সুন্দরবনে বনজসম্পদ আহরণে ঘুষ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
শেয়ার
সুন্দরবনে বনজসম্পদ আহরণে ঘুষ
ছবি: কালের কণ্ঠ

সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা আহরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ বাওয়ালিদের। বনজীবীরা বলছেন, গোলপাতা আহরণের জন্য নৌকাপ্রতি সরকারকে যে টাকা রাজস্ব দিতে হয়, বন কর্মকর্তা-রক্ষীদের ঘুষ দিতে হচ্ছে এর কয়েকগুণ বেশি। সুন্দরবন থেকে বনজদ্রব্য আহরণ সংকুচিত, খরচ বৃদ্ধি এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় বনজদ্রব্য সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা কাটার মৌসুম শুরু হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। শেষ হবে ৩১ মার্চ। প্রথম দফায় ২৮ দিনের অনুমতি পেয়ে ৮৯টি নৌকায় গোলপাতা কেটে লোকালয়ে ফিরছেন বাওয়ালিরা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের একটি প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ গোলপাতা।

গোলপাতা আহরণ মৌসুমে একেকটি নৌকায় সর্বোচ্চ ১৮৬ কুইন্টাল অর্থাৎ প্রায় ৫০০ মণ গোলপাতা বহনের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। আহরণ করা প্রতি কুইন্টাল গোলপাতার জন্য বন বিভাগকে ৬০ টাকা করে রাজস্ব দিতে হয়।

উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নামে গোল হলেও গোলপাতা আসলে গোলাকার নয়, লম্বাকৃতির। এর পাতা সবুজ বর্ণের, নারিকেল পাতার মতো।

গোলপাতার ছাউনির ঘরে গরমের সময় ঠান্ডা এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভূত হয়। এ পাতা দিয়ে ভালোভাবে ঘরের ছাউনি দিলে তিন-চার বছর অনায়াসে পার হয়ে যায়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঘর নির্মাণের উপকরণ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে গোলপাতা ব্যবহার করে আসছে। তবে তুলনামূলকভাবে এখন গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম হওয়ায় দিন দিন এর ব্যবহার কমছে। আর চাহিদা কমে যাওয়ায়, আগের তুলনায় গোলপাতা সংগ্রহকারী বনজীবীর সংখ্যাও কমেছে।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলছে, সুন্দরবনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সেটি সুন্দরবনের ক্ষতি করে নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বন কর্মকর্তা-রক্ষীদের ঘুষ আদায়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণ। গোলপাতা আহরণ মৌসুমে সুন্দরবনের গোলঝাড় থেকে পাতা কাটার সময় মাঝপাতার (মাঝের কচি পাতা) পাশে ঝাড় রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ পাতা (ঠ্যাকপাতা) রেখে আহরণের নিয়ম রয়েছে) কিন্তু সেই ঠ্যাকপাতা না রেখে ঝাড়ের সব পাতা কাটা হয়েছে। পাশাপাশি বাওয়ালিরা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত গোলপাতা নৌকায় করে আনছেন।

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাংবাদিক শুভ্র শচীন বলেন, ‘উপকূলের প্রান্তিক মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস সুন্দরবন। এই বনকে ঘিরে কোনও না কোনওভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। নিয়ম মেনে সম্পদ আহরণ করা না হলে বনের ইকোসিস্টেমের ক্ষতি হবে।’

সাংবাদিক শুভ্র শচীন বলেন, ‘গোলপাতা আহরণ মৌসুমে নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে সুন্দরবনে। ৫০০ মণ ধারণক্ষমতার একেকটি নৌকায় বর্ধিত অংশ জোড়া দিয়ে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার মণ গোলপাতা বোঝাই করে আনা হচ্ছে। গোলপাতার আড়ালে বন থেকে আনা হচ্ছে বিভিন্ন গাছের খণ্ড। এভাবে ঝাড় ধ্বংস করে পাতা কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে গোলবন। এতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়ছে সুন্দরবন।’

তবে সুন্দরবনের বাওয়ালি-মহাজনরা বলছেন, সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণে পদে পদে ঘুষ লাগায় ক্ষতি পোষাতে নৌকায় তারা বেশি করে গোলপাতা ও কাঠ বোঝাই করতে বাধ্য হন। বন কর্মকর্তা-রক্ষীদের টাকা না দিলে বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এসবের পরও জীবিকার তাগিদে পুরানো পেশা টিকিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ।

উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, অবস্থানগত কারণে খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে সর্বদক্ষিণের সুন্দরবনঘেরা সমুদ্র উপকূলবর্তী উপজেলা কয়রার বেশিরভাগ মানুষই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। এ জেলার সুন্দরবন প্রভাবিত অন্য উপজেলাটি হলো দাকোপ। এ উপজেলা দুটির সুন্দরবন-লাগোয়া গ্রামগুলোর মানুষরা মাছ-কাঁকড়া ধরা, গোলপাতা কাটা ও মধু আহরণের কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যে গোলপাতা ভর্তি নৌকা সুন্দরবনের লোকালয়ে আসতে শুরু করেছে। মৌসুমের প্রথম দফায় গোলপাতা কেটে লোকালয়ে ফিরেছেন তারা।

সরেজমিনে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে বাঁধা রয়েছে গোলপাতাবোঝাই বড় বড় নৌকা। বাওয়ালিরা নদীর বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে স্তুপ আকারে কেটে আনা গোলপাতা সাজিয়ে রাখছেন। এসব নৌকায় ৫০০ মণ গোলপাতা বোঝাইয়ের মাত্রা বেঁধে দেওয়া হলেও একেকটি নৌকায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মণ পাতা বোঝাই করা। নৌকার চারপাশে গাছের বড় বড় গুঁড়ি ঝুলিয়ে রাখা। গোলপাতার নিচে রয়েছে সুন্দরী, পশুরসহ মূল্যবান গাছের খণ্ড।

নৌকা থেকে গোলপাতা নামানোর ফাঁকে কয়েকজন বাওয়ালি বলেন, এখন আর আগের মতো গোলপাতায় ভালো ব্যবসা নেই। বনদস্যুদের চাঁদা আর সরকারি রাজস্বের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিতে হয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের। 

নিয়মবর্হিভূতভাবে গোলপাতা আহরণের সুযোগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সুন্দরবনের বেশ কয়েকজন স্টেশন কর্মকর্তা, কূপ কর্মকর্তা, সহযোগী কূপ কর্মকর্তা ও বনরক্ষী। চলতি গোলপাতা কাটার মৌসুমে বাওয়ালিদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধার জন্য এসব কর্মকর্তা নৌকাপ্রতি আদায় করেছেন ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে লোকসানে পড়ছেন তারা। 

পাশাপাশি রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। গোলপাতার ঝাড়ের মধ্যে বাঘ লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা থাকে। এরপরও জীবিকার তাগিদে বনে এ পাতা কাটতে যেতে হয় জানিয়ে তারা বলেন, লোকালয়ে আনার পর এক কাউন (১৬৮০টিতে এক কাউন) ভালো গোলপাতা ৩২০০ টাকা বিক্রি হয়। আবদুস সালাম নামে কয়রা এলাকার একজন বাওয়ালি বলেন, ৫০০ মণ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গোলপাতার নৌকায় সাকল্যে সরকারি রাজস্ব আসে ১২ হাজার টাকার মতো।

বন অফিস থেকে অনুমতি নেওয়ার সময় বন কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত টাকা বখশিশ, এরপর কুপে তল্লাশি, ঘের দেওয়া, ঘাটে তল্লাশি, সিটি কাটানোসহ (পারমিট হস্তান্তর) বিভিন্ন অজুহাতে সবমিলিয়ে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। তারপরে রয়েছে বনদস্যুদের চাঁদা। সুন্দরবনজুড়ে বেড়েছে বনদস্যুদের উৎপাত। সালাম বলেন, এসব টাকা দিতে গিয়ে ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন তারা। এ কারণে নৌকায় তারা বেশি করে গোলপাতা ও কাঠ বোঝাই করতে বাধ্য হয়েছেন। সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার  মহেশ্বরীপুর এলাকার  এলাকার বাওয়ালি-মহাজন মনছুর আলী  বলেন, এমনিতেই গোলপাতার চাহিদা কমে গেছে। তারপর পদে পদে এত টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। অনেক বনজীবী লোকসানে পড়ে গোলপাতার ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমিও আগামী মৌসুমে আর গোলপাতা কাটতে সুন্দরবনে নৌকা ঢুকাব না।

