<p>কুমিল্লার লাকসামে জাতীয়তাবাদী যুবদলের প্রতিনিধিসভাকে ঘিরে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মারমুখী অবস্থান এবং চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় একটি গ্রুপ লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা এবং সাধারণ মানুষজন প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন।</p> <p>মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লাকসামে বিএনপির রাজনীতি দুটি গ্রুপে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কর্নেল (অব.) আনোয়ার উল আজিম। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম (চৈতী কালাম)। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই গ্রুপে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এতে দলীয় নেতাকর্মীরাও দুই গ্রুপে বিভক্ত।</p> <p>মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা যুবদলের একটি সাংগঠনিক টিম লাকসাম পৌরসভা এবং উপজেলা যুবদলের প্রতিনিধিসভায় অংশগ্রহণ করবেন। ফলে চৈতী কালাম গ্রুপের অনুসারীরা পৌর শহরের উত্তর বাজার দলীয় কার্যালয়ে প্রতিনিধিসভার আয়োজন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম গ্রুপের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে সভাস্থলে হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় দুই পক্ষ মারমুখী হয়ে উঠলে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় বিএনপির নেতা ও লাকসাম বণিক সমিতির আহ্বায়ক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মজির আহমেদের হস্তক্ষেপে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়। এর আগে আজিম গ্রুপের অনুসারীরা পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, পথচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে ফেলেন।</p> <p>সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ফলে বড় ধরনের কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।</p> <p>একটি সূত্র জানায়, আজিম গ্রুপের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সভাস্থলে যাওয়ার সময় পৌর শহরের চাউল বাজার এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ওইসব দৃশ্যের ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন। ওই সময় মিছিলে অংশগ্রহণ করা একজন কর্মী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে যান।</p> <p>এ ঘটনায় মো. আবুল কালাম (চৈতী কালাম) গ্রুপের অনুসারী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল রহমান মজুমদার জানান, বিএনপির কার্যালয়ে যুবদলের প্রতিনিধিসভা শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। এ সময় আজিম গ্রুপের অনুসারী কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল লোক যুবদলের প্রতিনিধিসভায় হামলার চেষ্টা চালায়। তা ছাড়া পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা এবং পথচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যা সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তবে বিএনপি নেতা ও লাকসাম বণিক সমিতির আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মজির আহমেদ আমাদের নেতাকর্মীদের সংঘাত পরিহারের আহ্বান জানালে তারা নিবৃত্ত হন। ফলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।</p> <p>এদিকে বিএনপির আজিম গ্রুপের অনুসারী উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশ্বতম সাহা বিশু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে সিনিয়রদের সঙ্গে পরামর্শ করে মতামত জানানোর কথা বলেন।</p> <p>লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মো. ফারুক হোসেন জানান, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কার সংবাদ পেয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। ফলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।</p>