা কুচি করে নিন। এরপর দেড় লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে অর্ধেকের কম পরিমাণ করে রাখুন। এবার প্যানে ঘি দিয়ে গরম করুন। এলাচ দারুচিনি দিয়ে একটু ভাজুন। এবার বাদাম কুচি, কিশমিশ ও সেমাই দিয়ে দিন এবং মৃদু আঁচে হালকা ভাজুন। ঘ্রাণ ছাড়লেই ঘন দুধ দিয়ে দিন।
সেমাই সিদ্ধ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুধ ঘন হয়ে আসবে। সেমাই সিদ্ধ হয়ে গেলে মালাই দিয়ে দিন; জাফরান দিন। এরপর ভালো করে মিশিয়ে চুলা বন্ধ করে ফেলুন। এরপর ছোট ছোট বাটিতে এই ক্ষীর সাজান। এরপর ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে বাদাম ও কিশমিশ ছিটিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার সেমাইয়ের মালাই ক্ষীর।
সেমাই জর্দা
উপকরণ
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে চুলায় কড়াই বসান। এরপর কড়াইতে ঘি দিয়ে গরম করুন। ঘি সামান্য গরম হলে ঘি দিন। এবার প্যাকেট সেমাইয়ের অর্ধেকটা ঘিয়ে ঢেলে দিয়ে ১০/১৫ মিনিট নাড়ুন যাতে সেমাইটা ঘিয়ে ভাজা হয়। এরপর এতে কুড়ানো নারকেল দিয়ে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকুন। পানি শুকিয়ে আসলে বাদাম, কিশমিশ, তেজপাতা, দারুচিনি দিয়ে ১০ মিনিট জালে দমে রাখুন। সেমাই ঝরঝরে হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার সেমাই জর্দা।
দুধ সেমাই
উপকরণ
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে এক লিটার দুধ ভালো করে গরম করে কমাতে থাকুন, তাতে হাফ কাপ চিনি দিয়ে দিন। এরপর এক এক করে এলাচি, দারুচিনি এবং থাকলে একটা তেজপাতা দিন। এরপর খালি একটা গরম কড়াইতে সেমাইগুলো ভেজে নিন। মচমচে হলে তা গরম দুধে ঢেলে দিন। হালকা গরম থাকতেই পরিবেশন করুন মজাদার দুধের সেমাই।
পবিত্র রমজান মাস শেষে মুসলমানরা ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগি করেন। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও ঈদের আনন্দের রূপ একই। ঈদের দিনে খাবারের আয়োজন বিশেষ গুরুত্ব পায়। গৃহিণীরা নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি করেন, বিশেষ করে পোলাও ও মিষ্টি।
দক্ষিণ এশিয়া
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের জন্য ঈদ মানে মিষ্টিজাতীয় খাবারের আয়োজন। ঈদের দিন সকালে সাধারণত ঘিয়ে ভাজা বা দুধে ভেজানো সেমাই দিয়ে দিন শুরু হয়।
রাশিয়া
রাশিয়ার মুসলিমদের মধ্যে ঈদের দিনে জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ‘মানতি’ (যা আমরা মোমো বা ডাম্পলিং নামে চিনি)।
একটি ছোট আটার পুঁটলির মধ্যে ভেড়া বা গরুর মাংসের কিমা দিয়ে ভাপে সিদ্ধ করা হয়।
চীন
চীনে মুসলিমদের জন্য 'শানজি' নামে এক ধরনের নুডলস খুব জনপ্রিয়। ময়দার কাই দিয়ে মোটা করে নুডলস বানিয়ে তেলে ভাজা হয়। তারপর পিরামিডের মতো সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। সস দিয়ে খেতে খুবই মজা শানজি।
মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননে ‘মামোউল’ কুকি খুব জনপ্রিয় ঈদের মিষ্টি। খেজুর, আখরোট, পিস্তাচিও, মাখন দিয়ে তৈরি কুকির মধ্যে চিনির গুঁড়ো মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় এটি। ইরাক, সুদান, মিসরেও প্রায় একই ধরনের কুকি দেখা যায়, তবে এগুলোর নাম ভিন্ন।
মিসর
মিসরে ঈদের দিনে ‘ফাতা’ নামে একটি বিশেষ খাবার তৈরি হয়। যেখানে ভাত, মাংস, পেঁয়াজ ও ভিনেগারের মিশ্রণ থাকে। গরম গরম পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া ‘কাহক’ নামক বিস্কুটও মিসরীয়দের জন্য ঈদের গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার।
তুরস্ক
তুরস্কে ঈদকে ‘সেকের বায়রামি’ বলা হয়। এ দেশে ঈদের একটি বিশেষ মিষ্টি খাবার হলো ‘লোকুম’ (টার্কিশ ডিলাইট)। এটি বরফ আকৃতির মিষ্টি, যা শিশুদের মাঝে খুব জনপ্রিয়।
ব্রিটেন
ব্রিটেনের মুসলিমদের মধ্যে ঈদের দিনে বিরিয়ানি খুব জনপ্রিয়। মাংস, চাল ও মসলার সংমিশ্রণে বিরিয়ানি তৈরি হয়। দই ও পুদিনার চাটনির সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করা হয়।
