ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গত রাতে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছরের একটি শিশুও রয়েছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন রবিবার টেলিগ্রামে এ তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনা শুরুর আগে মস্কোর ওপর আরো চাপ প্রয়োগ করতে, যেন তারা ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, শহরের বিভিন্ন জেলায় আগুন ও ধ্বংসযজ্ঞের পর জরুরি পরিষেবা সংস্থার কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এর আগে বিমানবাহিনী জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে লক্ষ্যবস্তু করে রাশিয়া গত রাতে ১৪৭টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এগুলোর মধ্যে ৯৭টি ভূপাতিত করা হয়েছে এবং ২৫টি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি।
জেলেনস্কি এক্সে লেখেন, ‘এই হামলা ও যুদ্ধ বন্ধ করতে নতুন সিদ্ধান্ত ও মস্কোর ওপর নতুন চাপ প্রয়োজন।
আমাদের ইউক্রেন ও সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে—বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বাস্তব সহায়তার মাধ্যমে। আমি সেইসব অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এটি বোঝেন এবং ইউক্রেনকে সমর্থন চালিয়ে যাচ্ছেন।’
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী গত রাতে ৫৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ‘ধ্বংস ও আটক’ করেছে, যা মূলত রোস্তভ ও আস্ট্রাখান অঞ্চলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
আরো পড়ুন
সৌদি আরবে শান্তি আলোচনা নিয়ে অগ্রগতির আশা মস্কোর
যুদ্ধবিরতির আলোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার রাতে বলেছেন, যুদ্ধের আরো বিস্তার ঠেকানোর প্রচেষ্টা ‘কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তিসঙ্গত আলোচনা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাই মূল চাবিকাঠি।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্প পৃথকভাবে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করেন, যা ২০২২ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ। তবে ৩০ দিনের সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলেও পুতিন রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা জেলেনস্কিও মেনে নিয়েছেন। তবে এই সমঝোতা হওয়ার পর থেকেই দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে জ্বালানি স্থাপনায় হামলার অভিযোগ তুলেছে।
এদিকে সোমবার সৌদি আরবে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল শান্তি আলোচনার জন্য বৈঠক করবে।
রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতা সেনেটর গ্রিগরি কারাসিন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন জভেজদা টিভিকে বলেছেন, ‘আমরা অন্তত কিছু অগ্রগতি অর্জনের প্রত্যাশা করছি।’
এ ছাড়া রুশ প্রতিনিধিদলে থাকা এফএসবি গোয়েন্দা সংস্থার আলোচক সের্গেই বেসেদা জানান, তারা ‘লড়াইপূর্ণ ও গঠনমূলক’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন।
কারাসিন বলেন, ‘আমরা অন্তত একটি বিষয় সমাধানের লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে যাচ্ছি।’
অন্যদিকে এক শীর্ষ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা এএফপিকে শনিবার জানিয়েছেন, কিয়েভ অন্তত আংশিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হতে চায়, যা জ্বালানি, অবকাঠামো ও সামুদ্রিক হামলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা