এখন আমরা কোথাও টাকা-পয়সা চাইতেও পারি না। কেউ যদি আবার চাঁদাবাজির অভিযোগ করে বসে! এসব কারণে আমাদের প্রেসিডেন্টও (বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম) কিছু করতে পারছেন না। তার পরও চেষ্টা করছি ৫ টাকার জায়গায় ৩ টাকা হলেও দিতে। -মাহবুবুর রহমান শাহীন, সাধারণ সম্পাদক, ওয়ান্ডারার্স
কুমিল্লায় মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে গিয়ে হোটেলের পেছনে আর খরচ করেনি ঢাকা ওয়ান্ডারার্স।
ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের তিনতলায় ফাঁকা হলঘরে রাত কাটিয়ে ম্যাচ খেলে চলে এসেছে। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলোয়াড়দের থাকার জায়গাও অবশ্য এর চেয়ে খুব একটা ভালো নয়। এই ক্যাম্পে থেকেই চারজন ফুটবলার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। খাওয়ার কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় খেলোয়াড়রা মুখ লুকান, ‘মাসে একবার গরুর মাংস দেখি কি দেখি না, বলতে পারব না। মাছ-মুরগি এই চলছে। নাশতায় কলা-রুটি।’
দেশের পেশাদার ফুটবলের খণ্ড চিত্র এটি। বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়রা হয়তো এর বিপরীত গোলার্ধে থাকেন।
তবে পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া, অনুশীলনব্যবস্থা নিয়ে দুর্দশার এমন ছবি অনেক। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আবাহনী ক্লাবের আর্থিক সংকটের কথা জানা গিয়েছিল। খেলা গড়াতে দেখা গেছে সেই সংকট মোহামেডানেও কম নয়।
দুই মাস বেতন বকেয়ার কথা কর্মকর্তারাই বলেছেন। ক্লাবের এক সিনিয়র খেলোয়াড় জানিয়েছেন, লিগের লম্বা বিরতিতে যাওয়ার আগে চুক্তির ৩০ শতাংশ টাকাই শুধু তাঁরা পেয়েছেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে লিগের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তির বেশির ভাগ টাকা খেলোয়াড়রা পেয়ে যায়।
এবার পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন, আমরাও বুঝতে পারছি। ক্লাব শুরুতে চুক্তি থেকে ২৫ শতাংশ টাকা কমানোর কথা বলেছে। এরপর মাসে মাসে যে টাকাটা দেওয়ার কথা, সেখান থেকেও আমরা বেশ কম পেয়েছি। তাতে সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ টাকা আমরা হাতে পেয়েছি।’
ক্লাবের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব অবশ্য ২৫ শতাংশ ছাড়ের বিষয়টি মানতে চাইলেন না, ‘ছাড়ের কোনো বিষয় নেই এখানে। ওদের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে। সেই টাকাটা যথাসময়ে হয়তো আমরা দিতে পারছি না। তবে সব টাকাই ওরা পাবে, এটুকু আমি বলতে পারি।’ তুলনামূলক ছোট ক্লাবগুলোতে দৈন্য প্রকট। ওয়ান্ডারার্সেরই এক খেলোয়াড় জানিয়েছিলেন যে প্রথম পর্ব শেষে স্রেফ দুই হাজার টাকা গাড়িভাড়া ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের হাতে। এবার মাঝখানে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচটা খেলতে এসে টাকা না পেলে মাঠে নামবেন না, এমন অবস্থানেও ছিলেন খেলোয়াড়রা। কয়েকজন তো দলে যোগ না দিয়ে নেপালে চলে গেছেন ‘খ্যাপ’ খেলতে। ৫ আগস্টের পর ওয়ান্ডারার্সের ম্যানেজমেন্টেও পরিবর্তন এসেছে। অথচ খেলোয়াড়রা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন আগের কমিটির অধীনে। সেটির ভুক্তভোগী হওয়ার কথা জানিয়েছেন খেলোয়াড়দের একজন, ‘তখন আমাদের উত্তরায় ফ্ল্যাটে নিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছিল। দিয়াবাড়িতে একটা অনুশীলন মাঠও ঠিক ছিল। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তনের পর এসব কোনো কিছুরই মুখ দেখিনি আমরা।’
ক্লাবটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীনও বর্তমান পরিস্থিতিকে দায় দিচ্ছেন, ‘ক্লাবের জন্য এখন আমরা কোথাও টাকা-পয়সা চাইতেও পারি না। কেউ যদি আবার চাঁদাবাজির অভিযোগ করে বসে! এসব কারণে আমাদের প্রেসিডেন্টও (বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম) কিছু করতে পারছেন না। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি ৫ টাকার জায়গায় ৩ টাকা হলেও দিতে।’ চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়রা পেটে-ভাতে খেলছেন, এটা জানা আগে থেকেই। মধ্যবিরতিতে দলবদলের একটা ম্যাচ খেলার আগে তাঁরা আর ক্যাম্প করার ঝামেলায়ও যাননি। দলটির কর্মকর্তা মামুনুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা ওদের গাড়িভাড়া দিয়ে দিয়েছি। ওরা এসে শুধু খেলে গেছে।’ ফকিরেরপুল ইয়াং মেন্সের খেলোয়াড়দের একজন অবশ্য চুক্তির অর্ধেক টাকা হাতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফর্টিস এফসিও এ পর্যন্ত পারিশ্রমিকের অর্ধেক পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। তবে বেশির ভাগ দলের খেলোয়াড়রা এপ্রিল পর্যন্ত লিগের বিরতির মাঝখানে পারিশ্রমিকের আরেকটা কিস্তি হাতে পাওয়ার আশায় আছেন। সামনে ঈদ। রহমতগঞ্জের নাবিব নেওয়াজ বলেছেন, ‘এই মৌসুমে আমাদের কষ্ট হবে, সেটা জেনেই খেলছি। রহমতগঞ্জে আমি অল্প টাকায় খেলছি। মাসের টাকাটা অবশ্য ওরা নিয়মিতই দিয়েছে।’