কয়েকজন কূপ কর্মকর্তা, ও বনরক্ষী গোলপাতা আহরণ মৌসুমে বাওয়ালি-মহাজনদের সামান্য সুযোগ করে দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এ টাকা বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।

খুলনা রেঞ্জের গোলপাতা কুপ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন এ বিষয়ে বলেন,‘ বাওয়ালিদের কাছে আমার কোনো দাবিদাওয়া নেই। তারা কিছু দিলে ভালো কথা, না দিলেও কোনো দাবি নেই।’

গোলপাতার আড়ালে গাছ কাটার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গোলপাতা নৌকা পাহারা দেওয়া তো আমার একার পক্ষে সম্ভব হয় না।’

তবে নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে বাওয়ালীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের বিষয় জানা নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ। 

বন সংরক্ষক বলেন, ‘সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট রয়েছেন বন কর্মকর্তা ও রক্ষীরা। এ ধরনের কাজে বন বিভাগের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে কোনো গাছ কাটতে পারবেন না বাওয়ালিরা। এমনকি নৌকায় ঝুল হিসেবেও কাঠ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

বনদস্যুদের তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী এমন কোনো বনজীবী এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বনদস্যুদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কথা শুনেছি।’

এ বিষয়ে কোস্ট গার্ডের পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সুন্দরবনসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে ২২টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। হান্নান বাহিনীর প্রধান হান্নানকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তায় তালিকাভুক্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নামাজ শেষে ফিরে দেখলেন বিছানায় পড়ে আছে স্ত্রীর গলা কাটা লাশ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
নামাজ শেষে ফিরে দেখলেন বিছানায় পড়ে আছে স্ত্রীর গলা কাটা লাশ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে নিজ বাড়িতে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের বারৈজঙ্গল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুক্তা বেগম ওই এলাকার মান্নান গাজীর স্ত্রী। ভেদরগঞ্জ থানার ওসি পারভেজ আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় নিহতের রক্তাক্ত দেহ খাটের ওপর পড়ে আছে। আর তার মাথা খাটের নিচে ঝুলছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার গলার রগ কেটে গেছে, যা মৃত্যুর কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহতের স্বামী মান্নান গাজী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন।

কয়েক বছর আগে তিনি দেশে এসেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গিয়েছিলেন তিনি। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন স্ত্রীর গলা কাটা নিথর দেহ পড়ে আছে খাটের ওপর। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ডাকাত ঢুকেছে বলে ঘোষণা দেন।
পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মান্নান গাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি নামাজে গেছিলাম। নামাজ পইড়া আইয়া দেহি মুক্তা নাই। এমন কইরা মাইনষে মাইনষেরে মারে না। আমার এই ক্ষতি কেডা করল? কিয়ের লাইগা করল।

আমারে একা কইরা দিল। আমারে কে নামাজের লাইগা ডাকবো? আমারে কে সেহরি খাওনের লাইগা উডাইবো? কাইলকাও আমার লাইগা রুডি বানাইয়া আমারে খাওয়াইলো। যারা যারা মুক্তারে মারছে আমি ওগো বিচার চাই, ওগো ফাঁসি চাই।’

এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নিহতের গলার সামনে ও পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গলার রগ কেটে যাওয়ায় তিনি মারা গেছেন। এটি ডাকাতির ঘটনা কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ ঘটনার জন্য ফরিদপুর থেকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসেছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। 
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বরিশালে 'ফরচুন সুজ'-এর গুদামে আগুন

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, ব‌রিশাল
নিজস্ব প্রতি‌বেদক, ব‌রিশাল
শেয়ার
বরিশালে 'ফরচুন সুজ'-এর গুদামে আগুন
সংগৃহীত ছবি

বরিশাল নগরের কাউনিয়া বিসিক শিল্পনগরীর রপ্তানিমুখী জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফরচুন সুজ’-এর একটি গুদামে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

বরিশালের ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নেভাতে চেষ্টা করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফরচুনের কর্মকর্তা, কারখানার শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কাউনিয়া এলাকার বিসিক শিল্পনগরীর ফরচুন সুজ লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিটের সদস্যরা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, হঠাৎ করেই তারা গোডাউনে আগুন দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন, আর পুরো নিভিয়ে ফেলতে এক ঘণ্টার অধিক সময় লাগে।

