<p>দুর্নীতির একটা বড় জায়গা স্বাস্থ্য খাত। গত ১৫ বছরে এই খাতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। অথচ এসব দুর্নীতিবাজরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কেননা, তারা চুরি করেন, দুর্নীতি করেন- কিন্তু প্রমাণ রাখেন না। এই খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষজন মারা যায়। সুতরাং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নীরব গণহত্যা।</p> <p>এসব পরিস্থিতিতে এই বৈষম্যহীন বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। যারা অনিয়ম করেছে সেসব দুর্নীতিবাজদের বিচারের জন্য প্রয়োজনে গণআদালত গঠন করতে হবে। অবিলম্বে সত্যিকারের একটি গণমুখী স্বাস্থ্য নীতি তৈরি করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ স্বাস্থ্য খাত হতে হবে। মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র : স্বাস্থ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক জাতীয় আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।</p> <p>সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. কাজী সাইফউদ্দীন বেননূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুর রহমান।</p> <p>সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. শরমিন্দ নীলোর্মী।</p> <p>অনুষ্ঠানে আলাদা আলাদা তিনটি প্যানেলের আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক, কবি ফরহাদ মজহার, সাবেক এমপি হারুন অর রশিদ, নাগরিক ঐক্যের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, ডা. শামীম হায়দার তালুকদার, আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান, ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ, ডা. মো. আতিয়ার রহমান, শরিফুল ইসলাম খান ববি, পুষ্টিবিদ আসফিয়া আজিম, ছাত্র সমন্বয়কারী উমামাহ ফাতেমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. তৌফিক জোয়ার্দার।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি খুঁজে বের করা জটিল বা কঠিন কোনো কাজ নয়। শ্বেতপত্র তৈরির জন্য হলেও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিগুলোকে চিহ্নিত করা উচিত।</p> <p>তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যনীতি অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন, তবে সেটা যেন কাগুজে স্বাস্থ্যনীতি না হয়। শিক্ষা, গবেষণা ও ‌চিকিৎসায় বৈষম্য দূর করে গণমুখী একটি স্বাস্থ্য কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। যেখানে থাকবে বৈষম্যহীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।</p> <p>বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে দরকার সত্যিকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন বেশকিছু প্রস্তাব করেছিলাম। প্রথম প্রস্তাব ছিল- স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখন সবকিছু এলোমেলো। সবাই সেখানে পদায়ন নিয়ে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের বর্তমান যে দুরাবস্থা তা দূর করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।</p> <p>নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা যখন বলি ‘হেলথ ফর অল’, সেটা মিন করেই বলা উচিত। আমাদের হেলথ পলিসি নেই। জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত, কিন্তু আমাদের তো ১% ও নাই। তারপর আবার দুর্নীতি হলে, থাকলটা কী। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা মনে পড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস খুব ভালো একটা কথা বলেন, আমাদের সমালোচনা করেন। আমি মনে করি, যে ডাক্তারের ফি দিতে পারবে না সেও যেন চিকিৎসা পায়।</p> <p>সমাজ চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার বলেন, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন যে, বাজারই ঠিক করে সবকিছু। আমরা কিন্তু নিজেরাই টিকা বানাতে পারতাম। আমরা তো টেস্ট কিটই বানাতে পারিনি। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা, কৃষি খাত ঠিক না করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক করতে পারব না। শুধু দুর্নীতি ধরেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঠিক করে ফেলা যাবে না, খাদ্য এবং কৃষি ঠিক করতে হবে। আমাদের ডাক্তারদের হতে হবে অ্যাকটিভিস্ট। আমি জানি না ড. ইউনূস কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দ্রুত গড়ে তুলতে হবে।</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে ডা. সাইফুদ্দিন বেননূর বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতে নানামুখী দুর্নীতি হয়েছে। দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পরের দিনই তিতুমীর কলেজের সামনে বুথ তৈরি করে করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা করা হয়। এখানেও দুর্নীতি হয়েছে। এগুলো বন্ধের সময় এসেছে এখন।</p> <p>আইসিডিডিআরবি’র মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের বুদ্ধিভিত্তিক দুর্নীতি হয়। যে কারণে সমস্যাগুলো প্রকাশ পায় না। স্বাস্থ্যের কর্মকর্তারা প্রকাশ করতে দেন না।</p> <p>বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ বলেন, এখন তো শত কোটির নিচে দুর্নীতি হলে তাকে দুর্নীতিই মনে হয় না। মহামারির সময় আমরা যখন মৃতভয় নিয়ে ভীত, তখন মানুষ চুরি করেছে। সে কত জঘন্য চোর! আমরা যখন দেখি, এক একটি প্রতিষ্ঠান কতখানি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, তখন চিকিৎসক হিসেবে লজ্জিত হই।</p>