<p style="text-align:justify">বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস, যা প্রতি বছর আজকের দিনে (২৮ জুলাই) পালন করা হয়, আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্বকে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। এই দিনটি সংরক্ষণ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এবং সারা বিশ্বের  ব্যক্তি মানুষ, সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রকে আমাদের পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করার জন্য নিবেদিত। আমরা যখন বিশ্ব সংরক্ষণ দিবস ২০২৪-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন আমাদের বর্তমান বিশ্বের অবস্থা অর্থাৎ আমাদের প্রকৃতির যে দুর্দশা, আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন এবং সকল জীবনের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্মিলিত পদক্ষেপগুলির প্রতিফলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p style="text-align:justify">সংরক্ষণ বহুমাত্রিক  কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে যা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং তার সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। এতে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষা এবং পরিবেশে মানব প্রভাবের নিরসন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংরক্ষণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, কারণ এটি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে, বিভিন্ন প্রজাতির জীবনের টিকে থাকার নিশ্চয়তা দিতে এবং আমাদের প্রকৃতির সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ সমর্থনে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ একটি জীবন্ত ডেলটা, বৈচিত্র্য পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র সমৃদ্ধ। এই বাস্তুতন্ত্রে বাস করে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী। এখন অবধি বাংলাদেশ মুলতঃ কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশের মাটি ও পানি অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় আজও অত্যন্ত সক্ষমভাবে বাংলাদেশ ১৭৪.৮২ মিলিয়ন জনসংখ্যার খাদ্য জুগিয়ে চলছে। ফলাফলে ক্রমবর্ধমান হারে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বাড়ছে।বিনষ্ট হচ্ছে বন, ঝোপঝাড়, নিবাসগত ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে বিলুপ্তি ঝুঁকিতে আসা উদ্ভিদ, প্রাণী, কীট পতঙ্গের সংখ্যা প্রতি মুর্হূতে বেড়ে চলছে। যা প্রকৃতির স্বাভাবিক স্বাস্থ্যমান অবনয়ন করছে।বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস উদযাপন বাংলাদেশের জন্য বহুমুখী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমতঃ এ দিবস পালন আমাদের দেশের পরিবেশের ঝুঁকি সমূহকে নতুনভাবে আবিষ্কার, অনুধাবন ও অনুভবের প্রেক্ষাপট তৈরীর সহায়ক। বন বিনষ্ট, নিবাস ধব্বংস,জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতসহ দ্রুত বিকাশমান নগরায়ন, শিল্পায়ন, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা যা আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে বিনাশের কারণ.. এ সংশ্লিষ্ট চিন্তাগুলোকে উস্কে দেয়, আমাদের ভাবায়। </p> <p style="text-align:justify">এছাড়াও, এই দিনটি সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের গুরুত্বকে তুলে ধরে। বাংলাদেশে, স্থানীয় সম্প্রদায়গুলি  ও  গ্রামাঞ্চচলে বসবাসকারী প্রায়ই পরিবেশগত অবক্ষয়ের প্রভাব প্রথমে অনুভব করে, ক্ষতিগ্রস্ত সবচেয়ে তারাই হয় এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও অভ্যাস স্থানীয়ভাবে টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস উদযাপন স্থানীয় সম্প্রদায়কে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার সুযোগ তৈরি করে শিক্ষামূলক কর্মশালা, উঠান বৈঠক এবং প্রচারমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে । ইহা নাগরিকদের তাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের মূল্য অনুধাবনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।</p> <p style="text-align:justify">বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসের উদযাপন প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধাগুলিও তুলে ধরে। সুন্দরবন ও হাওর বেসিনের মতো প্রকৌশল ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ পরিসেবাগুলি যেমন জল পরিশোধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং কার্বন সঞ্চয় প্রদান করে, যা সম্প্রদায়ের ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। প্রকৃতির স্বাস্থ্য এবং মানব মঙ্গলে নিহিত এ  সম্পর্কের উপর জোর দিয়ে, এই দিবসটি নিশ্চিত করে যে, সংরক্ষণ শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ও। প্রকৃতি সংরক্ষণের কার্যকর  কৌশলগুলি টেকসই জীবিকা সৃষ্টির, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি উন্নত সহনশীলতা এবং বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">তদুপরি, বিশ্ব প্রাকৃতি সংরক্ষণ দিবস বাংলাদেশের সংরক্ষণ ক্ষেত্রের সাফল্য এবং অগ্রগতির উদযাপনের একটি সুযোগ প্রদান করে। এটি সফল উদ্যোগ গুলোকে জনসম্মুখে নিয়ে আসার সুযোগ করে দেয় (যেমনঃ শুকুনদের প্রকৃতিতে সফল পুর্নবাসন প্রকল্প)। তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতি সংশ্লিষ্ট জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে,সম্পৃত্ত হতে শেখায়,প্রকৃতির দায়িত্ব নিতে উদ্বুদ্ধ করে।</p> <p style="text-align:justify">পরিশেষে, প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসের মুল উপজীব্যকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় তুলে ধরে এর তাৎপর্য অনুধাবনের দায়িত্ব পাঠককে দিতে চাই  "অবশেষে সব কাজ সেরে, আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আর্শীবাদ, তারপর হব ইতিহাস। "</p> <p style="text-align:justify">লেখকঃ <strong>পরিচালক, পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট <br /> রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়<br /> ই-মেইল : drsabrina_naz@ru.ac.bd</strong></p>