বাবুল নামের এক ব্যক্তি জানান, গোডাউনে প্যাকেজিং ম্যাটারিয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল রয়েছে। কীভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি জানেন না, তবে শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুন লাগতে পারে অথবা কেউ লাগিয়ে দিতে পারে বলেও শঙ্কা করছেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশালের সহকারী পরিচালক হেলাল উদ্দিন খান জানান, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের কাউনিয়া এলাকার একটি ওয়েস্ট ম্যাটারিয়ালসের গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। পরে ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। 

তবে গোডাউনটি চারদিক থেকে আটকানো ও মালামালে পরিপূর্ণ থাকায় আগুন নেভাতে শুরুতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।

পরে ধোঁয়ার কারণেও কিছুটা বেগ পেতে হয়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত ছাড়া তাৎক্ষণিক বলা সম্ভব নয়।’

মন্তব্য
ফরিদপুর

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা, সহযোগীসহ ভিপি কাওসার গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা, সহযোগীসহ ভিপি কাওসার গ্রেপ্তার
সংগৃহীত ছবি

ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের (রুকসু) সাবেক ভিপি কাওসার আকন্দকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার সহযোগী জেলা যুবলীগের সদস্য তসলিম বিশ্বাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রলীগ নেতা কাওসার আকন্দ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলার ঘটনায় করা মামলার অন্যতম আসামি। ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে পরিচিত সে।

শহরের পূর্বখাবাসপুর এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী দুলাল আকন্দের ছেলে কাওসার।

আজ বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক ফাহিম ফয়সাল।

আরো পড়ুন

চব্বিশের অভ্যুত্থান একাত্তরের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে: আসিফ মাহমুদ

চব্বিশের অভ্যুত্থান একাত্তরের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে: আসিফ মাহমুদ

 

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের অনাথের মোড় এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকার তল্লাশী করে কাউসার আাকন্দ ও তার সহযোগী তসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুর মোড় এলাকার বড়ইতলায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা নিরস্ত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়।

এতে কমপক্ষে তিনজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পঙ্গু হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

পুলিশ আরো জানায়, এ মামলায় কাওসার আকন্দ অন্যতম আসামি। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল।

এছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহরের বিভিন্নস্থানে আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে কাউসার আকন্দ তার দলবল নিয়ে সশস্ত্র মহড়া চালায় ও শিক্ষার্থীদের হুমকি ধমকি দেয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে।

আরো পড়ুন

ঈদে ফিরতি ট্রেনযাত্রার ৫ এপ্রিলের টিকিট মিলছে আজ

ঈদে ফিরতি ট্রেনযাত্রার ৫ এপ্রিলের টিকিট মিলছে আজ

 

কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক ফাহিম ফয়সাল বলেন, 'গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের অনাথের মোড় থেকে একটি প্রাইভেটকার তল্লাশী করে কাউসার আাকন্দ ও তার সহযোগী তসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হামলার মামলা রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।' 

মন্তব্য

বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার, আটক ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া
শেয়ার
বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার, আটক ৩

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নে এক বিএনপি নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি রিভলবার, গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় ওই নেতা, তার ভাই ও ভাতিজাসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে কুষ্টিয়া সেনাবাহিনীর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর গ্রামে শহিদুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। 

অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫টি পিস্তলের গুলি এবং বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

এ সময় গৃহকর্তা শহিদুল ইসলামকে আটক করা হয়। সেনাবাহিনী একই রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে শহিদুল ইসলামের ভাই জিল্লুর রহমান এবং তার ছেলে জুবায়ের ইসলাম জ্যাকীকে আটক করে। আটক ব্যক্তিদের খোকসা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

আটক শহিদুল ইসলাম ওসমানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং খোকসা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার।

তার ভাই জিল্লুর রহমানও আটক হয়েছেন। তারা উভয়েই ওসমানপুর গ্রামের মৃত শাহাজাহান আলী বিশ্বাসের ছেলে। অপর আটক জুবায়ের ইসলাম জ্যাকী, খোকসা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার বাবা জিল্লুর রহমানও এই ঘটনায় আটক হয়েছেন।
 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনী কাজ করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় খোকসার ওসমানপুরে সফল অভিযান চালানো হয়।

খোকসা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনীর পৃথক অভিযানে আটক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত দুটি মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