<p style="text-align:justify">কর্তৃত্ববাদী শক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে একটি সুশাসিত, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত স্বদেশ বিনির্মাণের যে সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেই সুযোগকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকার, রাজনৈতিক দল, জনসাধারণ ও তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীসহ সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্যরা। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ঘটনার জবাবদিহি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">আজ মঙ্গলবার টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ৪৫ জন সদস্যের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সভায় এ দাবি জানানো হয়।</p> <p style="text-align:justify">টিআইবির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস খানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থাপিত সদস্যরা টিআইবি পরিচালিত গবেষণা, অধিপরামর্শমূলক, প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট আর্থিক হিসাবের সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য ও সার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।</p> <p style="text-align:justify">সভার ঘোষণাপত্রে বলা হয়, দেশের স্বাধীকার থেকে শুরু করে সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র দেশ যেভাবে একসঙ্গে লড়েছে, একটি সুশাসিত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেই বন্ধন যেন সুদৃঢ় ও অটুট থাকে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">আরো বলা হয়, শাসনকাঠামোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতিতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে সাধারণ জনগণ দুর্নীতিকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায়, সম্প্রতি দুদকে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়, বরং প্রতিষ্ঠানটিকে জনবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">টিআইবির সদস্যরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো কর্তৃত্ববাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে জনমনে মুক্ত গণমাধ্যম এবং স্বাধীন ও অসংকোচ মত প্রকাশের যে প্রত্যাশার সঞ্চার হয়েছে, তা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোর ন্যায় স্বাধীন মত ও সাংবাদিকতার কারণে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সকলকে উদার ও সহিষ্ণু আচরণ করা হবে।</p> <p style="text-align:justify">ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত জনমনে যে স্বস্তির সঞ্চার করেছিল, সেখানে পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যালোচনা ব্যতিরেকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪’ জারির উদ্যোগ এটির অপব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত প্রদানের পর্যাপ্ত সুযোগ ও তাদের সুপারিশের আলোকে অধ্যাদেশ জারি এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকল আইন, নীতি ও বিধিমালা যথাযথ পর্যালোচনা সাপেক্ষে সংশোধন এবং নতুন সমন্বিত গণমাধ্যম আইন প্রণয়ন করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">টিআইবি সদস্যরা সার্বিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করার আহ্বান জানান যাতে করে পরবর্তী সময়েও সংস্কার কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে না পড়ে এবং এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলসমূহকেও অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।</p> <p style="text-align:justify">একই সঙ্গে মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে সততা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, জবাবদিহি চর্চার মাধ্যমে সকল প্রকার শোষণ ও বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।</p>