<p style="text-align:justify">জাহাজে সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যার এখনো কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে নৌযান শ্রমিকরা নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সরকারের কাছে আলটিমেটাম দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, মাত্র ১০ দিন আগে এমভি আল-বাখেরা নামক কার্গো জাহাজে চাকরি নেন মাগুরার মোহাম্মদপুরের চরযশবন্তপুরের কিশোর মাজেদুল। তার বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত রবিবার সকালে ছেলের সঙ্গে সবশেষ কথা হয়। তখন ছেলে তাকে বলেছিল, বাবা আমার মোবাইলে এমবি নেই। নেটওয়ার্ক পেতে তার কাছে এমবি চাওয়ার পর তা রিচার্জ করে পাঠান তিনি। কিন্তু ওই দিন রাতের পর আর যোগাযোগ নেই ছেলের সঙ্গে।</p> <p style="text-align:justify">নিহত মাজেদুলের বড় ভাই রাইসুল বলেন, ‘আমরা তিন ভাই। সবার ছোট মাজেদুল। এলাকার একটি মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। বার্ষিক পরীক্ষার পর এক প্রতিবেশীর ডাকে জাহাজে খণ্ডকালীন চাকরি নেয়। ১ জানুয়ারিতে বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল ছোট ভাইয়ের। তবে তার আগেই ফিরেছে তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।’</p> <p style="text-align:justify">নিহত সজিবুল ইসলামের স্বজন কাজী এনায়েত হোসেন তুষার বলেন, ‘এটি চুরি কিংবা ডাকাতির কোনো ঘটনা নয়। খুনিরা ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে জাহাজের সবাইকে হত্যা করেছে। কারণ প্রত্যেকের মুঠোফোন, মানিব্যাগ এমনকি জাহাজের কোনো মালামালও নিয়ে যায়নি।’ এমন পরিস্থিতিতে নিহতদের স্বজনরা নির্মম এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে মঙ্গলবার সকালে নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে। এ সময় নিহতদের স্বজনরা সেখানে ভিড় করেন। খুনের প্রকৃত ঘটনা বের করার দাবি জানান তারা। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন দুপুরে মর্গে উপস্থিত থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন। এসময় দাফনের জন্য তাদের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা করে তুলেন দেন। </p> <p style="text-align:justify">অপরদিকে, নৌযান শ্রমিকরা হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সকালে চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এসময় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের অন্যতম নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। পরে নৌযান শ্রমিকরা চাঁদপুর নৌ থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় শ্রমিকরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।</p> <p style="text-align:justify">ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার হাসিবুল আহসান। তিনি বলেন, মাথা এবং মুখমণ্ডলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রতিটি মানুষকে হত্যা করা হয়। তিনি ধারণা করছেন, ঘটনার সময় ওই সাতজনই ঘুমিয়ে ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">নিহত ৭ জনের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া শ্বাসনালি কেটে ফেলার পরও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় জুয়েল রানা (২৮)। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার সেকেন খালাসীর ছেলে। বর্তমানে তিনি ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। জুয়েল রানার শ্বাসনালীতে একটি টিউব যুক্ত করা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।</p> <p style="text-align:justify">ঘটনার এক দিন পার হলেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। নৌ পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ঘটনার শিকার পরিবারের লোকজন লাশ নিয়ে চলে গেছেন। তাই কার্গো জাহাজ এমভি আল বাখেরার মালিক পক্ষ ঘটনাস্থল হাইমচর থানায় মামলা করবেন।</p>