<p>শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর পা ফেলার অভিজ্ঞতা ঢাকার শিশুদের জন্য যেন এক দুর্লভ স্বপ্ন। ইট-কাঠ-পাথরের ব্যস্ত শহরে শীতের প্রকৃতিকে উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া তো দূরের কথা, শীতের সকালে প্রকৃতির ছোঁয়া বুঝতে পারার সময়ও তাদের থাকে না। অথচ প্রকৃতির এই মৃদু শীত, কুয়াশায় মোড়ানো ভোর আর সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য শিশুদের মানসিক বিকাশে এক গভীর প্রভাব রাখতে পারে। </p> <p>আজ সকালে কালের কণ্ঠে এমনই একটি মনোমুগ্ধকর সংবাদে চোখ আটকে গেল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় শিশুদের নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল এক ব্যতিক্রমী শীত-উপভোগের আয়োজন। হিমেল হাওয়ার ভোরে শিশুরা কুয়াশাচ্ছন্ন পথ ধরে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে গেল। পথে তারা কৃষকের বীজতলার পরিচর্যা দেখল আর শিশির ভেজা ধান গাছ ছুঁয়ে অনুভব করল প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য। জমির আইলের কাঁদামাটি যেন তাদের কাছে তুচ্ছ মনে হলো। শীতকে শুধু অনুভব করাই নয় বরং দেখার, ছোঁয়ার এবং উপভোগ করার এ অভিজ্ঞতা যেন এক নতুন মাত্রা এনে দিল।</p> <p>সংবাদটি পড়ে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। এমন আয়োজন ঢাকার শিশুদের জন্য করলে কেমন হবে, ভেবে দেখছি। ইট-পাথরের ব্যস্ত শহরে শীতের প্রকৃতি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ শিশুদের খুব কমই হয়। এই ব্যস্ত নগরীর শিশুদের প্রকৃতির এমন ছোঁয়া যদি উপহার দেওয়া যায়, তবে তা হবে তাদের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার বীজ বুনে দিতে এমন আয়োজন যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সত্যিই ভাববার মতো বিষয়।</p> <p><strong>এক. আয়োজনের রূপরেখা</strong></p> <p>ভোর পাঁচটা থেকে আয়োজন শুরু হবে। একদল শিশু শহরের কোনো উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ থেকে পায়ে হেঁটে যাবে কাছাকাছি কোনো পার্ক বা প্রাকৃতিক খোলা জায়গায়। সকালবেলার হিমেল বাতাসে শিশুরা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করবে। সূর্যের প্রথম কিরণের আলোয় তাদের চোখে ফুটে উঠবে বিস্ময়। এরপর পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে দিনটি শুরু হবে।</p> <p><strong>দুই. প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা</strong></p> <p>এ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হবে প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের সরাসরি মেলবন্ধন। জমির কাঁদামাটি ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা কিংবা গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরের ছোঁয়া পাবে শিশুরা। তারা শিখবে, কীভাবে কৃষকেরা শীতের সকালে ফসল ফলানোর জন্য পরিশ্রম করেন। এসবের মাধ্যমে তাদের মনে কাজের প্রতি সম্মান ও কষ্টের মূল্যবোধ গড়ে উঠবে।</p> <p><strong>তিন. সৃজনশীল কর্মকাণ্ড</strong></p> <p>আয়োজনে থাকবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যেখানে শিশুরা শীতের প্রকৃতির চিত্র আঁকবে। থাকবে কবিতা আবৃত্তি, গান এবং শরীরচর্চার আয়োজন। শীতের মিষ্টি রোদে পিঠাভোজের ব্যবস্থা করা হবে, যা শিশুদের আরও বেশি আনন্দ দেবে। এ সময় তারা শিখবে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি সম্পর্কে।</p> <p><strong>চার. শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা</strong></p> <p>শিশুরা শুধু মজা করবে না, শিখবেও অনেক কিছু। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রমের মূল্যবোধ এবং শীতের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধির পাশাপাশি তারা শারীরিক কসরত ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।</p> <p><strong>পাঁচ. অংশগ্রহণ কারা করবেন</strong></p> <p>আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষক, প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা। তারা শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে গাইড করবেন এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করবেন। এ ধরনের আয়োজন শিশুদের চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তিকে জাগ্রত করবে এবং তাদের প্রথাগত শিক্ষার বাইরেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শেখাবে। অভিভাবকরাও এ আয়োজনে অংশ নিতে পারবেন, যা শিশুদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে। পরিবারের সঙ্গে প্রকৃতির আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে শিশুরা শিখবে ভালোবাসা ও সহযোগিতা।</p> <p><strong>শেষ কথা</strong></p> <p>ঢাকার শিশুদের জন্য ‘শীত দেখানো’ এমন একটি আয়োজন যা তাদের কেবল আনন্দই দেবে না বরং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এক অনন্য সুযোগ তৈরি করবে। এ ধরনের উদ্যোগ শিশুদের মনে সৃজনশীলতা, দায়িত্ববোধ ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি করবে। শীতকে একেবারে কাছে থেকে অনুভব করার এই অভিজ্ঞতা শিশুমনে গেঁথে থাকবে আজীবন।</p>