<p>হাত ধোয়া চর্চায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ৩৮ শতাংশ পরিবারের এখনো হাত ধোয়ার মৌলিক পরিবেশ নেই। বাড়ির বাইরে বিশেষ করে দেশের হাসপাতালগুলোতে এর ঘাটতি আরো ব্যাপক। ৩৪ শতাংশ হাসপাতালে হাত জীবাণুমুক্ত রাখার মৌলিক ব্যবস্থা থাকলেও ৬৩ শতাংশ হাসপাতালে এই সুযোগ সীমিত। ৩ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকে এর কোনো কিছুই নেই। হাত ধোয়া চর্চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ তথ্যে বাংলাদেশেও এমন চিত্র দেখা গেছে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসাবাড়ি, হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও অন্যান্য জনপরিসরে হাত ধোয়ার অভ্যাস জরুরি। আগামী মহামারি থেকে বাঁচতে হলে হাত ধোয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে।</p> <p>এমন প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস। সাধারণ মানুষকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধ করার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিচ্ছন্ন হাত কেন এখনো গুরুত্বপূর্ণ’।</p> <p>দিবসটি উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’ যথাযথভাবে পালন ও হাইজিন প্রসারের সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”</p> <p>জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, পানি-স্যানিটেশন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি একে অন্যের পরিপূরক। সে জন্য অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে হাসপাতালে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। তিনি বলেন, হাসপাতালে হাত ধোয়ার সুবিধা না থাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। ভর্তি রোগীরা দেরিতে সুস্থ হচ্ছে। এ জন্য হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, রোগী, রোগীর আত্মীয়-স্বজন প্রত্যেকের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার।</p> <p><strong>গ্রামে ৪২% পরিবার হাত ধোয়ার সুবিধাবঞ্চিত</strong></p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে হাত ধোয়া চর্চায় সর্বনিম্ন অবস্থানে আফগানিস্তান। দেশটির গড়ে ৪৮ শতাংশ পরিবারে হাত ধোয়ার মৌলিক পরিবেশ আছে। বাংলাদেশে এ হার ৬২ শতাংশ। শহরে ৬৮ শতাংশ ও গ্রামে ৫৮ শতাংশ। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। দেশটির ৯৩ শতাংশ পরিবারের হাত ধোয়ার মৌলিক পরিবেশ আছে। শহরে ৯০ ও গ্রামে ৯৬ শতাংশ। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এ হার ৮৫ শতাংশ। আর ভারতে ৭৬ ও নেপালে ৬৪ শতাংশ।</p> <p><strong>সবচেয়ে ভয়াবহ সরকারি হাসপাতালে </strong></p> <p>রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় লেগেই থাকে। অথচ হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে (ওসেক), ইমার্জেন্সি অপারেশন রুম, এক্স-রে রুম, সিটি স্ক্যান রুম এবং অবজারবেশন রুমের কোথাও টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।</p> <p>সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা মুনজুর হোসেন বলেন, এত বড় হাসপাতাল অথচ হাত-পা ধোয়ার ব্যবস্থা নেই, টয়লেট নেই! ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোও ব্যবহার করার উপযোগী নয়। একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতালে।</p> <p><strong>হাত জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরি </strong></p> <p>রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও ঢামেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার বলেন, ‘আমাদের হাত অসংখ্য জিনিস স্পর্শ করে। যখন আমরা আমাদের মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করি, তখন জীবাণুগুলো আমাদের শরীরে ঢুকে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। সর্দি, কাশি, ফ্লু থেকে শুরু করে ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, কভিড-১৯-এর মতো গুরুতর রোগ হতে পারে।</p>