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় ঈদে মাংসপিঠা খুব জনপ্রিয়। যা মাংস ও সবজি দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং চিনির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
মরক্কো
মরক্কোর ‘তাজিনে’ একটি ঝাল মাংসের রেসিপি। যা এক ধরনের স্ট্যু জাতীয় খাবার। ভেড়া বা গরুর মাংসের সঙ্গে নানা ফল ও সবজি থাকে তাজিনের মধ্যে।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার প্রধান ঐতিহ্যবাহী ঈদের খাবার হলো ‘কেটুপাত’। এটি পামগাছের পাতায় মোড়া চালের আটার পিঠা। যা মাংসের বিভিন্ন আইটেমের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে ঈদের দিনের বিশেষ খাবার হলো ‘বোলানি’। যা আলু, ডাল ও অন্যান্য সবজির পুর দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি টক দই দিয়ে পরিবেশন করা হয়। ঈদ ছাড়াও ইফতারে এটি খুব জনপ্রিয়।
সূত্র : ফুড নেটওয়ার্ক
ঈদ-উল-ফিতর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যা আনন্দ, সম্প্রীতি ও পারিবারিক মিলনের এক অনন্য উপলক্ষ। যদিও ঈদের মূল অনুভূতি সবার জন্য একই তবে শহর ও গ্রামে উদযাপনের ধরনে কিছু পার্থক্য দেখা যায়।
শহরের ঈদ আধুনিক জীবনযাত্রার ছোঁয়া পেলেও গ্রামে ঈদের উৎসব ঘনিষ্ঠতা ও ঐতিহ্যের রঙে রাঙানো থাকে।
প্রস্তুতি ও কেনাকাটা
শহরে ঈদের প্রস্তুতি বেশ আগে থেকেই শুরু হয়। শপিং মল, মার্কেট, ফুটপাত—সব জায়গায় কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়।
অন্যদিকে, গ্রামে ঈদের প্রস্তুতি একটু ভিন্ন। গ্রামের মানুষ শহরের মতো অত বেশি কেনাকাটা না করলেও, স্থানীয় হাট-বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নেয়। বাড়ির সেলাই মেশিনেই অনেকে নতুন কাপড় তৈরি করে নেয়।
সাহরি ও রমজানের শেষ মুহূর্ত
শহরে রমজানের শেষ সাহরি বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে হয়। অনেকেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে সাহরি খায়। রোজার শেষ দিকে শহরের রাতগুলো অনেক বেশি জমজমাট হয়ে ওঠে। গ্রামে সাহরি একটু অন্যরকম। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে সাহরি খায়।
ঈদের নামাজ
শহরে ঈদের নামাজ সাধারণত বড় মসজিদ কিংবা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। অনেক জায়গায় একাধিক জামাত হয়, কারণ মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে।
অন্যদিকে, গ্রামে ঈদের জামাত হয় খোলা মাঠে বা বড় মসজিদের সামনে।
সামাজিক মেলবন্ধন
শহরে ঈদের দিনে সবাই বাসায় থাকে। আত্মীয়-স্বজনরা একে অপরের বাসায় বেড়াতে যায়। সময়ের অভাবে সবার সাথে দেখা করা বা সবার বাসায় যাওয়া হয় না।
গ্রামে ঈদের আনন্দ আরো বেশি সামাজিক। সবাই সবার বাড়িতে যায়, ছোট-বড় সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে। প্রতিবেশীদের মধ্যে আন্তরিকতা থাকে বেশি। শহর বা বিদেশ থেকে যারা গ্রামে ঈদ করতে যায়,তাদের জন্য ইদের আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠে।
খাবার ও মিষ্টান্ন
শহরে ঈদের খাবারে থাকে সেমাই, ফিরনি, কুনাফা পোলাও, মাংস, রোস্ট, কোর্মাসহ নানা রকম কাবাব।
গ্রামে ঈদের রান্নার মধ্যে থাকে ঐতিহ্যবাহী পিঠা, পায়েস, দধি, এবং দেশি মুরগির বিশেষ রান্না। বেশিরভাগ খাবারই ঘরেই তৈরি হয় এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ভাগ করা হয়।
বিনোদন ও উৎসবের পরিবেশ
শহরে ঈদ কাটে মূলত আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়া, সিনেমা দেখা বা ঘুরতে বের হওয়ার মধ্যে। অনেকেই ঈদের ছুটিতে শহরের বাইরে বেড়াতে যায়।
গ্রামে ঈদ মানেই এক অন্যরকম উৎসব। ঈদের দিন মাঠে খেলাধুলা, হা-ডু-ডু, লাঠি খেলা, নৌকা বাইচ ইত্যাদির আয়োজন হয়। এইসব খেলা গ্রামের ঈদকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে।
শহর ও গ্রামের ঈদ উদযাপনের ধরন আলাদা হলেও মূল অনুভূতি এক—সুখ, শান্তি ও পারস্পরিক ভালোবাসা। শহর বা গ্রাম, যেখানেই হোক না কেন, ঈদ সবার জন্য নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা।